অবাক হলাম যখন ফার্মেসি থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন এর বদলে মেয়েটি কনডম কিনলো!
আমি প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে মেয়েটার পিছু নিলাম। খানিকটা ইতস্তত বোধ করলেও কৌতূহল মেটাতে তাকে ডাক দিলাম।
“আপু শুনছেন?”
“জ্বি ভাইয়া বলেন?”
“একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করবো?”
মেয়েটা হেসে জবাব দিলো,
“আমি জানি আপনি কি জিজ্ঞাসা করবেন।”
একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইলাম।
মেয়েটা নিজের থেকেই বললো,
“আমার বাবা অথর্ব। সড়ক দুর্ঘটনায় দুটি পা হারিয়ে ঘরের এক কোণে পড়ে আছেন। মা টুকটাক সেলাই জানেন। কিন্তু তা দিয়ে কি সংসার চলে? ছোট দুটো ভাই বোন আছে। ওদের পড়ার খরচ, দৈনন্দিন জীবনের খরচ, অনেক ভেবে চিন্তে আমি চাকরি খুঁজতে থাকি। কোনোমতে অনার্সটা শেষ করি। একটা চাকরিও পেয়ে যাই। তবে সমস্যা হলো অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। সেদিন আমার এক কলিগ অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে একদল জানোয়ারের কাছে ধর্ষিত হয়। হতে পারে, সেই জানোয়ারদের পরবর্তী শিকার আমি। তাই, প্রটেকশন নিয়ে রাখছি সাথে। ওই যে বলে না? ধর্ষণ যখন সুনিশ্চিত তা উপভোগ করাই শ্রেয়?”
আমি বললাম,
“আপু দেশে আইন বলে কিছু আছে।”
সে তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো,
“ভাগ্যিস মনে করিয়ে দিলেন! বলতে ভুলে গেছিলাম, আমার কলিগ পুলিশের কাছেও গিয়েছিলো। শুনেছি, উনিও কুপ্রস্তাব দিয়ে বসেছেন। বাপ মরা মেয়ে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কথা ভেবে গলায় দড়িও দিতে পারছে না।”
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। মেয়েটি শান্ত গলায় বললো,
“কখনো যদি আমার এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় তবে আমি উপভোগই করবো। কারন এই সুশীল সমাজ ধর্ষককে নয়, ধর্ষিতাকে অপরাধীর চোখে দেখে। আর আমি তো সমাজের নিয়ম অমান্য করে চলি। চাকরি করি, রাত করে বাড়ি ফিরি। এ জাতীয় মেয়েরাই ধর্ষণের শিকার হয়। এদের জন্য সমাজ ধর্ষককে দায়ী করবে না। আমার ওপর আমার মা-বাবার ভালো থাকা আর আমার ভাই-বোনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে আছে। আমাকে যে আরো অনেক দিন বাঁচতে হবে ভাই! ভালো থাকবেন।”
লক্ষ্য করলাম মেয়েটার চোখের কোণায় জল চিকচিক করছে। সে মলিন হেসে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো। আমি ঝাপসা চোখে তাঁকিয়ে রইলাম তার প্রস্থানের পথে।