রাজকুমার ও নারঙ্গি কন্যার গল্প

রাজকুমার ও নারঙ্গি কন্যার গল্প

প্রাচীনকালে এক বাদশা ছিল। তাঁর কোনো সন্তানাদি ছিল না। অনেক চেষ্টা তদবির করেও কিছুতেই কিছু হলো না।

শেষ পর্যন্ত মানত করলো: যদি একটা ছেলে সন্তানের বাবা হয় তাহলে পানির একটা হাউজকে মধু দিয়ে পূর্ণ করবে

এবং আরেকটা হাউজকে পূর্ণ করবে তেল দিয়ে। যত ফকির গরিব আছে সবাই যত খুশি খাবে দাবে এবং নিয়ে যাবে।

খোদার হুকুমে তার মানত কবুল হলো এবং সে একটা ছেলে সন্তানের বাবা হলো। বাদশার আনন্দ তো আর ধরে না।

কী করবে না করবে ভেবে কূল পাচ্ছিল না। ছেলেকে ধাইমাদের কাছে দিয়ে দিলো ভালো করে লালন পালন করার জন্য।

তার খেলাধুলার জন্য যত রকমের খেলনা দরকার ছিল সবই সংগ্রহ করে দিলো। সন্তান ঠিকঠাকমতো আদর যত্নে বেড়ে উঠলো।

এভাবে দিন যেতে যেতে শাহজাদা আঠারো বছর বয়সে উপনীত হলো। একদিন বাদশা প্রাসাদের ভেতর পায়চারি করছিল।

হঠাৎ তার দৃষ্টি পড়লো ছেলের ওপর। কেমন লম্বা চওড়া এবং স্মার্ট লাগছে ছেলেকে। তাঁর মনে পড়ে গেল মানতের কথা।

মনে মনে বললো: আমি তো মানত করে এই সন্তানের বাবা হয়েছিলাম। কিন্তু সেই মানতের কথা বেমালুম ভুলে বসে আছি।

বাদশা তাড়াতাড়ি আদেশ দিলো প্রাসাদের বাইরে বিশাল দুটি হাউজ বানানোর জন্য। বাদশার আদেশে হাউজ বানানো হলো

এবং হাউজ দুটোর একটিতে মধু ঢালা হলো। মধুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল হাউজ। আরেকটি হাউজ ভর্তি করা হলো তেল দিয়ে।

তারপর ঢাক ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করে দেওয়া হলো: ‘বাদশা দুটি হাউজ ভর্তি করে মধু আর তেল রেখেছেন।

যার যত দরকার খেয়েদেয়ে নিয়েও আসুন’।

এই ঘোষণার পর সবাই বাদশার প্রাসাদের সামনে এসে যার যত খুশি খেয়েদেয়ে নিয়েও গেল।

একদিন এক বৃদ্ধ মহিলা এলো হাউজের কাছে। সে তার বাটিটা হাউজে ফেলার সময় বাদশার ছেলে ওই বৃদ্ধাকে দেখতে পেল।

বৃদ্ধার পিঠ কুঁজো গিয়েছিল। এ বয়সের বৃদ্ধা একটু বেঁকে যাওয়ায় শাহজাদা তাকে দেখে হেসে দিলো।

সে মজা করার জন্য ধনুকে একটি পাথর জুড়ে ছুঁড়ে মারলো। ওই পাথর গিয়ে আঘাত করলো বুড়ির বাটিতে।

বাটিটা ভেঙে গেল এবং বাটির তেল ছিটকে পড়ে গেল।

বুড়ি মাথা উঁচিয়ে বাদশার ছেলেকে দেখতে পেয়ে বললো: আমার মন সায় দিচ্ছে নো তোমাকে তিরস্কার করি, বদদোয়া দিই।

কেননা তুমি বাদশার একমাত্র সন্তান। তবে তুমি নারঙ্গি কন্যার ফাঁদের যন্ত্রণা ভোগ করবে।

শাহজাদা এরকম নাম শুনে থমকে গেল। নারঙ্গি কন্যা আবার কে! তার যন্ত্রণা কেন ভোগ করতে হবে তাকে! এসব ভাবছিল।

কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে সে বুড়িকে জিজ্ঞেস করলো: নারঙ্গি কন্যা কে আমি তো তাকে চিনি না। তুমি আমাকে একটু বলবে?

বুড়ি বললো: আমি তার সম্পর্কে কিছুই জানি না। যাও, যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস করো।

বুড়ির জবাব শুনে শাহজাদা হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে গেল তার মায়ের কাছে। মাকে জিজ্ঞেস করলো: নারঙ্গি কন্যা কে মা!

মা ভ্রু কুঁচকে ছেলের দিকে তাকিয়ে ভাবলো- ছেলে এটা কোত্থেকে শুনলো। ছেলেকে জিজ্ঞেস করতেই ছেলে সবকিছু খুলে বললো মাকে।

অবশেষে রানি বললো: বাবা! এরকম বলতে শুনেছি যে, অনেক দূরের এক শহরে নাকি একটা বাগান আছে। নারঙ্গি বাগান।

ওই বাগানে নাকি সবচেয়ে উন্নতমানের কমলা এবং মাল্টা পাওয়া যায়।

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ওই কমলা থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী কন্যার জন্ম হয়। কিন্তু শাহজাদা! এসব কথার কথা।

কেননা; এ পর্যন্ত যে-ই ওই নারঙ্গি কন্যার খোঁজে গেছে সে আর ফিরে আসে নি, এসেছে তাদের মৃত্যুর খবর।

শাহজাদা বুড়ির কথায় থমকে গেলেও এখন মায়ের কথা শুনে নারঙ্গি কন্যার পিছু নেওয়ার জন্য কৌতূহলী হয়ে উঠলো।

মাকে সে বললো: যে করেই হোক আমি যাবো এবং ওই কন্যাকে নিয়ে আসবো।

মা এখন অনুতাপ বোধ করতে লাগলো কেন সে ছেলেকে বলতে গেল। বললো: বাবা! এ কাজ খুবই ভয়ংকর। এ পর্যন্ত যারাই গেছে ফেরে নি।

তোমার চেয়ে অনেক শক্তিশালী বীর পালোয়ানও গিয়ে আর ফিরে আসে নি। কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না। ছেলে মানলোই না।

নাছোড়বান্দা ছেলে নারঙ্গি কন্যার জন্য অস্থির হয়ে পড়লো। মা অগত্যা বাদশাকে গিয়ে ছেলের অবস্থার কথা জানালো।

বাদশা ছেলেকে ডেকে যতভাবে সম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ছেলে বাবার কথা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলো।

বাদশাহ চিন্তায় পড়ে গেল। এই ছেলেকে কীভাবে দমানো যাবে ভাবতে লাগলো।

ছেলে যেহেতু যাবেই, তাই বাদশাহ বললো: ঠিক আছে, যাও! তবে তোমার সাথে কয়েকজন গোলামও নিয়ে যাও..।

কিন্তু ছেলে মানলো না। বললো একাই যাবে এবং নারঙ্গি কন্যাকে নিয়েই ফিরে আসবে।

বাদশাহ শেষ পর্যন্ত আস্তাবলরক্ষককে বললো দ্রুতগামী এবং সুঠামদেহী একটা ঘোড়া যেন ছেলেকে দেয়।

একটা খোরজিন নিয়ে সফরে যা যা প্রয়োজন সবই দিলো তার ভেতর। সবকিছু ঠিকঠাকমতো নেওয়ার পর শাহজাদা রওনা হলো।

যেতে যেতে তাদের শহরের বাইরে অনেকটা দূরে যাবার পর শাহজাদা দেখতে পেল এক বৃদ্ধ লোককে।

লোকটা তার সামনে এসে আবির্ভূত হলো। তাঁর চেহারা সুরত এককথায় নুরানি।

শাহজাদা অবাক হয়ে গেল কী করে এই বৃদ্ধ সামনে এসে হাজির হলো। বৃদ্ধ শাহজাদার সামনে এসে বললো: যুবক! ভালো থেকো! কোথায় যাও!

শাহজাদা বললো: যাচ্ছি নারঙ্গি বাগানে। সেখানকার নারঙ্গি কন্যাকে নিয়ে আসবো।

বৃদ্ধ বললো: ভালো হয় তুমি এখান থেকেই ফিরে যাও নিজের কাজকর্মে। এই পথে বিপদের পর বিপদ আছে।

জীবনটা ধ্বংস না করে ফিরে যাওয়াটাই ভালো।

শাহজাদা বললো: একথা অনেকেই বলেছে আমাকে। কিন্তু আমি যাবোই।

বৃদ্ধ বললো: ‘ঠিক আছে। আমার কথা যেহেতু শুনবেই না, তোমার সিদ্ধান্ত যেহেতু পাল্টাবেই না, তাহলে শোনো’।

এরপর বৃদ্ধ যা যা বললো শাহজাদাকে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ওই বনে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কী সেসব কথা।

নারঙ্গি কন্যা-২ বৃদ্ধ শাহজাদাকে বললো যতদূর তুমি এসেছো, ঠিকই এসেছো। এবার তোমাকে যেতে হবে ডান দিকে।

যেতে যেতে সামনে পড়বে একটা বন। বিশাল সেই বনে হিংস্র সব জন্তু জানোয়ারের বাস। তারা তোমাকে দেখতে পাবে।

চেঁচামেচি করবে। তোমার দিকে দাঁত খিঁচিয়ে এগিয়ে আসতে চাইবে। তুমি সেসব দিকে একদম তাকাবে না।

তোমার পথে তুমি এগিয়ে যাবে। একটা জিনিস শুধু খেয়াল রাখবে, সেটা হলো কোনোভাবেই তুমি পেছনে তাকাবে না।

বন পেরিয়ে যাবার পর অনেকটা পথ গেলে পড়বে একটা বাড়ি। ওই বাড়িতে একটা ঘরের চৌকাঠে দেখবে এক বৃদ্ধ দৈত্য বসে আছে।

তাকে জিজ্ঞেস করবে নারঙ্গি বন কোথায়? সে তোমাকে সুন্দর করে বাতলিয়ে দেবে।

শাহজাদা খুশি হয়ে গেল। বৃদ্ধের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পুনরায় পাড়ি জমালো।

যেতে যেতে বন না দেখতেই হিংস্র সব প্রাণী দাঁত বের করে এগিয়ে এলো তার দিকে।

শাহজাদা বৃদ্ধের কথামতো বিন্দুমাত্র ভড়কে না গিয়ে নিজের পথে এগিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরই পথে সেই বন পড়লো।

বনের ভেতর সেই হিংস্র জানোয়ারের হাঁকডাক। সবই নির্বিঘ্নে পেরিয়ে গেল শাহজাদা।

এভাবে বন পার হবার পর জানোয়ারের গর্জন বন্ধ হয়ে গেল। মনে মনে সে খুশি হলো এই ভেবে যে ভয়ংকর বিপদটা তাহলে কেটে গেল।

এবার তাই নিশ্চিন্তে এগিয়ে যাওয়া যাবে। যেতে যেতে দেখতে পেল বুড়োর বলে দেওয়া সেই ঘর।

ওই ঘরের দরোজায় বসে আছে বৃদ্ধ দৈত্য। এগিয়ে গেল সামনে এবং সালাম করলো।

দৈত্য বললো: এই ছেলে! কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত এই দৈত্যপুরিতে আসতে পারে নি।

তুই কী করে এলি? পরীদের হাত থেকে তুই যেহেতু বেঁচে আসতে পেরেছিস তার মানে তোর ভাগ্যটা ভালোই।

এতোসব বিপদ পেরিয়ে এসে কোথায় যেতে চাচ্ছিস?

শাহজাদা বললো: নারঙ্গি বনে যাবো। দৈত্য বললো: এ পর্যন্ত এসেছিস যেহেতু। তাই যদি আমার কথা ঠিকমতো শুনিস

এবং যদি সেসব ভুলে না যাস তাহলে অবশ্যই তুই নারঙ্গি বনে পৌঁছে যাবি। এই পথ ধরে সোজা চলে যাবি উপরে।

যেতে যেতে ওই পাহাড়ে পৌঁছলে দেখতে পাবি একটা কালো ঘোড়া। ঘোড়াটির লাগাম একটা গাছের সাথে বেঁধে রাখা আছে।

তুই তোর নিজের ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে গিয়ে ওই কালো ঘোড়াটার লাগাম খুলে দেবে এবং নিজের ঘোড়ার লাগাম গাছের সাথে বেঁধে রাখবে।

দৈত্যের দিকনির্দেশনা শুনছিলাম আমরা। শাহজাদাকে বলছিল কালো ঘোড়ার লাগাম খুলে দিয়ে নিজের ঘোড়ার লাগাম

গাছের সাথে বেঁধে রাখবে। তারপর ওই কালো ঘোড়ায় চড়বে। কালো ঘোড়া এক বছরের পথ বিদ্যুতের মতো নিমেষেই

পেরিয়ে যাবে এবং তোকে নারঙ্গি বনে নিয়ে পৌঁছিয়ে দেবে। তবে বনে পৌঁছার আগে মরুপ্রান্তরে বড় একটা প্রাণী শিকার করে

নিয়ে যাবে সঙ্গে করে। বনে পৌঁছার পর দেখবে মূল দরোজায় একটা অজগর সাপ ঘুমিয়ে আছে। যেন বনরক্ষক সে।

তোকে দেখলেই শিকার করা প্রাণীটা অজগরের সামনে ছুঁড়ে মারবে। অজগর যখন খেতে শুরু করবে তুই ঢুকে যাবি বনের ভেতর।

ভেতরে গিয়ে দেখবি কমলা আর মাল্টা গাছের সারি। একটার মাথা আরেকটার সাথে লাগানো।

প্রত্যেক গাছের গোড়ায় একেকটা দৈত্য বসে আছে। দ্রুত গাছে উঠে যাবি এবং যে কয়টা গাছে পারিস উঠে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি।

পথে যে বনটি পড়েছিল সেই বনে যেমন ভয় পাসনি তেমনি এখানেও ভয় পাবি না। যত হাঁকডাক, গর্জন তর্জনই হোক পেছনে তাকাবি না।

বাইরে এসেই কালো ঘোড়ার পিঠে উঠে বসবি। ঘোড়া তোকে দ্রুত নিয়ে যাবে যেখান থেকে এসেছিলি সেখানে।

তাড়াতাড়ি কালো ঘোড়াকে তার জায়গায় বেঁধে রাখবি। ঘোড়াকে গাছের সাথে বাঁধলে দৈত্যরা আর তোর নাগাল পাবে না।

শাহজাদা দৈত্যের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার দিকনির্দেশনামতো রওনা হলো নারঙ্গি বনের উদ্দেশ্যে।

পাহাড়ের ওপরে গিয়ে ঘোড়া পাল্টিয়ে চড়ে বসতেই সাঁই করে চলে গেল কোথায় কে জানে।

এতে দ্রুত চলছিল ঘোড়া, চোখও খুলতে পারছিল না সে। ঘোড়া একটা জায়গায় গিয়ে পৌছলে শাহজাদা লাগামে টান দিলো

এবং গতি থামিয়ে দেখলো সামনেই নারঙ্গি বনের প্রাচীর দেখা যাচ্ছে। নেমে একটা পাহাড়ি ছাগল শিকার করে নিলো

এবং অজগরকে খেতে দিয়ে ঢুকে গেল বনে। সুন্দর সারিবদ্ধ কমলা আর মাল্টা গাছে ধরেছে কমলা রঙের প্রচুর ফল।

গাছের গোঁড়ায় শুয়ে আছে একেকটা দানব। শাহজাদা দ্রুত একটা গাছে উঠে কমলা ছিঁড়তেই চীৎকার উঠলো-‘ফল ছিঁড়েছে,ফল ছিঁড়েছে’।

দৈত্যরা জেগে গেল। আড়মোড়া ভেঙে ওঠার আগেই আরও কয়েকটা ফল ছিঁড়ে শাহজাদা বিদ্যুৎ গতিতে নারঙ্গি বন থেকে বেরিয়ে গেল।

বেরিয়ে যাবার সময় পেছন থেকে শব্দ ভেসে আসছিল তার কানে: ফিরে এসো নৈলে মারা যাবে….।

শাহজাদার মনে পড়ে গেল বৃদ্ধ দৈত্যের পরামর্শ। সে একদম তাকালোই না পেছনে। মুহূর্তের মধ্যে কালো ঘোড়া পৌঁছে গেল

সেই গাছের গোঁড়ায় যেখানে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। ঘোড়া থেকে নেমে ওই গাছের সাথে আবার বেঁধে রাখলো কালো ঘোড়াকে।

আর তার ঘোড়াকে খুলে নিয়ে তার পিঠে চড়লো এবং ধীরে ধীরে পৌঁছে গেল বৃদ্ধ দৈত্যের ঘরের সামনে। সেই পথ দিয়েই

ফেরার পথে পড়লো ভয়ংকর বন। আবারও শুনলো ভয়ংকর সব জন্তু জানোয়ারের গর্জন। কিন্তু শাহজাদা আগের মতোই

সেসবে কান দিলো না, পেছনেও তাকালো না।

বন পেরিয়ে যেতে যেতে পথে পড়লো একটা ঝর্নাধারা। কলকল ধ্বনি তুলে বয়ে যাচ্ছে পানি। দুই তীরে সবুজের মেলা।

শাহজাদা বিশ্রাম নিতে সেখানে থামলো। পানিতে হাতমুখ ধুয়ে বসে পকেটে হাত দিয়ে বের করলো চমৎকার কমলাগুলো।

একটা কমলার খোসা ছাড়াতেই ভীষণ সুন্দরী এক কন্যা সূর্য রশ্মির মতো বেরিয়ে এসে বললো: রুটি…!

শাহজাদা তার খোরজিন থেকে রুটি এনে দিলো। ওই রুটি মুখে দিতেই নারঙ্গি কন্যা মাটিতে পড়ে গিয়ে মরে গেল।

বেচারার মনটাই ভেঙে গেল। আরেকটা কমলার খোসা ছাড়ালো। এবার আগেরটার চেয়েও সুন্দরী এক কন্যা বেরিয়ে

এসে বললো: পানি…! শাহজাদা পানি এনে দিলো এবং সেই পানি খাওয়ার সাথে সাথে এও মারা গেল।

এভাবে যতগুলো কমলা ছিল সবগুলো থেকেই সুন্দরী কন্যারা বেরিয়ে এসে মরে গেল।

একটামাত্র কমলা বাকি থাকলো। ওই কমলাটা আর ছুলতে চাইলো না সে। সেটা পকেটে নিয়েই ফিরে গেল শহরের দিকে।

শহরের কাছাকাছি পৌঁছতেই দেখা হলো সেই বুড়ির সাথে যে তাকে নারঙ্গি কন্যার যন্ত্রণা ভোগের কথা বলেছিল।

বুড়ি শাহজাদাকে বললো: কী খবর! নারঙ্গি বনে গেলি…? শাহজাদা সবকথা বুড়িকে খুলে বললো এবং একটি কমলা যে বাকি আছে সেকথাও বললো।

বুড়ি বললো: ‘তুই যদি চাস ওই নারঙ্গি কন্যা বেঁচে থাকুক তাহলে একটা কাজ করবি’।

শাহজাদা হন্তদন্ত হয়ে জানতে চাইলো: ‘কী করবো…. বলো বলো, তুমি যা বলবে আমি তাই করবো’।

বুড়ি বললো: ওই কন্যা বেরিয়ে এসে যা চাইবে তুই ঠিক সেটা ছাড়া অন্য কিছু একটা দিবি। রুটি চাইলে পানি দিবি, পানি চাইলে রুটি, বুঝলি?

শাহজাদার চোখে মুখে আনন্দের ছাপ ফুটে উঠলো। মনে হলো সকল কষ্ট আর উৎকণ্ঠা কেটে গেল।

নারঙ্গি কন্যা-৩ শাহজাদা নারঙ্গি কন্যার জন্য রাজকীয় পোশাক নিয়ে এসে দেখে অপূর্ব সুন্দরী কন্যা বিশ্রীরকম কালো হয়ে গেছে

এবং তার লম্বা সুন্দর চুলগুলোও নেই। আসলে নারঙ্গি কন্যাকে মেরে প্রতিবেশীর দাসী নারঙ্গি কন্যার ভান করছিল।

কন্যার রক্ত থেকে জন্ম নিয়েছে একটা কমলা গাছ। শাহজাদা বুঝে উঠতে পারছিল না।

কালো দাসী বলছিল সূর্যতাপে তার রং কালো হয়ে গেছে আর ঝড়ে উড়ে গেছে লম্বা চুল। শাহজাদা এখন রাজকীয় পোশাক হাতে দাঁড়িয়ে আছে।

কন্যার রক্ত থেকে জন্ম নেয়া কমলা গাছটি রাজপ্রাসাদের বাগিচায় লাগালো। শাহজাদা রাজকীয় পোশাকটা এখন

এই কৃষ্ণ নারীকে দেবে কি দেবে না-ভাবছিল। মনে মনে রাগই হচ্ছিল তার। এতো কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে

অস্বাভাবিক অভিযান চালিয়ে নারঙ্গি বনে গিয়ে শেষ পর্যন্ত এই কৃষ্ণ সুন্দরী…! এই ছিল তার ভাগ্যে!

বাবা মা তাকে কত্তো করে নিষেধ করেছিল, এখন তাঁদেরকে কী বলবে সে! নির্ঘাৎ বিদ্রূপ করবে তাকে।

নারঙ্গি কন্যা জয়ী বীর এখন উপহাসের পাত্রে পরিণত হবে সবার। তবে মনে মনে সূক্ষ্ম একটা আশা হলো

এই যে রোদ থেকে ছায়ায় কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো আগের মতোই নারঙ্গি কন্যার স্বরূপ ফিরে পাবে। উপায়ন্তর না দেখে তাকে নিয়েই এলো প্রাসাদে।

এদিকে কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল নারঙ্গি কন্যার রক্তে সবুজ হয়ে ওঠা কমলা গাছটি বেশ বড়োসড়ো হয়ে গেছে।

একটু জোরে বাতাস এলেই তার কান্নার সুর উঁচু হয়ে উঠতো। কৃষ্ণ দাসী ভাবলো এই গাছটি আবার কন্যায়

রূপ নিয়ে নিজের অধিকার ছিনিয়ে নেয় নাকি! এই চিন্তা করে কৃষ্ণদাসী শাহজাদার দিকে তাকিয়ে বললো: একজন মিস্ত্রিকে খবর দাও!

আমার জন্য একটা খাট তৈরি করতে হবে। শাহজাদা বুঝে উঠতে পারলো না কৃষ্ণদাসীর মাথায় কোন দুর্বুদ্ধি কাজ করছে।

মিস্ত্রিকে ঠিকই খবর দিলো এবং দেখতে চাইলো কৃষ্ণদাসী তাকে কী ফরমায়েশ করে।

মিস্ত্রিকে দাসী বললো: শাহজাদা রুমের দরোজার পাশে যে কমলা গাছটি আছে ওই গাছটি সমূলে কেটে একটা খাট যেন বানায় তার জন্য।

মিস্ত্রি গাছটা শেকড়সুদ্ধ তুলে নিয়ে চললো তার দোকানে। কিন্তু যখনই ফালি করতে যাবে তখনই গাছের ভেতর থেকে কান্নাধ্বনি উঠলো।

মিস্ত্রি থ হয়ে গেল। ঠিক সেই মুহূর্তে শাহজাদাকে নারঙ্গি কন্যার যন্ত্রণার শাপ দেওয়া বুড়ি এসে হাজির হলো

এবং কমলা গাছের একটা শিস চেয়ে নিয়ে তা দিয়ে একটা মাকু বানালো। উদ্দেশ্য হলো তার মাকু অকেজো

হয়ে গেলে এই মাকু সে ব্যবহার করবে। মাকুটা বানিয়ে বুড়ি তার ঘরের ভেতর একটা তাকে রেখে দিলো।

এরপর কেটে গেল বেশ কিছুদিন। এরিমাঝে বুড়ি একদিন বাজারে গিয়েছিল কিছু পশমি সূতা কেনার জন্য।

সেই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বুড়ি বাজারেই ছিল। এরপর যখন সে বাসায় ফিরে এলো তার চোখ তো ছানাবড়া হয়ে গেল।

এলোমেলো রেখে যাওয়া ঘর কীরকম পরিপাটি করে সাজানো। ঘরদোর, থালা-বাসন তকতকে ঝকঝকে সব।

ঘর যেন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ঝাড়ু দেওয়া হয়েছে। বিন্দুমাত্র বালিও নজরে পড়ছে না। ঘরের মেঝে

এবং বারান্দায় পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রাখা। কী আশ্চর্য ব্যাপার! বুড়ি তো আঙুল কামড়ে পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে।

ভাবছে কে এলো তার ঘরে আর কে-ই বা এতো সুন্দর করে তার ঘর সাজালো। কার হাত পড়েছে তার ঘরে। যতই ভাবলো কিছুই আঁচ করতে পারলো না।

দুদিন পর আবারও বুড়ি গেল বাজারে। আবারও বাজার থেকে ফিরে এসে দেখে একই অবস্থা। ঘরদোর সুনসান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।

কিন্তু কে আসে তার ঘরে? কে সবকিছু পরিষ্কার করে রেখে যায়? বুড়ির মাথায় কিচ্ছু ধরে না।

মনে মনে ভাবে কোনো পরীটরি তার অনুপস্থিতিতে এসে এ কাজ করে যায় না তো আবার? বুড়ি সিদ্ধান্ত নেয় যে করেই হোক

এই রহস্যের জাল তাকে উন্মুক্ত করতেই হবে। এরপর কয়েক দিন কেটে গেল। বুড়ি একদিন তার শাল আর মাথার হ্যাট পরলো

বাইরে বের হবার জন্য। ঘরের দরোজো জোর শব্দ করে আটকালো। উদ্দেশ্যটা হলো সে যে ঘরের দরোজা লাগিয়ে চলে গেছে

সেটা যাতে আশেপাশে কেউ থাকলে বুঝতে পারে। দরোজা লাগানোর পর বাইরে চলে গেল বুড়ি।

বুড়ি চালাকি করে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে দেখতে চাইলো কে আসে তার ঘরে। আর কে এতো সুন্দর করে তার ঘর দোর

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রেখে যায়। চোখ কান সজাগ রেখে কিছুক্ষণ লুকিয়ে থাকার পর বুড়ি তার ঘরের দরোজা খোলার শব্দ শুনতে পেলো।

বুড়ি কৌতূহলী হয়ে উঠলো। সতর্কতার সাথে পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল দরোজার কাছে।

খানিক থেমে হঠাৎ করে দরোজা খুলেই ঢুকে গেল ঘরের ভেতরে। ঘরের ভেতরে গিয়েই বুড়ি তো হতবাক।

মানুষ কতোটা সুন্দর হতে পারে? কল্পনার তুলিতে এঁকেও যতোটা সুন্দর মানুষের ছবি দাঁড় করানো যায় তারচেয়েও

সুন্দর একটা মেয়ে বুড়ির ঘর পরিষ্কার করছে। ওই সুন্দরী কন্যার শরীর থেকে যেন বেরুচ্ছে সূর্যের কিরণ। এতো সুন্দর মানুষ হতে পারে!

বুড়ির মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছিল না। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছিল মেয়েটির অপরূপ সৌন্দর্য। এদিকে বুড়ি হতবাক।

অপরদিকে মেয়েটিও বুড়িকে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। কী বলবে বা কী যে করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না।

বুড়ি মেয়েটার এই বেহাল অবস্থা দেখে তারদিকে এগিয়ে গেল এবং মেয়ের মাহ হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো: তুমি কে মা!

কেন তুমি আমার ঘরদের পরিষ্কার করছো?

মেয়েটা এবার তার জীবনের সকল ঘটনা বুড়ির কাছে খুলে বললো। সে কে, কোত্থেকে এসেছে, কীভাবে এসেছে ইত্যাদি।

নারঙ্গি কন্যার কথা শেষ হবার পর তাকের ওপর রাখা সূতোর মাকুটা ফেটে গেল। বুড়ি বললো যে নারঙ্গি কন্যাকে তার খুব ভালো লেগেছে।

তাকে সে তার মেয়ে বানাতে চায় এবং মেয়ের সব সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করে দেবে সে।

সেইদিন থেকে বুড়ি যেন এই পৃথিবীতেই নতুন জীবন ফিরে পেলো। বুড়ি তো ঘর থেকে বেরুতেই চায় না এখন। সারাদিন মেয়ের পাশেপাশে থাকে।

এমনকি রাতেও চেরাগ জ্বালিয়ে মেয়ের কাছে বসে থাকে। এই গল্প সেই গল্প বলে বলে সময় কাটায়।

এদিকে শাহজাদা আর কৃষ্ণ দাসীর দিনকাল নষ্ট ঘড়ির কাঁটার মতো আটকে ছিল। শাহজাদা নারঙ্গি কন্যার চিন্তায় বিভোর।

কীভাবে তাকে ফিরে পাওয়া যায় সেই পন্থা নিয়ে ভেবে ভেবেই কাটিয়ে দিচ্ছে দিনরাত। কোত্থাও যায় না সে, প্রাসাদেই থাকে।

এভাবে প্রাসাদে বসে থাকতে থাকতে সময় কাটছিল না শাহজাদার। নিজের প্রতি, পৃথিবীর প্রতি কেমন যেন একটা

নিঃস্পৃহ ভাব এসে গেল তার মনে। বিরক্ত হয়ে উঠলো সে। তার বাবা মাও বুঝতে পারছিল না ছেলের কী হয়েছে।

কোন দু:খে শাহজাদা মনমরা হয়ে আছে কে জানে। সুতরাং বাদশাহ এবং তাঁর স্ত্রী বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী করবেন, না করবেন।

তারা ঠিক করলেন হেকিমকে ডেকে আনবেন ছেলের চিকিৎসার জন্য।

নারঙ্গি কন্যা- শেষ পর্ব শাহজাদা নারঙ্গি কন্যাকে হারিয়ে মনমরা হয়ে ছিল। কোনোকিছুতেই তার মন বসছিল না।

বাদশাহ এবং তাঁর স্ত্রীও বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী করবেন, না করবেন। তারা ঠিক করলেন হেকিমকে ডেকে আনবেন

ছেলের চিকিৎসার জন্য এবং তাই করলেন। হেকিম এসেই শাহজাদাকে দেখেশুনে বাদশাকে গিয়ে বললো: শাহজাদার চিকিৎসার জন্য

স্বচ্ছ কাঁচের একটা চেইন তৈরি করতে হবে এবং সেই চেইনটা শাহজাদার গলায় পরিয়ে দিতে হবে। চেইনটা গলায় পরিয়ে দিলেই তার

সকল বিষণ্ণতা কেটে যাবে, ফ্রেশ হয়ে উঠবে শাহজাদা। বাদশা তাঁর আশপাশের মন্ত্রীদেরসহ সবাইকে ডেকে পাঠালেন। সবার সাথে

পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন শহর জুড়ে ঢোল পিটিয়ে এলান করে দেবেন যাতে এ কাজে পারদর্শীরা প্রাসাদে এসে যোগাযোগ করে।

বাদশার আদেশে এলানকারী দল ঢোল পিটিয়ে শহরের বাজারে রাস্তাঘাটে অলিতে গলিতে ঘোষণা করে দিল: কাঁচের স্বচ্ছ চেইন যে

বানাতে পারবে সে যেন চেইন বানিয়ে প্রাসাদে নিয়ে আসে এবং শাহজাদাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায়। নারঙ্গি কন্যা এবং বুড়িও এই

ঘোষণা শুনলো। নারঙ্গি কন্যা বুড়ির দিকে তাকিয়ে বললো: ‘তুমি গিয়ে বলো যে আমি বানাতে জানি। তবে শর্ত হলো আমাকে একটা

নিরিবিলি জায়গা আর একটা পিওর আয়না দিতে হবে’।

বুড়ি প্রাসাদে গিয়ে তাই বললো। শাহজাদার রুমের পাশেই একটা খালি জায়গা ছিল। খাঁটি আয়না একটা আনা হলো এবং বুড়িকে দেওয়া

হলো। বুড়ি ওই আয়না আর নারঙ্গি কন্যাকে উন্মুক্ত উঠোনে নিয়ে গেল।

অপরদিকে শাহজাদাকে খবর দেওয়া হলো যে হেকিম বলেছে, তার চিকিৎসা হলো কাঁচের চেইন বানিয়ে গলায় দেওয়া। এখন ওই চেইন

উঠোনে বানানো হবে। শাহজাদা একথা শুনেই সবকিছু ফেলে রেখে দৌড়ে উঠে গেল প্রাসাদের ছাদে। ছাদের এক কোণে লুকিয়ে দেখতে

চাইলো বুড়ি কী বানায় তার জন্য। কিছুক্ষণ পরই বুড়ি আর এক মেয়ে এলো উঠোনে। বুড়িকে দেখে সে চিনতে পারলো। সেইসাথে

মেয়েটাকেও তার যেন চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। মেয়ে তার সামনে আয়নাটা ধরে বিগত জীবনের ঘটনা বর্ণনা করতে লাগলো।

শাহজাদা মনোযোগের সাথে ওই ঘটনা শুনতে লাগলো। শুনতে শুনতে এ সময় দেখলো মেয়ে তো শাহজাদারই জীবন কাহিনী বলছে।

কী করে নারঙ্গি বনে গেছে ইত্যাদি।

শাহজাদা সবকিছু ফেলে রেখে মেয়ের কথায় পরিপূর্ণ মনোযোগ দিলো। মেয়ে বলতে বলতে একসময় কৃষ্ণদাসীর গাছে ওঠা

এবং তার মাথা কেটে নদীতে ফেলে দেয়ার কথা বললো। আরও বললো তার কাটা মাথা থেকে ঝরে পড়া রক্ত থেকে সবুজ কমলা

গাছ জন্ম নিলো। ধূর্ত কৃষ্ণদাসী সবকিছু বুঝতে পেরে নিজেকে নারঙ্গি কন্যা বলে মিথ্যা দাবি করলো। শাহজাদা যখন ওই কমলা গাছ

নিয়ে এলো নিজের প্রাসাদে কৃষ্ণদাসী তার দ্রুত বৃদ্ধি দেখে আদেশ দিলো গাছটি কেটে তার জন্য খাট বানাতে। গাছ ফার্নিচারের

দোকানে নেওয়ার পর বুড়ি ওই গাছের একটা অংশ তার বাসায় নিয়ে যায় এবং সেই অংশ থেকেই তার পুনর্জন্ম হয়।

শাহজাদা ওই মেয়ের পুরো কাহিনী শুনে কী করে তাকে এখন প্রাসাদে নিয়ে যাবে সেই চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে পড়লো। দেরি সহ্য হচ্ছিল না তার।

ছাদ থেকে দ্রুত নেমে এক গোলামকে বললো তার বাবা মাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে আসতে। বাদশা তার স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে এলো।

ওই মেয়েকে দেখে বিস্মিত হয়ে গেল তারা, এতো সুন্দরী মেয়ে তারা এর আগে আর কোনোদিন দেখে নি।

শাহজাদা সবকিছু তার বাবা-মাকে খুলে বললো। নারঙ্গি কন্যা এবং তার রূপের কথা যখন প্রাসাদে পৌঁছলো, হেরেমের সকল

নারী বেরিয়ে এসে ওই নারঙ্গি কন্যাকে দেখে হতবাক হয়ে গেল। এতো সুন্দর মানুষ হতে পারে! এতো রূপবতী!

যে-ই দেখে সে-ই আর চোখ ফেরাতে পারে না।

এদিকে বাদশা দেখলো তাদের ছেলে অর্থাৎ শাহজাদা বেশ খুশি। তার সকল বিষণ্ণতা কেটে গেছে এবং আনন্দে সে যেন আত্মহারা।

বাদশা এবং তার স্ত্রী ছেলের আনন্দ দেখে ভীষণ খুশি হয়ে গেল। সাথেসাথে আদেশ দিলো সমস্ত শহরকে যেন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।

সারা শহরজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। ঝিকিমিকি বিচিত্র রঙের আলোকসজ্জা যেন মানুষের মনেও আনন্দের রঙ মেখে দিলো।

চারদিকে শুধুই আনন্দ আর আনন্দ। সাতদিন সাতরাত ধরে আনন্দ উৎসবে মজে থাকলো শহরবাসী।

উৎসবের আমেজ আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল যখন সপ্তম দিনের মাথায় নারঙ্গি কন্যার সাথে শাহজাদার বিয়ের আয়োজন হলো।

বিয়ের উৎসব আর আনন্দের ভরা আমেজের ভেতর শাহজাদা আরেকটি কাজ করলো।

সবকিছুর আগে শাহজাদা কৃষ্ণদাসীকে ডেকে পাঠালো। তাকে বললো: “দ্রুতগামী ঘোড়া চাও নাকি তীক্ষ্ণধার তলোয়ার”।

কৃষ্ণদাসী বললো: “তীক্ষ্ণধার তলোয়ার থাক আমার জানের শত্রুর জন্য, আমি দ্রুতগামী ঘোড়াটাই চাই”।

শাহজাদা আদেশ দিলো: অবিলম্বে এমন একটা দ্রুতগামী ঘোড়া নিয়ে আসো যাকে নিয়ন্ত্রণ করা দায়!

শাহজাদার আদেশে দ্রুতগামী একটা ঘোড়া নিয়ে আসা হলো। কৃষ্ণদাসীর চুলের সাথে ওই ঘোড়ার লেজ বেঁধে দেওয়া হলো।

তারপর ঘোড়াটাকে ছেড়ে দেওয়া হলো বিয়াবান বা জনমানবশূন্য উষর মরুতে।

অপরদিকে বৃদ্ধা মহিলাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে প্রাসাদে নিয়ে গেল।

প্রাসাদে যত নারী ছিল সবাই শ্বেতকেশী বৃদ্ধাকে যথাযোগ্য সম্মান দিলো। আর শাহজাদা এবং নারঙ্গি কন্যা শুরু করলো

তাদের সুখ ও শান্তিময় দাম্পত্য জীবন।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত