কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছি, কবর স্থানের পাশেই। পেছন থেকে কলেজের এক জুনিয়র ভাই এসে জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা ভাইয়া এই রবিন কে? আর ওনার কবর এই ক্যাম্পাসে কেনো?
আমি বললাম রবিন আমার বন্ধু ছিলো, মধ্যবিত্ত পরিবারের মা-বাবার একমাত্র ছেলে রবিন। আমার রুমমেট হওয়ায় ওর সব খবর আমি জানতাম।
সুমি আর রবিন দুজন দুজনকে ভালবাসতো, বলতে গেলে কলেজের সেরা জুটি ছিল ওরা।
একবার রবিনের জন্মদিনে পুরো কলেজের সবাই কেক কেটে জন্মদিন পালন করে খুব মজা করেছিলাম। সেদিন রাতে রবিন আর সুমির মধ্যে ভীষণ ঝগড়া হয়েছিলো।
রবিন বলে তুমি জন্মদিনের পার্টিতে বড় ভাইদের সাথে আলাদা ভাবে ছবি কেন তুলেছিলে?
সুমি:এমনি তুলেছিলাম।
রবিন: এমনি মানে কি কেনা তুলছো? কই আমার সাথে তো কয়েকটা গ্রুপ ছবি ছাড়া অন্য ছবি উঠাও নি,আর বড় ভাইদের সাথে এত কিসের প্রিত যে ছবি তুলতেই হলো।
সুমি: আমার ভালো লাগছে তাই তুলছি তোর সব কথার জবাব আমি দিতে পারবো না।
রবিন: ওহ বুঝছি।
সুমি: কি বুঝছিস? আসলে তুই একটা disgusting আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখবি না সামান্য ছবি তোলা নিয়ে তোর এত মাথা ব্যাথা ।
ফোনটা কেটে দিল রবিন।
সেই রাতে রবিন অনেকবার চেষ্টা করেও সুমির নাম্বারে ফোন দিতে ব্যর্থ হলো।
একদিন রাতে রবিনকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, খুজতে খুজতে হোস্টেলের ছাদে গিয়ে পেলাম ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি তোর ফোন অফ কেন আর এত রাতে এখানে কি করিস তুই।
ও বলে যারে এত ভালবাসি যার জন্য মরতেও পারি সে আজ অনেক দূরে। যার জন্য এই জীবন সে যখন এমন করছে বেচে থেকে কি লাভ তাই মরতে এসেছি।
আমি বলছিলাম কি যা তা বলছিস পাগল হয়েছিস নাকি, রুমে চল।
পরদিন রবিন কলেজে সুমির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ক্লাস শেষে রবিন সুমিকে বলে আচ্ছা এভাবে ঝগড়া করে আর কতদিন থাকবে নিজে তো কষ্ট পাচ্ছো আর আমাকেও কষ্ট দিচ্ছো।
সুমি: কই আমার তো কষ্ট হয় না আমি তো ভালোই আছি।
রবিন: তুমি এত নিষ্ঠুর হয়ো না প্লিজ আমি আর এভাবে কথা না বলে থাকতে পারছি না, আর সবকিছুর জন্য আমি স্যরি।
সুমি: তোর ভাল থাকা বা না থাকার সাথে আমার কিছু যায় আসে না বলেই চলে গেল।
রবিন সেদিন খুব কেঁদেছিল। কদিন পরে সুমির আইডিতে আতিক ভাইয়ের সাথে in a relationship স্ট্যাটাস দেখে রবিন খুব ভেঙে পড়লো তারপর থেকে রবিন আর কখনো সুমির মুখোমুখি হয়নি।
গত কয়েক মাস রবিন কারো সাথে ভালোভাবে কথা বলে না আচরণে বিদঘুটে ভাব কেমন যেন উসকো খুশকো ভাব। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না, রাতে কখনো খেতো না রবিন। কখনও কখনও সকালে না খেয়ে কলেজে যেতো। রবিনের এসব অনিয়মের কারণে ও অসুস্থ হয়ে পড়লো। আমরা বন্ধুরা মিলে হসপিটালে নিয়ে গেছিলাম ওকে। দুই ব্যাগ রক্তও দিতে হয়েছিলো রবিনকে। ডাক্তার বলেছিল ওর ব্রেইন ক্যানসার ধরা পড়েছে।
রবিন আর হয়তো বাঁচবে না। কদিন হলো রবিন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে ।কথা বলতে পারছে না। ইশারায় কাগজ কলম চেয়ে নিল।
আর তাতে লিখেছিলো: “সুমি তোমাকে খুব ভালোবাসতাম এখনও বাসি, এ জনমে তোমাকে পেলাম না পরের জনমে বিধাতার কাছে নিশ্চয়ই তোমাকে চাইবো।”
রবিনের শেষ কৃত্য অনুষ্ঠানে সুমি এসেছিলো, সুমি আজ ধর্ষিতা নারী। আতিক ভাই তাকে ধোকা দিয়েছে।
রবিনের লাশের পাশে এসে সুমি কাঁদছিল।
আমি বলেছিলাম ধর্ষিতাদের রবিনের লাশের পাশে আসা নিষিদ্ধ।
সুমি সেদিন খুব কেদেছিল আর হয়তো ভাবছিল কি ভূলটাই সে করেছিল রবিনকে ওভাবে ঠকিয়ে।
আজ রবিনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী তাই ওর কবরের পাশে বসে পুরনো স্মৃতি মনে করছি।