অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছি বাবা আমার রুমের সামনে আসে তারপর কি একটা চিন্তা করে আবার চলে যায় । আমি বাবাকে ডেকে আমার রুমে নিয়ে আসলাম। তারপর বাবার হাতটা ধরে বললাম,
— বাবা, কিছু বলবে আমায়? বাবা নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি যদি তোর মত চুল কাটি, দাড়ি কাটি, তুই যে সমস্ত কাপড় চোপড় পড়িস সেই গুলো যদি আমি পড়ি আর তোর বাইকটা যদি আমি মাঝে মধ্যে চালাই তাহলে কি তোর কোন সমস্যা হবে? আমি বাবার কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
— না বাবা কোন সমস্যা নেই। কিন্তু বাবা হঠাৎ কেন এমন করবে সেটা আমায় একটু বলবে? বাবা এইবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি কখনো আমার জীবনটা উপভোগ করতে পারি নি।খুব অভাব অনটনে বড় হয়েছি। আমি খুব কষ্ট করে আমার ছাত্র জীবন পার করেছি। আমার বন্ধুরা যখন স্টুডেন্ট লাইফটা এনজয় করতো আর আমি তখন টিউশনি করিয়ে নিজের আর নিজের পরিবারের খরচ চালাতাম। যখন ভালো একটা চাকরি পেলাম ভাবলাম এখন জীবনটা উপভোগ করবো কিন্তু তার আগেই বাবা মা আমাকে বিয়ে করিয়ে দিলো। বিয়ের পর তোর মাকে দেখে মনে হলো আজ থেকে আমার সুখের জীবন শুরু। কিন্তু সেই সুখ আমার কপালে বেশিদিন ঠিকলো না। তুই জন্মের ২ বছর পর হঠাৎ তোর মা মারা যায়। তোর কথা ভেবে দ্বিতীয় বিয়ে করি নি। তারপর তকে মানুষ করতে আর তোর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে টাকার পিছনে ছুটতে ছুটতে কখন যে বুড়ো হয়ে গেলাম নিজেও জানি না। আর আজ এত বছর পর হঠাৎ ইচ্ছে হচ্ছে নিজের জীবনটা একটু উপভোগ করতে। বাবার কথা গুলো শোনার পর নিজের চোখের জলটা কোন রকমে লুকিয়ে বাবাকে বললাম,
— বাবা আমার কোন সমস্যা নেই। এই নাও বাইকের চাবি। আজ থেকে তুমি ২০ বছরের তরতাজা যুবকের মত নিজের জীবনটা উপভোগ করো সেদিন দুপুরে অফিসে বসে কাজ করছি এমন সময় আমার বন্ধু রাকিব আমায় ফোন দিয়ে বললো,
– পিয়াস, চাচা কি ঠিক আছে? আমি বললাম,
— মানে?
– বন্ধু, কিছুক্ষণ আগে গলির মোরের দোকানটাতে বসে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ কে যেনো আমার পিছনে থাপ্পড় মেরে বললো, হোয়াটস আপ ব্রো। তাকিয়ে দেখি তোর বাবা৷ গলায় মোটা চিইন, দাড়ি স্টাইল করে কাটা৷ চুল হাইলাইট করা। একটা টিশার্ট পড়েছে আর তাতে লেখা, “আহো ভাতিজা আহো” আর কাটাছেঁড়া জিন্স প্যান্ট। আমি তোর বাবাকে বললাম, আসসালামুয়ালাইকুম চাচা। কিন্তু তোর বাবা আমার ডানগালে থাপ্পড় মেরে বললো, আমাকে কি চাচার মত লাগে? আমি রাকিবের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বললাম,
— দেখ আমার বাবা হলো মর্ডাণ বাবা। তোর বাবার মত ফকিন্নি বাবা না। আজ থেকে তকে আমি চাচা বলে ডাকবো আর তুই আমার বাবাকে ভাই বলে ডাকবি অফিস থেকে ফেরার পথে আমাদের পাশের বাসার করিম আংকেল আমায় ডেকে আমতা আমতা করে বললো,
~ বাবা লজ্জার কথা তোমায় কিভাবে যে বলি। আমার বউ মানে তোমার চাচী একটু বাহিরে বের হয়েছিলো। তোমার বাবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার বউকে দেখে শিস বাজায় আবার চোখ মারে। আমি অবাক হয়ে বললাম,
— চাচা, চাচী কি বোরকা পড়ে বের হয় নি?
-না তো শাড়ি পড়ে বের হয়েছিলো.
–দেখেন চাচা, বোরকা না পড়ে বের হলে রাস্তাঘাটে বাচ্চা পোলপান একটু আধটু শিস বাজাবে চোখে ইশারা করবে এটাই স্বাভাবিক। করিম আংকেল আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,
– তোমার বাবা বাচ্চা পোলাপান? আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম,
— বাচ্চা না তো আপনার মত বুইড়া না কি? আমার বাবার লুক দেখেছেন, স্টাইল দেখেছেন? আপনার তো এক পা কবরে আর আমার বাবাকে বুইড়া বলেন। আজ বাবা কালো থ্রি কোয়াটার পড়েছে আর সাদা টিশার্ট। টিশার্টের উপর সুন্দর করে লেখা, “বুঝো না দুধু খাও”। আমি বাবাকে বললাম,
— বাবা, তোমায় জন আব্রাহামের মত লাগছে। বাবা মুচকি হেসে বললো,
~ একজনকে আমার খুব ভালো লাগে রে। কিন্তু কিভাবে প্রপোজ করবো বুঝতে পারছি না।
আমি সারারাত বাবাকে প্রেমের সকল নিয়ম কায়দা শিখালাম কয়েকদিন পর কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে আমি পুরো অবাক হয়ে যায়। দেখি বাবা একটা মহিলাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। আমাকে দেখে বাবা বললো, বাবা সালাম কর। আজ থেকে উনি তোর নতুন মা। আজকাল একা থাকতে ভালোলাগে না। তাই তোর দেওয়া বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে প্রেম করে বিয়ে করে ফেলি আমি এই মুহূর্তে ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছি না। এমন সময় আমার গার্লফ্রেন্ড সুপ্তির ফোন। আমি ফোন রিসিভ করতেই সুপ্তি কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– পিয়াস, মাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি গোমড়া মুখে বললাম,
— তোমার মা আমাদের বাসায়। তুমি তাড়াতাড়ি আসো ছাদের এককোণে চুপ করে বসে আছি। সুপ্তি আমার কাছে এসে আমার পিঠে সমানে কিল ঘুষি মারতে লাগলো। তারপর কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– ৫ বছর প্রেম করে শেষমেষ ভাই বোন হয়ে গেলাম। আরো বাবাকে আধুনিক বানাও। তোমার বাবা দুনিয়াতে আর কোন মানুষ পেলো না শেষ পর্যন্ত আমার মাকেই খুঁজে পেলো? আমি এইবার রেগে গিয়ে বললাম,
— তোমার মার কি আক্কেল বুদ্ধি নাই? এই বয়সে মেয়ের বিয়ে না দিয়ে নিজে বিয়ে করে ফেলেছে..
-একদম আমার মা নিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলবে না।
— তুমিও আমার বাবা নিয়ে কোন ফালতু কথা বলবে না…
ঝগড়ার এক পর্যায়ে সুপ্তি আমার চুল আর আমি সুপ্তির চুল ধরে টানতে লাগলাম। এমন সময় খেয়াল করি বাবা আর সুপ্তির মা আমাদের দেখে হাসছে আর বলছে, ভাই বোন ঝগড়া করবে এটাই তো স্বাভাবিক আমি মনে মনে বলতে লাগলাম,
— হাইরে আমার বাবা, কি বাঁশটাই না দিলা..