এক বৃষ্টির দিন

এক বৃষ্টির দিন

সিয়াম অফিসে যাওয়ার আগে তার স্ত্রী নীরা ইতস্ততা করে তাকে অফিস থেকে ফেরার সময় ১কেজি তেঁতুল আনতে বলে,

: তুমি হঠাৎ তেঁতুল আনতে বললে যে।
:- দরকার আছে, তোমাকে আনতে বলেছি তাই আনবে। এত প্রশ্ন করো না।
: আচ্ছা ঠিক আছে আনবো।

সিয়াম নীরাকে বিদায় দিয়ে অফিসে চলে আসে। কিন্তু সে বুঝতে পারে না হঠাৎ করে নীরা তাকে তেঁতুল নিতে বলল কেন? সিয়াম তার কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। তার কলিগ আরমান সাহেব হঠাৎ তার কেবিনে আসে।

= কি ব্যাপার সিয়াম সাহেব কাজে মন বসছে না কেন?
: এমনি।
= উহু, এমনি না, বাসা থেকে ঝগড়া করে এসেছেন নাকি? আরে বিবাহিত জীবনে এমন ঝগড়া একটু হয়ই, এতে মন খারাপ করার কিছু নেই।
: আরে না না ঝগড়া হয়নি।
= তবে কি হয়েছে? নিশ্চিন্তে বলুন।
: আসলে আজ অফিসে আসার সময় নীরা তেঁতুল আনতে বলল, তাও ১কেজি,কিন্তু ও তেঁতুল খুব বেশি খায় না। তাই ভাবছি এত তেঁতুল কেন আনতে বলল।

= আপনি কি কিছুই বুঝতে পারছেন না?
: নাতো!
= আরে আপনি বাবা হবেন ,জলদি মিষ্টি খাওয়ান।
: কি!! আপনি বুঝলেন কিভাবে?
= আরে বোকা মেয়েরা প্রেগনেন্ট হলে এতো টক খায়, আপনাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে হয়তো এখনো বলেনি।
: ধন্যবাদ আপনাকে, আপনি অপেক্ষা করুন আমি মিষ্টি আনছি। আজ আমি অনেক খুশি।
= থাক এখন না, পরে হবে সব, আগে আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে এই আনন্দের সময়টা কাটান। জলদি বাসায় যান।
: আচ্ছা যাচ্ছি। সিয়াম তেঁতুল আর মিষ্টি নিয়ে বাসায় যায়।

:- একি! তুমি এত জলদি বাসায় কেন? আর মিষ্টি কেন আনলে?
: বা’রে আমি বাবা হবো আর মিষ্টিমুখ করবো না?
:- কি?? তুমি বাবা হবে, মানে কি?
: মানে আমি বাবা আর তুমি মা হবে। তাইতো তুমি তেঁতুল খেতে চেয়েছ। আর অভিনয় করতে হবে না, আমি জেনে গেছি।
:- কিহ! কেউ বাবা মা হচ্ছে না। আমি টমেটো সস বানাবো তাই তেতু্ল আনতে বলেছি।
: কিহ! তাহলে আরমান ভাই আমাকে ভুল বলল?
:- কি বললে? তুমি এসব কথা তোমার কলিগকে বলেছ?
: হু তাতে কি হয়েছে?
:-কি হয়েছে মানে? কাল যখন অফিস যাবে তখন কি বলবে তাকে?

এখন পাবে তো লজ্জা? আমারই তো লজ্জা লাগছে। আজ তোমার খাবার বন্ধ আর আমার সাথে কথা বলাও বন্ধ। এই বলে নীরা রান্না করতে চলে যায়। সিয়াম বেচারা কিছুই বলতে পারে না। কিছুক্ষন পর হঠাৎ বৃষ্টি পড়তে থাকে। সিয়াম ভাবে এই সুযোগ, এখন যদি নীরাকে বৃষ্টিতে ভেজার কথা বলে রাগ ভাঙাতে যায় তবে হয়তো আর রাগ করে থাকবে না।

: নীরা
: ও নীরা sorry চলনা বৃষ্টিতে ভিজি, বাইরে কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে।
: বললাম তো sorry ,এমন ভুল আর হবে না। এই সুন্দর মুহুর্তটা আর আসবে না, চলো না বৃষ্টিতে ভিজি দু’জন। এবারের মতো ক্ষমা করো।
:- মনে থাকবে তো?
: হু হু, ঠিক থাকবে।
:- আচ্ছা চলো

এরপর তারা দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজতে যায়। তারা ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। এক সময় তারা ভিজতে ভিজতে একে অপরের খুব কাছে চলে আসে, এমন সময় হঠাৎ বজ্রপাত হয় এবং সেই বজ্রপাতে তারা দুজনেই মারা যায়। কিন্তু তারা না মরে যদি একে অপরকে জড়িয়ে ধরতো তবে গল্প টা খুব সুন্দর হতো। কিন্তু তা হয়নি। হয়তো পাশের কোনো বাড়ির কোনো ঘরের জানালা দিয়ে কোন সিঙ্গেল ছেলে এই রোমান্টিক দৃশ্য দেখছিল এবং তার কষ্টে জর্জরিত হৃদয় থেকে অভিশাপ বেরিয়ে আসছিল যার ফলে সিয়াম ও নীরা এখন মৃত। তাই কখনো ছাদে উঠে রোমান্স করবেন না, হয়তো এভাবে আপনিও মারা যেতে পারেন।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত