সালামের ফল

সালামের ফল

দেখ দেখ মাইয়াডা খালাম্মার মতো বোরকা পইরা যাইতাছে ভেতরে নাজানি কত্ত সুন্দর, যদি একবার পাইতাম ইশশশ ”
আমি জারিন। বাসা থেকে মাদ্রাসায় যাচ্ছিলাম ছাত্রীদের বাংলা ক্লাস নেওয়ার জন্য। রাস্তায় চার-পাঁচ জন বখাটে ছেলের দল থেকে একজন উপরের কথা গুলো বললো। আমি কথা গুলো শুনে থেমে গেলাম। পিছনে ফিরে তাদের কাছে গেলার। তারা সবাই চুপ করে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, হয়তো ভাবছে চড় টর মারি কিনা। আমি সুন্দর করে সালাম দিলাম। কেউ সালামের উত্তর দিল কিনা বুঝা গেল না। তারপর বললাম ‘আচ্ছা আপনাদের মধ্যে লিডার কে?

সবাই দেখি মাঝখানে একজনের দিকে তাকালো,তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম “আচ্ছা ধরেন আপনার সাথে যদি আমার বিয়ে হয় তাহলে তো আমি আপনার বউ হবো তখন যদি আপনার বউকে কেউ এই ধরনের কথা বলে তাহলে কি আপনি খুশি হবেন? ” (এভাবে বললাম কারন তাদেরকে মা বোনদের কথা বলে লাভ নাই)

ছেলেটি বললো : না একদম খুন করে ফেলবো।( যে কথা গুলো বলছে তার দিকে একটু রাগী চোখে তাকালো)

আমি বললাম : খুন করতে হবে না যেসব মেয়েদের এসব খারাপ কথা বলেন তারা আপনাদেরও বউ হতে পারে এটা মাথায় রাখিয়েন।
ছেলেগুলো অবাকের শেষ সীমানায় পৌছে গিয়েছিল।
কারো মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলো না।
তারপর আমি আর কিছু না বলে মাদ্রাসায় চলে গেলাম।

পরের দিন আবার একি জায়গায় ছেলেগুলো দাড়িয়ে ছিল আমি সামনে দিয়ে যেতেই সবাই একসাথে সালাম দিল। সালামে একটু তাচ্ছিল্য মেশানো ছিল। আমি উত্তর দেওয়ার পরে সবাই আবার একসাথে বলে উঠলো “কেমন আছেন ভাবি ?” শুধু লিডার ছেলেটি মুচকি মুচকি হাসছিল। আমি ভালভাবেই উত্তর দিলাম “জি আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাল আছি। আপনারা? ”
সবাই বললো ভাল। আমি বললাম আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলতে হয়। আর সালামের অর্থ হলো “আপনার উপর শান্তি বর্শিত হোক ” সালাম একটা দোয়াও। সালাম দিলে ভাল করে দিবেন। তাদের মধ্যে একজন কি যেন বলতে চাইলো কিন্তু লিডার ইশারায় চুপ থাকতে বললো। আমি আর কিছু না বলে সালাম দিয়ে মাদ্রাসায় চলে গেলাম।

এরপর থেকে আমাকে দেখলেও কেউ আর কিছু বলতো না, শুধু মাঝে মাঝে সালাম দিত। কিছু দিন যাওয়ার পর খেয়াল করলাম অন্যছেলে গুলো না থাকলেও তাদের লিডার দাড়িয়ে থাকে। আর আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো । আমি নিচের দিকে তাকিয়ে চলে যেতাম।

আরো কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন উনি আমাকে সালাম দিল আমি উত্তর দিলাম। তারপর বললো …..
“আসলে আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। কিন্তু কিভাবে যে বলবো বুঝতে পারছি না ( মাথা চুল্কে, নিচের দিকে তাকিয়ে) আসলে আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। বিয়ে করতে চাই । ”

আমি বললাম :দেখুন আপনি হয়তো ঠিক মতো নামাজ পরেন না। নেশা টেশাও করেন। কিন্তু আমি এমন একজনকে চাই যে সব সময় আল্লাহ্‌ তালার কথা মনে করিয়ে দিবে। আপনি যদি সেরকম হওয়ার চেস্টা করেন তাহলে ভেবে দেখবো,কথাটা বলেই দ্রুত পায়ে চলে গেলাম।এরপর থেকে তাকে আর সেখানে দাড়িয়ে থাকতে দেখতাম না।

তারপর ২ – ৩ মাস পর আমি তার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম । একদিন যাওয়ার পথে উনি আমাকে সালাম দিলেন, আমি প্রথমে চিনতে পারছিলাম না। তারপর তাকিয়ে দেখি স্বাভাবিক ভাবে দাড়ি রাখা মায়াবী মায়াবী চেহারার সেই ছেলেটি আমি বললাম “জী বলুন ” উনি বললেন “আমি এখন নিয়োমিত নামাজ পরি। নেশা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই। ইসলামের বিধান মেনে চলার চেস্টা করি। এখন কি আমাকে মেনে নেওয়া যায়?

আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম ” জি আমার পরিবারে প্রস্তাব পাঠান ” উনি খুশি হয়ে বললেন ” আলহামদুলিল্লাহ্‌, অবস্যই খুব তারাতাড়ি পাঠাবো ”

তার নাম হলো সাবিত। তার পরিবার ভালই ছিল কিন্তু সে বন্ধুদের সাথে মিশে ওরকম হয়ে গিয়েছিল। পরিবারের সম্মতিতেই আমাদের বিয়ে হলো।

বাসর রাতে উনি আমাকে প্রথম দেখেন,কিছুখন অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বলেন “আমি যেমন ভেবেছিলাম আল্লাহ তার থেকেও সুন্দর আর মূল্যবান উপহার আমাকে দিয়েছেন,চলো নামাজ পরে নতুন জীবনের জন্য দোয়া করি ”
তার কথা শুনে আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হলো।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত