কক্সবাজার সুগন্ধা সী-বীচের ছাতার নিচে একা একা বসে আছে অাখি। বসে বসে গালে হাত দিয়ে সমুদ্রের ঢেউ দেখছে সে আর বারে বারে ঘরির দিকে তাকাচ্ছে।
মনে হয় কারো জন্য অপেক্ষা করছে মেয়েটা। শান্ত মেয়েটার মুখে রাগের একটা ছাপ লেগে আছে সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সময় যত বাড়ছে শান্ত মেয়েটার মুখ খানি ততই রক্তবর্ণে রুপান্তরিত হতে লাগলো। নাহ আর পারছিনা, এই বলে আখি ফোন করে জাহিদের নাম্বারে। যথারীতি জাহিদ ফোন রিসিভ করে এবং বলে আমি আসতেছি, আর একটু অপেক্ষা করো। জাহিদের
সাথে আখির পরিচয় কলেজে। ওরা একজন আরেকজনকে খুবই ভালোবাসে। অনেক সময় ধরে প্রেম করছে ওরা। আজ দুজনের সী-বীচে দেখা করার কথা। আজ দেখা করার বিশেষ একটা উদ্দেশ্যও আছে বটে, কারন আজ ওরা বিয়ে করবে ভাবছে। পরিবারককে না জানিয়ে বিয়ে করবে।
কারন বাবা মা ওদের বিয়ে হতে দিবেনা। যাই হোক, বিয়ে ওরা করবেই। তাই আজ এতো উত্তেজিত আখি। আজকের দিনেও আসতে লেট করছে ছেলেটা। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেনো আখির আখি দুটো চেপে ধরে। আখি বুঝতে পরেছে জাহিদ ছাড়া আর কেউ না। চোখ থেকে আখি হাত সড়িয়ে ছাতার নিচ থেকে উঠে যায় আখি।
উঠে দূরে গিয়ে দাঁড়ায় মেয়েটা। রাগে মুখ খানা লাল হয়ে গেছে। ভয়ংকর বিষাক্ত সসাপের মত ফনা তুলে আছে। মমনে হচ্ছে এই বুঝি ছোবল দিবে। জাহিদ দেখে য় পেয়ে যায়। এগিয়ে যায় জাহিদ আখির কাছে।
– sorry বাবু রাগ করেনা। বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক করতে দেরী হয়ে গেছে।
– আমি জানিনা। তুমি এতো দেরী করবা কেনো????
তোমার সাথে আমার কোন কথা নাই। যাও সরো।
– আমায় বিয়ে করবা না??
– তোর মত গাঁধা কে কে বিয়ে করবে শুনি???
– আমি গাঁধা??? আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার বিয়ে করতে হবেনা। আমি দেখতেছি কি করা যায়।
এই বলে জাহিদ ছাতার নিচে বসে বসে আখির জন্য নিয়ে আসা Dairy milk চকলেটা খাওয়া শুরু করে দেয়। আর বলতে
থাকে আহ কি স্বাদ। আজ থেকে এটা আমি একাই খাবো।
আখি জাহিদের চকলেট খাওয়া দেখে দৌড়ে আসে। এসে জাহিদ কে মারা শুরু করে দেয়। এই তুমি আমার চকলেট খাচ্ছো ক্যান??
– তোমার চকলেট?? তুমি তো আমায় বিয়ে করবেনা। তাই তোমাকে আর চকলেট দিবো কেনো???
আমি আর ঐ মেয়েটা চকলেট খাবো এখন তোমার সামনে।
এই বলে জাহিদ দূরের একটা মেয়েকে ডাক দেয়।
আখি আর একটু রেগে যায়। রেগে গিয়ে বলে তোর চকলেট খায়ানো ছুটাচ্ছি তাই বলে জাহিদের কাছ থেকে চকলেটটা কেড়ে নেয় আর wrestling এর মত মারা শুরু করে জাহিদকে।
– আমি থাকতে তোর এসব কি।
তার একটু পর দেখা যায় আখির কাঁধে মাথা রেখে জাহিদ শুয়ে গল্প করছে। প্রেমের গল্প। মনে হচ্ছিলোনা একটু আগে এরা ঝগড়া করছিলো। আসলে আখি রাগ করলে জাহিদ এভাবেই তার রাগ ভাঙায়। চকলেট খুব ভালোবাসে আখি। সেটাকেই রাগ ভাঙানোর প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে জাহিদ। যাই হোক এতোক্ষনে প্রায় অনেক গুলা লিপস্টিকের দাগ পরে গেছে জাহিদের ঠোঁটে মুখে। একটু পরই বিয়ে। আর তর সইছেনা ওদের। তারপরই সময় চলে আসে বিয়ের। দুজনে কাজি অফিস যায়। বিয়ে করে ফেলে তারপর আবার বিকেল বেলা দুজন সী-বীচে বসে বসে ঢেউ দেখছে।
অনেক সময় পর জোয়ার শেষ হয়ে ভাঁটা নামতে শুরু করে। জাহিদ সমুদ্রে নেমে সেলফি তুলতে যায়। আখিও যায়
সাথে। একটা বড় ঢেউ এসে জাহিদ কে ভিজিয়ে দেয়। তাই জাহিদ ভাবে আরেকটু পানিতে নেমে একবারে সুন্দর
মতন সেলফি তুলবে। জাহিদের ফোনটি water proof ছিলো। তাই সে পানির একটু গভীরে চলে যায় সাঁতরে। আখি
দেখছিলো আর উঠে আসতে বলছিলো জাহিদকে। কিন্তু জাহিদের মাথায় ভূত চেপেছিলো। হঠাৎ একাটা বড় ঢেউয়ের তলাতে চাপা পড়ে জাহিদ। ঢেউ মুহুর্তেই টেনে নিয়ে যায় তাকে গভীর থেকে গভীরে। আখি চিল্লাপাল্লা শুরু করে দেয়। লাইফ গার্ড এগিয়ে আসে কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায়না জাহিদকে। সমুদ্রের অতল গভীরেই হারিয়ে যায় জাহিদ।
আখি নিজেও লাফিয়ে পড়ে সমুদ্রে। কিন্তু তাকে কাছেই ধরে ফেলে লাইফ গার্ড। জাহিদের জন্য কান্না করতে করতে এক রকম জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। প্রথম দিনেই নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে হারায় আখি। একরকম মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে আখি। আখির বাবা মা এসে আখিকে সমুদ্রের কাছ থেকে নিয়ে যায় বাসায়।
এরপর থেকে আখি প্রতিমাসের ২ তারিখে এই সুগন্ধা পয়েন্টে আসে এসে সেই সিটে বসে কান্নাকাটি করে।
সবাই কে জিজ্ঞেস করে আমার জাহিদকে দেখছেন আমার জাহিদকে দেখছেন? মানে বুঝা যাচ্ছে যে প্রায় পাগলের মত হয়ে গেছে মেয়েটা আখির এই কাহিনীটি আমাকে শোনাচ্ছিল এইসব ছাতাগুলোর মালিক। যেখানে বসে আখি কাঁদতেছিলো।
মালিক চাচা জানায় আমি সব দেখেছি সামনে থেকে।
মেয়েটার জন্য খুব মায়া হয় আমার। চাচার চোখে পানি দেখতে পেলাম। আমিও দেখলাম আমারও চোখে জল আভাশ। তাই চলে গেলাম মেয়েটির সামনে……কথা বলার জন্য….
আখি নামের সেই মেয়েটির সামনে যেতেই মেয়েটি আমাকে জাহিদ জাহিদ বলে জরিয়ে ধরলো।
কৈ ছিলে তুমি এতোদিন???
আমি জানতাম তুমি মরোনি। তুমি মরতে পারোনা।
আমি তখন কি করবো বুঝতে পারছিলামনা। হঠাৎ দেখি মেয়েটির বাবা চলে এসেছে তাদের মেয়েকে নেওয়ার জন্য। আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয় মেয়েটিকে।
আখির বাবা আমাকে বলে, কিছু মনে করোনা বাবা। এই বলে তারা চলে যেতে নেয়। আর আখি চিৎকার করে বলতে থাকে,”আমি জাহিদের সাথে থাকবো। আমি জাহিদকে ছাড়া যাবোনা”।
আর আমি হতবাকের মত মেয়েটির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি। কিছু একটা হয়ে গেছে আমার ভেতর সেটা ফিল করতে পারলাম। হঠাৎ দেখি আমার বন্ধুরা চলে এসেছে। এসে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। আমরা সবাই মিলে রাজশাহী থেকে কক্সবাজার বেড়াতে আসছি।
আজ অনেক বছর কেটে গেছে। তারপরেও মাঝে মাঝে মেয়েটিকে মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই চিৎকার, আমি যাবোনা, আমি জাহিদের কাছে থাকবো।