বিয়ের কার্ড টা টেবিলের সামনে রাখা ছিলো। অনেক দিন হয় বিয়ের দাওয়াত খাওয়া হয়না। সেদিন আসলো সে সুযোগ। ছোট বোনের বান্ধবীর বিয়ে।তার নাম রুবিনা। ভারি মিষ্টি মেয়ে। তার সাথে আমার রিলেশন ছিলো ২ বছরের। অবশ্য সেটা ফ্যামিলি, বন্ধুবান্ধব এমনকি আমার বোনটাও জানতো না। আজ এই নিয়ে লিখছি বলে আপনারাও জানতে পেরেছেন।
ওর বিয়েতে যাওয়ার আগে আমাদের কেনো বিয়ে হলোনা তা নিয়ে একটু কথা বলি। আমার ছোট বেলা থেকেই ছিলো খাই খাই স্বভাব। সেজন্য ওদিকে আমার ভুরি ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু রুবিনা কখনোই চাইতোনা তার জীবন সঙ্গীনি হিসেবে কোনো পেটুক অথবা ভুড়িওয়ালা জামাই আসুক। আমার সবকিছুতেই ছিলো খামখেয়ালিপনা। কে শুনে কার কথা! খাওয়া আগে না প্রেম আগে এই ভেবে আমার মাথায় খাওয়ার ব্যাপারটাই আগে ঘুরতো।
একদিন রুবিনা সিরিয়াস প্রশ্ন করে বসে, ফাহাদ তোমার কি ইচ্ছে? তোমার এই ভুরি নিয়েই তুমি থাকবা, না তোমার আমাকে চাই? মুখের উপর বলে দিলাম তুমি গেলে তুমি পাবো কিন্তু খায়িয়ে লালন করা ভুড়ি পাবোনা। তুমি আসতে পারো। আর শুনো, তোমার বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিতে ভুলোনা যেনো।
সেদিনই রুবিনা আমাকে থ্রেট দিয়ে আমার সাথে ব্রেকাপ করে যাবার আগে বলেছিলো যে, হারামি তুই থাক তোর ভুড়ি নিয়ে। এই ভুড়ি নিয়ে আমার বিয়ে বাড়ি আসা তো দূরের কথা, তোরে যেনো আমার আশে পাশে কখনো ঘুরঘুর করতে না দেখি। আর মনে রাখিস তোর জীবনে বিয়ে হবেনা, আমার পরে প্রেম করবি তো দূরের কথা। দেখবো তোর এই ভুরির প্রেমে কে পড়ে! তার কথা পাত্তাই দেইনি সেদিন। তারপর থেকে আমি আবার ছ্যাকা খাওয়া ভুড়িওয়ালা সিঙ্গেল। উফফ…!! এভাবে ডিপ্রেশনে কাঁটতে থাকে অনেক দিন।
৬ মাস পর তার আজ বিয়ে। বিয়ের দাওয়াত খাবো এটা ভেবে নিলেও ও তো আমার প্রাক্তন। সেদিনের কথার পর ওর বিয়ে খেতে যাই কিভাবে? আবার বোনের বান্ধবী। বোন টা জানতে পারলে হবে ঝামেলা। গালে হাত দিয়ে কি সিদ্ধান্ত নিবো তাই ভাবছিলাম। হঠাৎ এঞ্জেল ফারিয়া আইডি থেকে মেসেঞ্জারে ম্যাসেজ আসলো “আই লাভ ইউ”! চমকে উঠলাম। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে হুট করেই লাভ ইউ ট্যু বলে দিলাম। কে দিয়েছে ম্যাসেজ সেটা একবারের জন্য ভাবিনি। ম্যাসেজ সিন হলো। আর রিপ্লে আসলোনা।
পরে ভাবতে লাগলাম কি করলাম এটা! রহস্য আছে নাকি কোনো। কথাটা ভাবার মধ্যেই রুবিনা কল করে হিহিহি করে হাসা শুরু করলো। আর ম্যাসেজের কথা বলতে গিয়ে রেগে গিয়ে বললো এটা তার ফেইক আইডি ছিলো। আমি কেনো রিপ্লে দিলাম ফেইক আইডির এজন্য সেইরকম বকাবকি শুরু করলো। ক্ষানিকক্ষণ পরে একটু নরম গলায় বলে, তার বিয়ে ঠিক হয়নাই। বিয়ের কার্ড আলাদা জাস্ট আমার জন্যই পাঠিয়েছিলো। কার্ডের ভিতরে একটা চিঠি ছিলো। সেটা পড়তে বলে কলটা লজ্জায় কেটে দিলো।
কিছু না বুঝতে পেরে কার্ড খুলে দেখলাম চিঠি। সেখানে লিখা ছিলোঃ
“আমি জানি ভুড়িওয়ালারা একটু আহাম্মক হয়, কিন্তু তাদের মনটাও অনেক ভালো হয়। কমাতে হবেনা তোমার ভুড়ি। তোমার বুকে মাথা… স্যরি ভুড়িতে মাথা রেখে আমি সারাজীবন তোমার সাথে কাটাতে চাই! শুধু তাই নয়, বিয়ের পরে আমার প্রেগন্যান্সির সময়টাতে একসাথে দুজনের ছবি উঠিয়ে বাধাই করে রাখবো। দেবে কি আমায় সে সুযোগ?”
– এই চিঠি পড়ে আমার আবেগ আরো বেড়ে উঠলো। কল করে চিঠির রিপ্লে টা দেয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। ম্যাসেজ দিয়ে বলেছিলাম ” হ্যাঁ! বিশ্বাস করো, আমিও তোমাকে সে সুযোগ দেবার অপেক্ষায় ছিলাম। আমার ভুড়ির কসম !!