প্রাকৃতিক চাপে আমার নাভিশ্বাস উঠে! ‘কোথাও কেউ নাই’ টাইপের অবস্থা! অনেক খোঁজাখুঁজি শেষে একটা টয়লেটের সন্ধান মিলল! মনে হলো বহু বছর পর শিকারি তার শিকার খুঁজে পেয়েছে! কার্য সম্পাদন করতে করতেই খেয়াল করলাম দরজায় খিল বলতে কিছু নেই! নিজেকেই একহাতে দরজা ঠেলে ধরে বুক চিতিয়ে যুদ্ধ করতে হয়!
যাইহোক, আমার মনে হয় মলত্যাগ করা পৃথিবীতে শান্তির কাজের মধ্যে অন্যতম একটি! এমন অসহ্য দরজার কপাট বিহীন টয়লেটে বসে বসে মাথায় যতো কুবুদ্ধির প্রলাপ! মনে মনে ভাবলাম আজ টাকা না দিয়েই লাপাত্তা হবো! টয়লেটের দেয়ালে চোখ পড়তেই আমি ভড়কে গেলাম! কি অদ্ভুত অদ্ভুত চিত্রকর্ম! কি ভয়নক সব অমর বাণী! কতো কতো নায়িকার নাম্বার!
-“তুমি যতো বড় নেতাই হও আমার কথায় তোমাকে পেন্ট খুলতেই হবে!”
“শালা ** কাটার যায়গা পেলিনা!?”
” ওই শালা লেংটা হ”!
এমন টাইপ লেখা পড়তে পড়তে আমি ভুলেই গেছি আমি কোথায় আছি। জীবনে স্কুলের ব্লাকবোর্ডের দিকেও কোন স্যারের লেখায় এতো মনোযোগ দেইনি! মনোযোগ যখন চিত্রকর্মে ঠিক তখনই কে যেন এক ধাক্কায় দরজা খুলে ফেলল! আমি বিচলিত হয়ে তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে পড়লাম! এগুলা পাবলিক প্লেস, সেকেন্ডে সেকেন্ডেই হাত পা খিচে কেউনা কেউ এসে অপেক্ষা করে! বের হয়েই দেখি দরজায় বড় করে লিখা- “বাথরুম সেরে টাকা না দিলে হাশরের ময়দানে দাবি থাকবি!”
এইবার টাকা না দিয়ে যাবো কই! আহারে, এমন ক্রিয়েটিভ জাতির কাছে আর কি আশা করা যায়! জাপানীরা যেখানে 5G গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে আমরা ব্যস্ত -“এই মেসেজটা তোমার ২০ জন বন্ধুকে সেন্ড করো। সেন্ড না করলে তোমার ধনসম্পদ ২ ইঞ্চি কমে যাবে! এমন জাতি বাথরুমে যে এসব লিখবেনা তার নিশ্চয়তা কি?
যাইহোক, বাথরুমের ওয়ালে একটা নাম্বার দেওয়া ছিলো, লেখা ছিলো- “আমি মিস আলেয়া, প্রেম করতে চাইলে 01******847। আমি সেই নাম্বারে ডায়াল করলাম! প্রেম করার জন্য নয় কেবল ঘটনা জানার কৌতূহলে! ফোন কে রিসিভ করছে আমি জানিনা,তবে জানি লোকটা অনেক ভদ্র! আমি বললাম আপনি আলেয়ার কিছু হন? তিনি বললেন,
-আমি কোতায়ালী থানার কর্তব্যরত পুলিশ!
-ভাই,রহিম আছে?
-না!
এবার রং নাম্বার বলেই লাইন কেটে দিলাম! আমি ভাবলাম, এই পুলিশ হয়ত কাউকে কোনদিন অকারণে কিংবা কারণে বাঁশ দিছে! তাই সে এই আকাম করে বেচারার ঘুম হারাম করেছে! অনেক আগের ঘটনা! আমার নিজের ফোন নাম্বার একটা ২ টাকার নোটের ভেতর লেখা; এমনই একটা নোট আমার হাতেই এসে পড়েছে! সেখানে লিখা! তুমি আমার জান! I love u Ruzina! আমি জানিনা এই রুজিনা কে! কে লিখলো এই নাম্বার!
অনেকদিন পর মনে পড়ে গেল! প্রায় ২০০৯ সালের দিকে আমি যখন ক্লাস নাইনে -তখন রং নাম্বারে এক রুজিনার সাথে খুচরো প্রেম তৈরী হয়! তখন দুইদিন পরপরই ফ্রী মিনিট পাওয়া যেত গনিমতের মালের মতোই! আমি সেই ফ্রি মিনিট ফ্রি কাজেই লাগাতাম ফ্রি তে পাওয়া আলকাতরার মতোই! একদিন তৎকালীন একটেল কম্পানী আমার ফ্রি মিনিট বন্ধ করে দিলে রুজিনার প্রেমের উপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ! ফোন দেওয়া বন্ধ হয়ে গেলে আমাকে প্রতারক, বৈঈমান ট্যাগ দিয়ে বেঁচে থাকলে দেখে নিবে বলে হুমকি দেয়! সেই হুমকির ফলাফল স্বরূপ আমার নাম্বার ২ টাকা নোটে লিখে প্রচার করা! আহা! আমরা কত্তো প্রতিবাদী!
কিছুদিন আগে কোটা বিরোধী আন্দোলনের একটা প্রতিবাদী স্লোগান নিয়ে অনেকে বিচি কচলাইছে! রাস্তায় লিখা- “টিয়ারশেল চুদি না!” মিডিয়া যখন দালালির সীমা ছাড়িয়ে গেছে তখন লিখছে – “মিডিয়া তুই চুতিয়া”! অনেক সুশীল লিখছে…ছিঃ ছিঃ এটা কেমন প্রতিবাদ! আমার জানতে ইচ্ছে করে-প্রতিবাদ মানে কি!. এরা বোধহয় ভাবে, রাস্তায় লিখা উচিৎ ছিলোনা। লিখাটা বাথরুমে লিখা দরকার ছিলো! অথবা ২ টাকার ৩০০ নোটের গায়ে! তাও আবার এসব অশ্লীল ভাষা না। এদের মতে প্রতিবাদের ভাষা হতে হবে কোমল জিরা পানির মতো!
যেমন : বাথরুমের দেয়ালে লিখা যেতো-
১. পুলিশ ভাই তুই আমারে কেনে কান্দাইলি আমার কোটা নাইরে ঘরে!
২. ওগো ও জানু সোনা, টিয়ারশেল মেরো না
টিয়ারশেল মারলে, ব্যথা পাই জানোনা!? অথবা ২ টাকার নোটের গায়ে লিখা যেতো,
-“এই দুইটাকার নোটের কসম, আমি কোটা সংস্কার চাই!”
যাইহোক, কোটা নিয়ে এখন লিখা যাবেনা! জাকারবার্গের নীল সাদার ফেসবুকে চাপা পড়ে যাক এসব! টয়লেটে যে কেবল খারাপ কিছুই লিখা থাকে তা কিন্তু নয়। আজ এমনো একটা পাবলিক টয়লেট দেখলাম যেখানে কেবল লেখা- “টয়লেট সেরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ঢালুন! দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করিবেন না! এই লেখাটা যে লিখছে সে নিশ্চয় ভদ্র ফ্যামিলির মানুষ। এই ভালো মানুষগুলো বেঁচে থাকুক! জানিনা একমাস পরে এই টয়লেটে এসেই আবার
“দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করবেন না” শব্দটি থেকে শেষের “না” শব্দটি হারিয়ে ফেলি কিনা!
”এই দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করবেন না” থেকে “দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করবেন!” লেখা দেখলে খুব বেশি অবাক হবোনা!
স্ট্যাটাস শেষ! এখন এলিট শ্রেণীর কমেন্ট আসবে! ” ধুর মিয়া লিখার আর জিনিশ পান না? টয়লেট নিয়া লিখেন!” এরা কারা জানেন? এরা তারাই, যারা বাথরুমের দেয়ালে লিখে রাখে “I love u জরিনা” তোমাকে ছাড়া বাচবোনা!