সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি, সামনে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আমার সহধর্মিণী কুম্ভকর্ণ প্রিয়াঙ্কা। ঘুমের রাজা, তাই আমি উনাকে কুম্ভকর্ণ বলেই ডাকি। আমি আমার কুম্ভকর্ণের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। আজ হঠাৎ সকাল বেলা চা নিয়ে হাজির। বিষয়টা আমার কাছে ভালো ঠেকলো না। নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে। এমন করে কখনও চা নিয়ে আসলেই এর পিছনে একটা গোপন রহস্য থাকে। ” আরে এই ! চা হাতে নাও।কখন থেকে চা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি” প্রিয়াঙ্কার কথার আমার ঘোর কাটলো।
– হুম।
– এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
– আজ হঠাৎ চা নিয়ে হাজির।
– কেন, আমি কি চা নিয়ে আসতে পারিনা।
– পারো! কিন্তু।
– কী কিন্তু?
– না কিছু না।
– এই নাও তোয়ালে, যাও গিয়ে স্নান করে এসো।
বুঝলাম না! চা খাওয়াই হলো না এর মাঝে স্নানের কাজও সারতে হবে। বিশাল কোনো মতলব নিয়ে হাজির হয়েছে। হয়তো মানিব্যাগের উপর দখল যাবে। স্নান করে এসে দেখি, খাবার টেবিলে খাবার রাখা। এখনও কিছু বুঝলাম না! এখন নাস্তা করিনি, আর উনি খাবার টেবিলে খাবার নিয়ে বসে আছেন। মতলব কী এখনও বুঝতে পারলাম না।
– কী গো, এভাবে ব্যবলার মতো তাকিয়ে আছো কোন? সেই কখন থেকে খাবার নিয়ে বসে আছি।
– আচ্ছা প্রিয়াঙ্কা , আজ সকাল থেকেই এত ঘটা করে আয়োজনের কারণ কী জানতে পারি?
– কেন, তোমার কিছুই মনে নেই।
– না তো।
– আজ আমাদের আমার বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা। কত্তো দিন পর যাচ্ছি।
– আহ হা মনে পড়ছে। কিন্তু আমার যে একটা কাজ আছে,আমি যেতে পারবো না। তুমি একা চলে যাও। আসলেই আমার মনে নেই। আজ প্রিয়াঙ্কাকে বলেছিলাম তার বাবার বাড়ি তাকে নিয়ে যাবো।
– কী বললা! বলেই হাতের গ্লাসটা মাটিতে ফেলে দিলো প্রিয়াঙ্কা ।
চোখের কোণে জলে চিকচিক করছে। যেকোনো সময় চোখ দিয়ে জলের বন্যা চলে আসতে পারে। অবস্থা আশঙ্কাজনক! আমি আবার প্রিয়াঙ্কার কান্না সহ্য করতে পারিনা। প্রেমিক স্বামী বলে কথা। আমি বললা- আমি যাবো, আমি যাবো। প্রিয়াঙ্কা সুর’টা গম্ভীর করে বললো ‘না তোমাকে যেতে হবেনা। আমি পারলে একা যাবো। আর কোনোদিনও ফিরবোনা।
– আমাকে ছাড়া একা থাকতে পারবে।
– পারবো।
– সত্যি পারবে তো।
– জানিনা।
– মিস করবে আমাকে?
– জানিনা।
– সরি বাবু! আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে মাফ করে দাও।
কিছু না বলেই ওঠে চলে গেলো রুমে। আমিও পেছন পেছন গেলাম। দেখি কুম্ভকর্ণ ব্যাগ ঘোচাচ্ছে। মেয়ে মানুষ বড্ড অদ্ভুত! কখন কি করে সে নিজেও জানেনা। অন্যকেও জানতে দিবেনা। কখন আবেগ আর কখন বাস্তব তা বুঝার সাধ্য কোনো পুরুষের নেই। পুরুষ মানুষ তো অনেক দূরে, সে নিজেই জানেনা।
বিয়ে হয়েছে একবছর হয়েছে, এর প্রথম প্রথম কয়েকবার বাবার বাড়ি গিয়েছে। কিন্তু কয়েকমাস থেকে আমারও সময় হচ্ছেনা নিয়ে যাওয়ায়। প্রতিদিন বলতে বলতে আমার কান জ্বালাফালা করে দিয়েছে। বিয়ে হয়েছে একবছর হয়েছে, এর মধ্যে এতবার বাবার কোনো মেয়ে যায়। কুম্ভকর্ণকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। বাবার বাড়ি যাওয়ার নাম শুনলেই লাফিয়ে উঠে। আসলেই তো বাবার বাড়ির নাম শুনলে লাফিয়ে উঠার কথা। এতবছরের সম্পর্ক ছেড়ে দিয়ে এসেছে, আমার মতো একটা অচেনা অজানা লোকের সাথে সারাজীবন থাকবে বলে। তার কি বাবার বাড়ির প্রতি টান থাকবেনা।
দুপুরের দিকে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। ঘন্টাখানেক পরেই আমরা আমাদের গন্তব্যে এসে পৌঁছালাম।
প্রিয়াঙ্কাদের বাড়ির কাছাকাছি যেতেই, প্রিয়াঙ্কা আমার হাতে ব্যাগ দিয়ে দৌড়ে বাড়ির ভিতর গেলো।এক হাত দিয়ে শাড়ি ধরে দৌড়াচ্ছে। তাঁর দৌড় দেখে আমার বড্ড হাসি পেলো। বড্ড আবেগী মেয়েটা। বাড়ির ভিতর গিয়ে দেখি, মরা বাড়ির মতো। প্রিয়াঙ্কা একবার তাঁর মা’কে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। একবার তাঁর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে। প্রিয়াঙ্কার কান্না দেখে আমি ভীষণ হাসি পেলো। কিন্তু হাসতে পারলাম না। শ্বশুরবাড়ির নতুন জামাই বলে কথা।