ছুটির ঘন্টা

ছুটির ঘন্টা

ছুটি এ একটা শব্দের মাঝে আনন্দ বেদনা/বিষাদ দুটোই জড়িয়ে আছে।
*আনন্দটা নিয়েই আগে শুরা করা যাক। প্রাইমারী তে যখন পড়তাম তখন এই ছুটি শব্দটাকে হেব্বি লাগতো।
ক্লাসে কি মনোযোগ থাকতে হিসেব করতাম কখন বিরতি হবে।
বিরতির সময় খেলাধুলা শেষ না হতে যখন আবার ঘন্টা পরতো তখন মন খারাপ করে ক্লাস করতে চলে যেতে হতো

কিন্তু তারপর আর পড়ায় মন দিতে পারতাম না। শুধু অপেক্ষায় থাকতাম কখন ছুটির ঘন্টা পড়বে আর নাচতে নাচতে

বাড়ি যাওয়ার পথে দুষ্টামী করতে পারবো।
বাড়িতে আসার পর খেয়ে চুপি চুপি সবার চোখকে পাঁকি দিয়ে আবার বেরিয়ে পড়তাম খেলতে।
সন্ধ্যার আগে ফিরে এসে তাড়াতাড়ি পড়তে বসতাম তখন শুরু হতো ননস্টপ বকা আহ্ কানকে বলতাম কিছুক্ষণ সহ্যকর।
*বিশেষ করে যখন থেকে দাদা লজিং স্যার রাখেছে তখন থেকে এই ছুটি শব্দটার বিশেষ মর্ম উপলব্ধি করতে পেরেছি যে ইহা কতো মূল্যবান শব্দ।
একটা বাঁধাধরা জীবনে ডুকে গেলাম সকালে মা ঠেলে ঠেলে উঠাতো আরবি পড়ার জন্য স্যার এর বিশেষ গুন ছিলো

বাংলা, আরবি, ইংরেজী, অংক সব পড়াতে পারতো সব গুনের অধিকারি মানে একের ভিতর সব বই এর মতো।
আরবি পড়ার পর বাংলা তারপর স্কুলে যাওয়া স্কুল থেকে ফিরে এসে ঘুম সন্ধ্যার আগে উঠতাম।
নাস্তা খেয়ে আবার পড়তে বসা তারপর সেই দশটা সাড়ে দশটা পর্যন্ত কি যে বিরক্তি লাগতো এখনো মনে হলে দৌড়ে

সেই ভাবনা থেকে বের হয়ে আসি।
সবার জন্য শুক্রবার ছিলো ছুটির দিন আর আমাদের কাছে ছিলো এক বেদনার দিন এক বিষাদের দিন এক মহা যন্ত্রনার দিন।
সকালে আরবি পড়াও মিস নাই তারপর বাংলা পড়তে হতো সকাল থেকে দুপুর ১২:৩০ মিনিট পর্যন্ত এর মাঝে যে কয়বার বলতাম

স্যার ছুটিদেন না হলে মরে যাবো কিন্তু কে শুনে কার কথা উফ মনে করতে চাইনা।
এই শৈশবে ছুটি শব্দটা আনন্দের ছিলো। ছুটি মানে মুক্তি।আহ্ কত্তো ভালোলাগতো তখন।
*বেদনা/বিষাদ এ নিয়েও কিছু বলা উচিত না হয় পূর্নতা পাবেনা ছুটি শব্দটা।
কৈশোরে পা দেওয়ার পর থেকে ছুটি শব্দটাকে আটকে রাখতে বেঁধে রাখতে ইচ্ছা হতো।
মনে হতো সময় গুলা এতো তাড়াতাড়ি যায় কেনো আরেকটু অপেক্ষা করলে কি এমন ক্ষতি হতো।
এই কৈশোরকাল এ বাবার বাড়ির ছুটির ঘন্টা বেজে গেলো খুব জোরে।
এই ছুটির ঘন্টা যে কতো বেদনার কতো কষ্টের তা এক একটা মেয়ে ভালো জানে।
এ ছুটির সাথে কিছু সখ আহ্লাদ বাবার বাড়িতে মাটিতে পুঁতে রেখে পা বাড়াতে হয়।
তখন সেই ছোট্ট মেয়েটি দায়িত্ববান হতে হয় পান থেকে চুন খসলে কিছু কটু কথা ফ্রিতে হজম করতে হয় এ যেনো নিত্যদিনের তালিকায় পড়ে যায়।
এক সময় মা হয় তখন তো নিজেকে ভুলে গিয়ে তার ভিতরে জীবনটা ডুকে যায়।
এভাবেই নিজের উপর যে কতুটুকু দায়িত্ব পালন করা দরকার তারও ছুটির ঘন্টা বেজে যায় নিজ থেকে তাতে কেউ বাধ্য করা লাগেনা।
*যৌবনের শেষ পর্যায়ে যখন হিসেব করতে বসি তখন দেখি পরকালের হিসাবের খাতা পাঁকা।
বাল্যকালে গেলো খেলায়, শৈশব গেলো পড়ালেখায়,কৈশোর গেলে পড়ালেখা প্লাস সংসার।
যৌবন গেলো সংসার ছেলেমেয়ের দিকে নজর দিতে দিতে শেষ পর্যায়ে নিজের জন্য কি করলাম????
হাতে তো সময় বেশি নেই শেষ বিদায়ের ঘন্টাবাজার এখনতো শুধু চারদিকে দু দু দু মরুভূমির ন্যায় দেখছি।
সবাই সবাই কে নিয়ে ব্যস্ত আমি একা পড়ে আছি একা ঘরে।
শরীরের জোর গেছে চোখ গেছে বৃদ্ধা হয়ে সবার বোঝা হয়েছি নিজের জন্য যে কিছু করবো তার ও উপায় নেই।
যা আমল করি তা যে শুদ্ধ হবে তারও তো ঠিক নেই।
ছুটির ঘন্টা তো বেজেছে টিক টিক করে।

……………………………………(সমাপ্ত)………………………………………

বিঃদ্রঃ: সময় থাকতে বুঝি না সময় হাত থেকে হারালে সব বুঝি।
আমরা আদম সন্তানেরা এরকমভাবে যৌবন কলকে সংসার,হাসি/তামাসা, পাপাচারের ভিতরে হারিয়ে ফেলে বৃদ্ধ অবস্তায় যখন একা হয়ে পড়ি তখন খুব ফিরে যেতে ইচ্ছে করে যৌবনে আর কত্তো গুলা আমল করে ফিরে আসতে।
যেমন ভাবে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করবো আমাদের আবার পাঠাতে দুনিয়াতে সব নেক আমল করে নেকের বোঝা ভারি করে ফিরে আসবো।
সে প্রার্থনা যেমন পূর্ন হবে না ঠিক তেমনি বৃদ্ধ থেকে যৌবনেএ ফেরা যাবে না তাই সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত