আজ আমার বড় বোনকে এবর্শন করানো হয়েছে। আমি নিজে ওর সাথে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ওর চোখের পানি দেখে আমি কেমন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। জানিনা এই কাজটা ঠিক হয়েছে নাকি ভুল। তবে ওর গর্ভের সন্তানকে পৃথিবীতে আনা আমাদের কারোরি সম্ভব না। জানি এটা ওর সাথে খুব অন্যয় করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। কারন এই সন্তানের বাবা নেই। যদিও আমরা সবাই জানি এই সন্তানের বাবা কে তবুও আমাদের সবার হাত পা বাধা। কিছুই করতে পারিনি ওর জন্য।
আমার বাবা সেই জানোয়ারের কাছে গিয়েছিল যে কিনা আমার বোন কে গর্ভবতি করে নিজে ভেগে গিয়েছে। আমার বাবা তার পায়ে পর্যন্ত ধরেছে কিন্তু সে আমার বোন কে কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি না। তার একটাই কথা – পাগল মেয়ের সাথে রাত কাটানো যায় কিন্তু তাকে বিয়ে করা যায় না।
আমার বাবা মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে আসে। বাড়িতে ফিরেই রানুকে ( আমার বড় বোন) চিকন বাশেঁর কঞ্চি দিয়ে এমন ভাবে পিটায় যে রানুর পুরো শরীর দিয়ে রক্ত পরতে থাকে। সেদিন রাতেই রানুর শরীরে ভীষণ জ্বর চলে আসে। সেই জ্বর নিয়েই রানুকে আজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখনো রানুর শরীরে খুব জ্বর।
রানু আর আমি একই সাথে থাকি ছোট বেলা থেকেই। যখন ওর ৩ বছর বয়স তখন সবাই বুঝতে পারে ও অন্য আট দশটা বাচ্চাদের মত স্বাভাবিক বাচ্চা না। ওর কিছু মানসিক সমস্যা আছে। ডাক্তার বলেছিল ভাল মত চিকিৎসা করালে রানু ঠিক হয়ে যাবে। বাবা বেশ কিছু বছর ওর চিকিৎসা চালিয়েছেন। কিন্তু তার পর আর পারেনি। টাকার অভাবে বাবাকে রানুর চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে হয়৷ রানুর এখন ২১ বছর বয়স।
আমার থেকে ৪ বছরের বড়। ছোট বেলা থেকেই রানু মাঝে মাঝে গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে বাহিরে ঘুরে বেরায়। মা আর বাবা সেই গভীর অন্ধকারেই হারিকেন নিয়ে ওকে খুজে খুজে বাড়িতে নিয়ে আসে। ঠিক দুই মাস আগে এমনি এক রাতে রানুকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমি আর মা আমাদের বাড়ির আর আশে পাশের সব বাড়ির দুয়ারে খুজলাম কিন্তু পেলাম না। রানুকে না পেয়ে হাটতে হাটতে আমরা রাস্তায় চলে যাই ওকে খুজতে। কিন্তু রানু তো কোখনো রাস্তায় যায় না। আমাদের বাড়ির আশে পাশেই হাটতে থাকে। আর যদি রানু বুঝতে পারে আমরা কেউ ওকে খুজছি তাহলে ও লুকিয়ে যায়। লুকিয়ে থেকে শুধু বলবে- আমাকে তোমরা পাবে না।
আমি বাড়ি যাবো না। আমরা ওর গলার শব্দ শুনেই ওকে খুজে বের করে ফেলি৷ কিন্তু সেদিন ওকে কোথাও খুজে পেলাম না। কোথাও ওর গলার শব্দও শুনতে পেলাম না। তাই রাস্তায় ওকে খুজতে যাই। আমি আর মা অবাক হয়ে হারিকেনের সেই মৃধু মৃধু আলোয় দেখতে পেলাম রানু সজিবের গাড়িতে শুয়ে আছে। সজিবের গাড়িতে দেখে যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি অবাক হয়েছি ওকে সেখানে উলঙ্গ দেখে। রানু উলঙ্গ হয়ে সজিবের সেই টেম্পোতে উপর হয়ে শুয়ে আছে আর সজিব ওর পাশে বসে নিজের লুঙি ঠিক করছে। ছি!!! কি লজ্জাই না পেয়েছিলাম সেই দিন। মা রানুকে উঠিয়ে দুই গালে অনেক জরে জরে কয়েকটা থাপ্পড় মারলো। তারপর আমি রানুকে কোন রকম ওর শাড়িটা গায়ে জরিয়েই নিয়ে আসলাম।
হয়তো রানু জানেই না ওর গর্ভে ছোট্ট একটা বাচ্চা তিল তিল করে বড় হচ্ছিল। হয়তো বাচ্চা কি সেটাই ও বুঝে না। কিন্তু আজ ও ভীষণ কেঁদেছে। বাচ্চা নষ্ট হবার কষ্টে কাঁদেনি, ব্যাথ্যায় কেঁদেছে। অনেক কেঁদেছে। ওর চোখ দুটো বার বার বলছিল আমাকে আর এই ভাবে কষ্ট দিও না। আমাকে ছেড়ে দাও। আমি আর পারছি না। কিন্তু ওর চোখের ভাষা যে আমরা সাধারন মানুষেরা পড়তে পারিনা। আর পড়তে পারলেও সেটাকে আমরা মূল্যায়ন করি না। কারন ও তো পাগল। পাগলের তো চোখের ভাষা থাকতে নেই।