সবেমাত্র গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে একটা চাকরীতে জয়েন করেছি।কয়েকদিন থেকে বাবা হওয়ার খুব ইচ্ছা হচ্ছে।ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখলেই বাবা হওয়ার ইচ্ছাটা আরো দ্বিগুন হয়।বাবা হওয়ার ইচ্ছাটা পূরণ করতে হলেও অবশ্যই একটা বিয়ে করা দরকার।নিজের বিয়ের কথাটা বাসায় বলতে গেলেও লজ্জা লাগে।মাকে একবার আকার ইংগিতে বুঝাতে গেছিলাম।কিন্তু মা কি আর ছেলের দুঃখ বুঝল তিনি সরাসরি বলে দিলেন আমাকে বলে লাভ নাই তোর বাবাকে বল।বাবার কথা শুনে আমার বাবা হওয়ার ইচ্ছাটাকে মাটি চাপা দিলাম। একদিন অফিসে বসে কাজ করছি মা কল দিয়ে হাসপাতালে আসতে বললেন।আমি মনে হাজার চিন্তা নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি আর ভাবচ্ছি কার আবার কি হল।
-বাবা তুই এসেছিস (মা)
-হুম,কার কি হয়েছে আবার।
-তোর বোনের বাচ্চা হবে,তাই রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।
হঠাৎ সিস্টার এসে বলে গেল আপনার নাতি হয়েছে।মার চোখ খুশিতে ভরে গেল।আধা ঘন্টা পর ডাক্তার মা আর বাচ্চাকে দেখতে অনুমতি দিল।সবাই এক এক করে নতুন বাচ্চা দেখছে আর উপহার দিচ্ছে।অবশেষে আমার পালা আসল এখন আমি ভাবছি কি উপহার দিব।হঠাৎ মাথার মধ্যে বাবা হওয়ার একটা সহজ বুদ্ধি আসল।
-মামা তোমাকে দেওয়ার মত এখন কিছুই তো নেই তবে তোমার নানুভাই চাইলে একটা সুন্দর মামী উপহার দিতে পারি
-দেখ দেখ তোমার ছেলে নির্লজ্জের মত কিভাবে নিজের বিয়ের কথা বলছে।(বাবা)
-কেন বাবা আমার কি বিয়ে করার বয়স হইনি
-তুই এখনো ছোট আছিস,তোর এমন কি বয়স হইছে (আপু)
-তুই তো এখন মা হয়েছিস খুশিতেই আছ, আমার কি বাবা হওয়ার শখ নাই।
আমার কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠল আমি রাগে হাসপাতাল থেকে চলে আসলাম।সালা জীবনে বড় আপু থাকাটা যেমন সুখের তেমনি দুঃখের কথায় কথায় খোচা দিবেই।আমার এই সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন কেটে যাচ্ছে।এই আপুটাই একদিন আমার সুখের বার্তা নিয়ে আসল
-বাবা তুমি সায়েমের বিয়েটা দিয়েই দাও ভাইটা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে (আপু)
-হুম,আমি আর তোর মা একটা মেয়ে পছন্দ করেছি তোর ভাইয়ের পছন্দ কি না ছবি আছে দেখে নিতে বলিস
-ঠিক আছে বাবা আমি ভাইয়ের সাথে কথা বলব। আমার তো নাগিন ডেন্স দিতে মন চাচ্ছে।
-কিরে ভাই আমার আমার উপর রাগ এবার তো শেষ।
-হুম,তোর উপর রাগ আর নেই,আমার লক্ষী আপু
-এবার ছবিটা দেখ পছন্দ হলে বলিস।
-আমার পছন্দের কিছু নাই, তোমাদের পছন্দেই খুশি,বিয়ের বিয়ের ব্যবস্থা কর।
-ভাই বাবা হওয়া এত সহজ না, সন্তানদের মানুষ করা অনেক কঠিন।
-ঠিক আছে আমি বাবাকে বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলছি
আজ একটা সুন্দরী ললনার সাথে বিয়ে হল। আপু তো জোর করে ঢুকে দিল আর বাসর ঘরে আর বলল যা এবার বাবা হওয়ার শখ পুরন কর।বাসর ঘরে ঢুকেই আমার ইচ্ছার কথা বউকে বললাম।
-শোন আমি কিন্তু বাবা হওয়ার জন্য বিয়ে করেছি নাহলে এত তারাতারি বিয়ে করতাম না
-ওমা বলেন কি, আপনি বাবা আমাকে কি ডিভোর্স দিবেন নাকি
-আরে না,না তা কেন করব।আর শোন আমাদের টুইন বাচ্চা হবে কিন্তু
-আসলে আমি এখন prepare না মানে এখন বাচ্চা নিতে চাচ্ছি না
-তাহলে কবে?
-দুই বছর পর,আর তুমি যে বাবা হতে চাচ্ছ তুমি জান বাবা হওয়া এত সহজ না।বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হয় আরো অনেক সমস্যা আছে
-ঠিক আছে,তোমার কথাই হবে
আজ দীর্ঘ তিন বছর পর ইমার্জেন্সী কেবিনের সামনে অস্থির ভাবে পায়চারী করছি।আজ আমার বাবা হওয়া স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আসলে বাবা হওয়া অনেক কঠিন তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। হ্যা সিস্টার এসে আমাকে আনন্দের সংবাদটা দিয়ে গেল আমার ফুটে ফুটে দুইটি মেয়ে হয়েছে। আধা ঘন্টা পর বাচ্চাদের সামনে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছি আর ভাবছি আমার বাচ্চার ভবিষ্যৎ এখন আমার হাতে।আসলেই বাবা হওয়া অনেক কঠিন।