মেয়ের নাম অলিভিয়া! আগে আলেয়া নাম ছিলো। আমেরিকা থাকে। সেখানকার বড় ফ্যাশন কারুকর্মী। বিয়ে পরে আমাকে নিয়ে আমেরিকাতেই থাকতে চায়!
খান্দানী বংশ, ওখানে বাড়ি আছে, আছে গাড়ি। নেই কোনো টাকার অভাব। আমার এসব কোনো কিছুতেই আগ্রহ নেই। শুধু সে আলেয়া থেকে অলিভিয়া কীভাবে হলো তা জানার জন্য মনের মধ্যে রাত অব্দি খটখট করছে।
আব্বাকে বলে দিলাম। তোমার পছন্দের মেয়েটার সাথে একটু কথা বলার ব্যাবস্থা করা যাবে?
বলে রুমে আসতে আসতেই ফোন আসলো, “ হ্যালো, তৌকির বলছেন? ”
“ হ্যাঁ, আপনি কে? ”
“ আমি অলিভিয়া। ”
আমি আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি প্রশ্নটা করেই ফেললাম।
“ আচ্ছা, আপনি অলিভিয়া কীভাবে হলেন আলেয়া থেকে? ”
“ জানতে হলে বিয়ে করতে হবে! ”
বলেই ঠুস করে ফোন রেখে দিলো! অবাক হলাম। জীবনের প্রথম কোনো কিছু জানার প্রতি আমার এতো আগ্রহ হলো। সেটা না জেনে আমিও ছাড়াছি না। চূড়ান্ত মতামত দিয়েই দিলাম।
আমাদের বিয়ের আয়োজন করা হলো। বেশ বড়সড় অনুষ্ঠানই হলো। অলিভিয়ার সব কথা, সব শর্ত আমি মেনেই চলেছি। সেই সাথে বাসর রাত থেকে তিন মাস হলো, আলেয়া থেকে অলিভিয়া হবার ব্যাপারটা কী জানতে চেয়েই চলেছি! সে বলবো বলবো বলে বলছে না!
আমার ভেতরে কিছু হুড়মুড় করে।
কেমন জানি অস্থির লাগে। একটা কথা জানার জন্য আমি বিয়েতে রাজি হলাম, আমেরিকা এলাম! তবুও সে বলছে না!
আজকে অলিভিয়া না বললে একটা কিছু হয়ে যাবে।
সন্ধ্যা সন্ধ্যা অলিভিয়া এলো! আজকে বেশ সাজুগুজু করেছে! পার্লার থেকে এসেছে মনে হয়। ফ্যাশন ডিজাইনার হলেও তাঁকে আমি সাজুগুজু করতে দেখি না। নাকে নাকফুল লাগিয়েছে।
ভালো লাগছে, নাভিতেও একটা ফুল লাগিয়েছে! ওটাকে নাভিফুল বলে কিনা আমি জানি না, বিচ্ছিরি লাগছে। এসবের চেয়েও আমার আলেয়া থেকে সে অলিভিয়া কেনো হলো সেটা জানা বেশি দরকার।
অলিভিয়া চোখ টিপে বললো, “ভালোবাসি!”
“ভালোবাসা-বাসি পরে হবে আগে বলো তুমি আলেয়া থেকে অলিভিয়া হওয়ার কারণ কী?”
অলিভিয়া রাগ করলো, “আরে, এতো সুন্দর করে ভালোবাসি বললাম। দিলে তো মুহূর্তটা নষ্ট করে!”
“ওটা বলবে না, আমি বেরিয়ে যাবো?”
অলিভিয়া দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো, “সহ্য করতে পারবে না। আমি তোমাকে বলতে চাই না। তোমার সাথে থাকতে ভালোই লাগছে!”
আমি হেসে বললাম, “আমি তৌকির! সহ্য করতে পারবো না এমন কিছুই নেই!”
অলিভিয়া ঠোঁটে ঠোঁট কামড়ে বললো, “তাহলে চলো।”
একটা গোপন দরজা খুললো! এ বাসায় গোপন এতো বড় একটা রুম থাকতে পারে আমার ধারণাই ছিলো না! রুমের বাতি জ্বালালো, আর চোখের সামনে ভেসে উঠলো এক গাধা লাশ! সবগুলো ছেলেই সুদর্শন ছিলো দেখেই বুঝা যাচ্ছে!
অলিভিয়া বললো, “ ভয় পেলে? ”
আমি মাথা নাড়ালাম, “ উহুঁ। ”
অলিভিয়া হাসলো। একটা কফিন বাক্সের কাছে নিয়ে গেলো।
“ কফিনার কভারটা টানো। ”
আমি টানলাম, আরো একটা লাশ। তবে এটা আর কারো না। অলিভিয়ার নিজেরই! নাহ কীভাবে সম্ভব? অলিভিয়া তো আমার সামনেই। এটা নিশ্চিত ওর যমজ বোনের লাশ!
“ যমজ বোন তোমার! কীভাবে মারা গেলো? তাছাড়া লাশটা কফিনে কেনো? ”
অলিভিয়া আমার দিকে চেয়ে বললো, “আমার কোনো যমজ বোন নেই! লাশটা অনেক আগের। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “তাহলে?”
অলিভিয়া আমার কাছে এসে বললো, “তাহলে আর ভাবতে যেয়ো না!”
কথাটা বলার পরে যেন আমি ভাবতেই গেলাম! আমি অজ্ঞান হয়ে যেতে লাগলাম! তিনটা মাস সংসার করে ফেললাম এমন একজনের সাথে যে অনেক আগেই কফিনে লাশ হয়ে পড়ে আছে!
অলিভিয়া শেষবারের মতো আমার চোখের পাতায় হাত বুলিয়ে বললো, “এ সবকটা লাশের নাম তৌকির! তৌকির নামের ছেলেদের সাথে সংসার করতে খুবই মজা!”