অভিনয়

অভিনয়

তিথিকে রাতে কল করতে মানা।
রাতে সে ঘুমিয়ে পড়ে।
পিয়াস ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামায় না তেমন।
ইদ্যানীং ক্লাস আর প্রাকটিক্যালের ঝামেলায় শ্বাস নেওয়ার ফুসরত মেলে না।
ফোন দিয়ে তাই কথাও তেমন বলে না।
কিন্তু তিথিকে ফোন দিলে বিজি দেখায়।
পিয়াসের ব্যাপারটা খারাপ লাগে।
দুই সপ্তাহ পরঃ পিয়াসের পরীক্ষা শেষ।
প্রায় কয়েকদিন দশ পনেরো মিনিটের বেশি কথা হয়নি।
আজ থেকে তিথিকে অনেক সময় দিতে পারবে।
ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হতে হবে তাকে।
তারপর একটা জব।
নিজের পায়ে দাঁড়ানো।

সব পাগলীটার জন্যই তো।
আগে প্রতিদিন সকালে তিথি ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙাতো।
রোজ বিকেলে ঘুরে বেড়াতো এখানে সেখানে।
কিন্তু মেয়েটা হয়তো রাগ করেছে ভেবে
তিথির জন্য একটা গোলাপ আর টেডি পাঠিয়ে দেয়।
গিফট মেয়েটা নেয়।
ফোন দিয়ে দায়সারা ভাবে বলেঃ
থ্যাংকস।
কাজ আছে পরে ফোন দিবো।
এবার খানিকটা দ্বিধা কাজ করে পিয়াসের মনে।
কয়েকদিন পরঃ
সকাল ১১ টাঃ
পিয়াস খুব সুন্দর করে শার্ট আয়রন করেছে।
নীল রঙের শার্ট।
তিথির পছন্দের রঙ।
পকেটে যথেষ্ট টাকা।
আর মুভিসহ আছে আরো অনেক প্লান।
কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকতেই দেখে তিথি
কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।
কলেজ গেটের সামনে একটা গাড়ি এসে থামে।
প্রথমে ভেবেছিলো তিথিদের নিজের।
কিন্তু ধাঁধাঁয় পড়ে যায় সাথের ছেলেটাকে দেখে।
কোথায় দেখেছে?
মনে পড়ে ফেসবুকে ছেলেটার সাথে চ্যাট করতো তিথি।
খানিকটা বেশি মাখামাখি করে কথা বলতো দুজনই।
তিথিই বলেছে তিথির ভাই হয় নাকি ছেলেটা।
প্রথমেই ডিস্টার্ব না করার সিদ্ধান্ত নেয় পিয়াস।
কারন ফ্যামিলি প্রবলেম হতে পারে।
তবু কি ভেবে নিজেই
গাড়িটাকে ফলো করতে থাকে।
ওরাও মুভি দেখতে গেছে।
কিন্তু টিকিট স্বল্পতা আজ।
কিন্তু তিথির মেশার ধরনও কথা বলার
স্টাইলে পিয়াসের বুকে শেষ বাজে।
ওরা টিকিট পায়নি।
খুব কাছে দাঁড়িয়েই ফোন দেয় তিথিকে।
তিথি ফোন কেটে দেয়।
পাশের ছেলেটা কে বলেঃ
আরে পিয়াস ভাইয়ার ফোন!
খুব বিরক্ত করে!

পিয়াস পুরো অবাক হয়ে যায় তিথির কথায়।
চোখে কান্না চলে আসে।
প্রতিটা শব্দ কানে বাজতে থাকে।
পিয়াস খানিকক্ষণ ভেবে তিথি আর
ছেলেটির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েঃ
হাত বাঁড়িয়ে দেয় ছেলেটির দিকে।
বলেঃ হাই, আমি পিয়াস তিথির ভাই।
সরি ফর ডিস্টার্বিং।
এটা আমার স্বভাব।
তিথি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়।
তবু খানিকটা বোবা দৃষ্টিতে তাকায় পিয়াসের দিকে।
পিয়াস হাসছে।
কিছুক্ষণ কথা বলে পিয়াস বলেঃ
আজ আমার জন্মদিন।
একজনকে নিয়ে ছবি দেখার কথা ছিলো।
কিন্তু সে আসেনি।
টিকিট দুটো তোমরা রাখো।
বার্থডে ট্রিট।
বলে আর কথা না বাড়িয়ে টিকিট ধরিয়ে দেয় হাতে।
তারপর উল্টো হাঁটতে শুরু করে।
মাথা ঘুরছে।
সব এলোমেলো লাগছে।
ছেলেটা তিথিকে টেনে নিয়ে যায় টিকিট চেকিং এর দিকে।
কিন্তু তিথি তাকিয়ে থাকে চলে যাওয়া পিয়াসের দিকে।
মেয়েটা অবাক হয়ে যায়।
কিন্তু জানে যে তার হাজার ডাকেও পিয়াস ফিরবে না।
সবচেয়ে নামী রোমান্টিক ছবিটিও তার কাছে
সবচেয়ে বিষাদময় ছবি হয়ে যায়।
পিয়াস হাঁটছে।
খুব ব্যস্ত একটা রাস্তায়।
অচেনা মুখের ভীড়ে
কেবল তিথির মুখটাই ভেসে উঠে।
নোংরা মানুষ গুলোর প্রেমের সস্তা
অভিনয় খুব ভালো হয় বলেই
কিছু সরল মানুষ ঠকে যায়।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত