ভুল বুঝেছো

ভুল বুঝেছো

দেশ উন্নত হচ্ছে, বদলে যাচ্ছে মানুষ।দিনকে দিন মানুষ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠতেছে।প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ চলার পথে সবকিছুতেই প্রযুক্তি ব্যাবহার করতেছে।মোবাইল,ল্যাপটপ, কম্পিউটারের মাধ্যমে মানুষ নানা ধরনের কাজ করতেছে, অবসর সময়ে ইন্টারনেট ব্যাবহার করছে।বর্তমানে অনেক মানুষ ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ব্যাবহার করে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করছে। ভার্সুয়াল জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। সারা বিশ্বের মানুষ ফেসবুক ব্যাবহার করে বন্ধু বান্ধব কিংবা মনের ভাব, ছবি আপলোডের মাধ্যমে উপভোগ করতেছে। তেমনি ফেসবুকে দুই জনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির একটা রোমানঞ্চর কাহীনি নিয়ে আমার এই গল্পের শুরু।

এস এস সি পাশ করেই বাড়ি থেকে ১৫ কিঃমিঃ দুরে শহরের একটা নামকরা কলেজে ভর্তি হয়েছি। প্রথম দিন কলেজ গিয়েই চোখে পড়লো একটা ফুটফুটে মেয়ে সামনের ব্রেন্চে বসে আছে। আমি একটু তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে দেখতে বেশ সুন্দর তবে তাকে দেখেই বুঝে গেছিলাম সে চঞ্চল প্রকৃতির মানুষ। সে যেন স্থির থাকেই না। কথা বার্তা চলার ভঙ্গিমা চঞ্চল প্রকৃতির। প্রথম দিন কলেজে আমি তার দিকে অনেক বার দেখেছিলাম। সে দেখেছে কিনা সেটা জানি না আর জানার চেষ্টাও করি নাই।

দুই সপ্তাহ কলেজ যাওয়ার পর বুঝলাম সে ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। আর আমার কথা বলতে গেলে ওর তুলনায় পড়ালেখায় একেবারেই কম। তখন ভাবলাম ও তো পড়ালেখায় ভালো ওর দিকে না তাকানো টাই ভালো। কারণ পরে যদি কিছু উল্টা পাল্টা মনে করে। এভাবেই যেন দিন পার হয়ে যাচ্ছিলো। আমি আমার মত কলেজ যেতাম আর সে তার মত। তাকে কখনোই কথা বলার চেষ্টাও করিনি।

গল্পের পাঠকরা হয়ত মনে করতেছে আমি সেই মেয়েটার প্রেমে পরে গেছি। না আপনারা ভুল ভাবতেছেন আসলে আমার তাকে একটুও ভালো লাগেনি। আর লাগবেই বা কেন আমার তো প্রিয় মানুষটিকে আমি স্কুলে থাকতেই পেয়েছি, প্রায় দুই বছর ধরে তার সাথে আমার সম্পর্ক। সে আমায় তার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে, আর ঠিক ততোটাই আমি তাকে ভালোবাসি।যাই হোক আমার প্রেমের কথা না বলে আসল কথায় আসি।

আমি তার দিকে তাকিয়েছিলাম কারণ তাকে দেখলেই মনেহত এ যেন আমার নিজের বোন। তাকে মনে প্রানে আমি বোনের মর্যাদা দিয়েছিলাম। বেশ কয়েকদিন তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু কথা বলতে গিয়ে ভয় পেয়ে চলে আসতাম। প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আমি প্রথম তার সাথে কথা বলি আমার রেজাল্ট কার্ড দেওয়ার সময়। তখন মনে মনে একটু খুশি হয়েছিলাম যা হোক আমার বোনের সাথে তো আমি কথা বলতে পেরেছি।

হঠাৎ কোন এক কারণে আমার কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় অনেক দিন আমি কলেজ যাইনি। তার সাথে আর আমার দেখাও হয়নি। একদিন ফেসবুকে আমি দেখলাম একজন আমায় বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠিয়েছে। নাম ছিলো ইংরেজিতে সানজিদা রেনু। তার প্রফাইলে গিয়ে দেখলাম কলেজ আমাদের টায় দেওয়া আছে। তখনি বুঝে গেছি এটা তো আমার সেই বোনটা।তখন নিশ্চিত করলাম। পরের দিন দেখলাম রেনু আমায় ইংরেজীতে hi পাঠিয়েছে। তখন আমিও রিপেলে দিলাম। অনেক্ষন তার সাথে অানুসাঙ্গিক কথা গুলো হয়েছিলো, এক পর্যায়ে দেখলাম রেনু ফেসবুক থেকে বেরিয়ে গেছে। তখন আমিও বেরিয়ে আসলাম।

পরের দিন আবার আমি রেনুকে নক করলাম সে সাথে সাথেই রিপেলে দিলো। বেশ অনেক্ষন তার সাথে কথা বললাম তাকে আমি জিগ্যেস করলাম আপনি এত চঞ্চল কেন? সে বললো কই না তো! তখন আমি তাকে বুঝিয়ে বললামম আপনি এরকম। তখন সে বললো হ্যা একটু চঞ্চল আমি। তার পর দুজনে আরো কিছুক্ষন কথা বললাম। তখন থেকে যখনি রেনুকে সক্রিয় দেখতাম ঠিক তখনি তাকে নক করতাম সেও রিপেলে দিতো।

এভাবেই যেন অনেক দিন কেটে গেলো। তাকে আমি সবসময় হাসানোর চেষ্টা করতাম। মাঝে মাঝে আমার কথা শুনে রেনু হেসে ফেলতো। এই তো সেদিনের কথা তাকে জিগ্যেস করলাম খাওয়া করেছো সে বললো না খাইনি, আমি বললাম পেট ব্যাথা করবে তারাতারি খাওয়া করো, সে বললো না পেট ব্যাথা করবে না! তখন আমি বললাম ব্যাথা কি তোমায় বলে গেছে যে ব্যাথা করবে না, না খেয়ে থাকো। এটা পরেই সে হি হি করে হাসতে শুরু করলো।

ঠিক এভাবেই আমি তাকে প্রতিটা দিন হাসাতাম। কিন্তু সে হয়ত মনে করেছিলো আমি তাকে ভালোবাসি তাই সে আমায় একটু এরিয়ে চলতো। একদিন আমি তাকে মেচেছ দিলাম ওই ম্যাডাম কেমন আছো? সে রিপেলে দিলো কে ম্যাডাম? তখন রিপেলে দিলাম তুমি। তারপর সে না পাঠিয়ে দিয়ে আমায় ফেসবুকে ব্লক করে দিলো।

আমি তাকে রিপেলে দেওয়ার সময় দেখি ব্লক দিছে মেচেছ You can’t reply this conversation এটা দেখেই আমি হতবাক হয়ে দারিয়ে রইলাম। ভাবলাম সে কেন আমায় ব্লক দিলো। অনেক্ষন ভেবে বুঝতে পারলাম ম্যাডাম কথাটাতে সে মাইন্ড করেছে এবং সে ভেবেছে আমি তাকে ভালোবাসি তাই সে ব্লক করে রেখেছে।

কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তাকে আমি সয়তানি করে ম্যাডাম লিখে দিয়েছিলাম সেটা সে অন্য কিছু ভেবে আমায় ব্লক দিয়েছে।গল্পের পাঠক হয়ে আপনিই ভাবুন তো যখন আমি ম্যাডাম দিয়েছিলাম তার কি উচিৎ ছিলো না যে লেখাটা পরে একটু ভেবে দেখার। লেখা পরে ভুল বুঝে ব্লক দিয়ে দেওয়াই যেন মস্ত বড় একটা কাজ সেটা ভেবেছে রেনু।

আমি অনেক জনের কাছে শুনেছি মেয়েরা নাকি সবসময় এক লাইন বেশি বোঝে। আজ সেটা একেবারেই বুঝে গেছি। তাকে বোন হিসেবে মানতাম আর সে মনে করতো আমি তাকে ভালোবাসি আরো কত কি।

ঠিক এভাবেই আমাদের মধ্যে ভাই বোনের মিষ্টি সম্পর্ক একটু ভুল বোঝাবুঝির কারণে নষ্ট হয়ে যায়। তবে আমাদের উচিৎ আগে ভালো মত করে বুঝে তারপর অন্য কিছু ডিসিশন নেওয়া। রেনু চাইলেই পারতো ম্যাডম কথাটার মানে বের করতে। সে সাথে সাথে নেগেটিভ মাইন্ডে নিয়েছে বিধায় ভাই বোনের একটা মিষ্টি সম্পর্ক মাঝ পথেই ভেংগে গেছে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত