বউ ফোন দিয়ে বললো, এই তুমি কই? আমি বললাম, বসুন্ধরা সিটি। এক্ষুনি বাড়ি চলে আস, কুইক! ছবি দেখার কী হবে? টিকিট কেটে ফেলেছি তো! রাখ তোমার ছবি! তোমার ছবি দেখার গোষ্ঠী কিলাই! তোমার এতো বড় সাহস! তুমি আমার বোনদের নিয়ে গেছো ব্লু ফিল্ম দেখাতে! বাড়ি আস,তোমাকে আজ বোঝাবো কত গমে কত ময়দা! আমি কিছু বলতে গেলাম, তার আগেই বউ ফোন রেখে দিল।
দুই বছর আগে, অনেক দিন পর শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গেছি। দুই শালি ধরে বসলো তাদের কে সিনেমা হলে গিয়ে মুভি দেখাতে হবে। আমি রাজি হতে চাইলাম না। তারা আমাকে কিপ্টে উপাধি দিয়ে বসলো। রাজি করাতে না পেরে শেষে বউকে গিয়ে নালিশ করলো। অগত্যা রাজি হতে হলো। বউ সাথে গেলো না। তার ছবি দেখার আগ্রহ নাই, তার একমাত্র প্রিয় নায়িকা শাবানা।আর কারও নাম বিশেষ জানেও না।
বসুন্ধরা সিটি গেলাম মুভি দেখার জন্য। একটা নামকরা ছবি চলছে। ছবির নাম XXX.তিনটা X.মুক্তি পাওয়ার আগে থেকেই ছবিটা নিয়ে হইচই হচ্ছিল। এই ছবিতে হলিউড এ্যাকশন অভিনেতা ভীন ডিজেলের সাথে প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছে বোম্বের সুন্দরী নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোন। এই দুজনেই আমার প্রিয় নায়ক নায়িকা। টিকেট কাটতে গিয়ে যুদ্ধ করতে হলো। প্রচন্ড ভীড়। কোনরকমে আনাচে কানাচে দিয়ে ঢুকে তিনটা টিকিট কেটে আনলাম। বাংলাদেশের মানুষ যে এতো মুভি পাগল আগে জানতাম না।
ছবি শুরু হওয়ার আগে ফুড কোর্টে গেলাম খাওয়া দাওয়া করার জন্য। খেতে বসেছি, বউ ফোন দিল শালির কাছে, এই তোরা কই? শালি বললো, খাওয়া দাওয়া করছি। খাওয়া শেষে মুভি দেখবো। বউ বললো কী মুভি? শালি লজ্জা পেয়ে বললো, আমি জানি না, দুলাভাই জানে?এই নাও দুলা ভাইয়ের সাথে কথা বল। বলেই শালি ফোনটা আমার দিকে এগিয়ে দিল। বউ বললো কী মুভি দেখাতে নিয়ে গেলে? মুভির নাম কী? আমি বললাম মুভির নাম XXX. তিনটা X. তার মানে খারাপ ছবি। তুমি ওদেরকে খারাপ ছবি দেখাতে নিয়ে গেছো? এই বয়সে তুমি ওদেরকে নিয়ে 3X মুভি দেখবে?
3X মুভি হলেও ছবিটা কিন্তু বেশ ভালো। যারা দেখেছে তারা প্রশংসা করছে। এই ছবিতে আছে বোম্বের সুন্দরী নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোন,,,, দীপিকা পাদে কেন? নায়িকার নাম দীপিকা পাদে কেন? ফাজলামো কর আমার সাথে? এ ছবিতে যেহেতু সুন্দর নায়িকা আছে, ভালো তো হতেই হবে! সুন্দরী কাপড় খুললেই মজা! কী বলছো এই সব? কত মানুষ দেখছে,,, ভালো ছবি, প্রচুর ভীড়,,, তোমার ভালো ছবির গোষ্ঠী কিলাই। এক্ষুনি বাড়ি চলে আস। কুইক! আমি বললাম, তুমি যা ভাবছো তা না।বোম্বাই নায়িকা,,,, বোম্বের নায়িকা যত খুশি পাদুক,তুমি চলে আস। আমি কিছু বলতে গেলাম। বউ রেগেমেগে বললো, নো সাউন্ড! আমি টিকিট ফেরত দিতে গেলাম। শালিদের মন খারাপ হয়ে গেল। তারা ও শুনেছে এটা একটা নামকরা ছবি। কত আগ্রহ নিয়ে ছবি দেখতে এসেছে!
আবার প্রচন্ড ভীড় ঠেলে কাউন্টারে ঢুকলাম। কাউন্টারের সুন্দরী মেয়েটা বললো, টিকিট ফেরত নেওয়ার নিয়ম নাই, টিকিট ফেরত দিচ্ছেন কেন? আমি বললাম, ছবির কি এক নাম রেখেছে 3X, কেন পরিচালক কি আর কোন নাম খুঁজে পায়নি? নাম বলতেও লজ্জা লাগছে। সুন্দরী মেয়েটি বললো, ভাইয়া মুভির নাম 3X নয়, ট্রিপল এক্স। ভীন ডিজেলের সেরা মুভি। ছবি না দেখলে অনেক কিছু মিস করবেন। দীপিকা পাড়ুকোন অসাধারণ অভিনয় করেছে। টিকিট ফেরত দিলাম না। বউকে ফোন দিয়ে বললাম, 3X মুভি দেখবো না, ট্রিপল এক্স মুভি দেখবো। আমার প্রিয় নায়ক ভীন ডিজেলের মুভি। বউ বললো, নায়কের নাম কি বললে? ভীন ডিজেল।
ফাজলামো কর আমার সাথে? নায়কের নাম আবার ডিজেল হয় কেমনে? আর 3X এবং ট্রিপল এক্সের মধ্যে পার্থক্য কি? আমি বললাম, 3X এবং ট্রিপল এক্সের মধ্যে পার্থক্য কি তাতো আমি জানি না। তবে শুনেছি মুভি ভালো। ভীন ডিজেলের,,,, নায়কের নাম ভীন ডিজেল হউক,আর মবিল পেট্রোল হউক, এই ছবি তুমি দেখতে পারবে না। এইটা আমার সাফ কথা! বলেই বউ খট করে ফোন কেটে দিল। আমি মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,হায়! দীপিকা পাদে কেন!! হায়! ভীন ডিজেল মবিল পেট্রোল!! তোদের মা বাবা কি আর কোন নাম খুঁজে পায়নি??