গার্লফ্রেন্ডের বার্থডে

গার্লফ্রেন্ডের বার্থডে

গত কয়েকদিন ফেসবুকে ঢুকলেই দেখি শুধু তাহেরি হুজুরের ডায়ালগ নিয়ে ভিডিও’র ছড়াছড়ি। খেয়াল করলাম হুজুরের ডায়ালগ শুনে শুনে আমার মধ্যেও সেটার প্রভাব পরে গেছে।

গার্লফ্রেন্ডের বার্থডে, সন্ধ্যায় আমাদের একটা রেস্টুরেন্টে “বার্থডে সেলেব্রেট” করার কথা ছিলো। আমি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বাসা থেকে বের হয়ে একটু সামনে যেতেই জ্যামে পরে গেলাম। কোন জানি মন্ত্রী যাচ্ছে তার জন্য রাস্তা আটকে রেখেছে।
এদিকে আমার গার্লফ্রেন্ড লাগাতার ফোন দিয়েই যাচ্ছে।অলরেডি দুবার ৫ মিনিট বলে থামিয়ে রেখেছি। এরপর আর ফোন রিসিভ করারই সাহস পাইনি।

অবশেষে আমি প্রায় সাড়ে আটটায় সেখানে পৌছালাম। স্বাভাবিক ভাবেই আমার গার্লফ্রেন্ড রেগেমেগে আগুন,আমাকে দেখেই রেস্টুরেন্টে সবার সামনে জোরে জোরে চিল্লাচিল্লি শুরু করেছে।রাস্তার অবস্থা অনেক বোঝানোর পরেও যখন ওর চিল্লাচিল্লি থামছে না তখন ফট করে আমি ফেললাম
“চিল্লায়া মার্কেট ফাওন যাইবো?বুঝলে বুঝ কথা,না বুঝলে তেজপাতা ”

বাসায় মেহমান এসেছে,এদিকে ভাবী এবং বোনরা সব বাহিরে।মা চা বানিয়ে আমাকে বললেন মেহমানদের দিয়ে আসতে।আমি চা নিয়ে গিয়ে দেখি মেহমান রা গল্প করছে।বেখেয়াল বসত তাদের সামনে বলে ফেললাম
“এই কথা কইয়েন না।একটু চা খাচ্ছি।চা খাবো?খাই একটু?আপনারা খাবেন?ঢেলে দেই?
মেহমানরা বেয়াদব,খচ্চর, ইডিয়টসহ আরও কিছু গালী দিয়ে চা না খেয়েই তখনি বাসা থেকে চলে গেলো।

এক্সাম দিচ্ছিলাম,পিছন থেকে এক বন্ধু ডাক দিয়ে একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলো। আমি উত্তর বলে দিলাম। বন্ধু খুশি হয়ে বললো,” থ্যাঙ্কিউ দোস্ত, তোর জন্য এবার একটা গার্লফ্রেন্ডের ব্যবস্থা করবোই। ”
আমি উত্তরে জোরে জোরে বলে ফেললাম ,” পাম দিস না,পাম দিস না। তোরার পোলাপানগো লাইগা আমি শ্যাষ।”
শব্দ করে কথা বলায় ডিউটি টিচার আমার খাতা ২০ মিনিট নিয়ে রাখলো।

এ মাসের বিদ্যুৎ বিল এখনো বাকি।মা কয়েকদিন থেকে আমি ছাড়া বাসার সবাইকে বলেছে বিল দিয়ে আসার জন্য,কিন্তু কেউ দিয়ে আসেনি।অবশেষে মা আমার হাতে বিলের কাগজ আর টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললেন বিল দিয়ে আসতে।

আমি কিছু না বলে তখনি বিল দিতে বের হবো মা ওইসময় বাসার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”দেখছো আমার ছোটছেলে কতো ভালো। তোমাদের সবার সাথে কয়েকদিন চিল্লাইয়াও বিল দেওয়াইতে পারলাম না।অথচ আমার ছোটছেলে কে বলার সঙ্গে সঙ্গে বিল দিতে যাচ্ছে।

আমিও প্রতুত্তরে বললাম,” তারপরও দেখবা একদল লোক আছে বলবে আমি ভালা না।আমিও বলি আমি তো ভালা না ভালা লইয়াই থাইকো”

আসলে বিল ৬৭৫ টাকা,ভাংতি না থাকায় মা এক হাজার টাকার নোট দিয়েছিলো।তাই বাকি টাকাটার লোভে আমি সঙে সঙে যাচ্ছিলাম পাছে অন্য কেউ বিল দিতে যায় সেই ভয়ে।

বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়ে দেখি সেখানে দুজন লোক ঝগড়া বাধিয়েছে। আমি যাওয়ার পরপরই ঝগড়া করতে করতে তারা মারামারি লাগিয়ে দিয়েছে।মারামারি ছাড়িয়ে আমি একজনকে ধরে এনে সাইডে নিলাম।

ওনাকে বললাম, “মারামারি তো করলেন। তো কষ্ট হইছে আমনেরার?মোটামুটি শরীরে একটা ভাব আইছে না?”
এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সেই লোক আমার পিঠে কয়েকটা বসিয়ে দিয়ে সেইম কথা আমাকে শোনাইলো।আমি মাইর খেয়ে চুপচাপ বিল দিয়ে চলে আসলাম।

সিরিয়াস মুহুর্তে ফান করা এবং কুল থাকার স্বভাবটা আমার অনেক আগে থেকেই।বাসায় বড়ো ভাইয়া আর মেজো ভাইয়ার মধ্যে ঝগড়া লেগেছে।পুরো বাসায় তুলকালাম অবস্থা ভাইয়া আর তাদের বউদের চিল্লাচিল্লি তে।আমি চুপচাপ তাদের ঝগড়া গিলছি আর মনে মনে হাসছি।

মেজো ভাইয়া অনেকক্ষণ রাগারাগি করে আমার পাশে এসে বসলো মাথা ঠান্ডা করার জন্য।সেই সময় আমি ভাইয়ার কানেকানে গিয়ে বললাম
“ভাই,পরিবেশ টা সুন্দর না? কোনো হইচই আছে?

এই কথা বলার পর থেকে গত দুদিন আমি বাড়িছাড়া, কবে নাগাদ বাসায় যেতে পারবো আল্লাহ মালুম।দোয়া করবেন তাড়াতাড়ি যেনো ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতে পারি।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত