নতুন হোম টিউটর স্যারটা এতোই সুন্দর যে ওনাকে দেখে আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। হুট করেই স্যারকে বলে ফেললাম ” স্যার আপনি এতো সুন্দর করে সেজেগুজে আমাকে পড়াতে আসবেন না। আপনাকে দেখে প্রতিদিনই একবার করে ক্রাশ খেতে ইচ্ছে করবে।”
আর ওমনিই গালে ঠাসস করে এক চড় বসিয়ে দিলো। আর প্রচন্ড রেগেমেগে বললেন ” টিচারের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই আদব কায়দাও বুঝি শেখো নি?বেয়াদবের মতো কথা না বলে পড়া বের করো।”
আমি ওনার এই আচরনে বেশ অবাক হয়ে গেলাম। রাগে অপমানে কতক্ষন মুখ কালো করে বসে রইলাম। আমার পেছনে এলাকার কতো ছেলে ঘুরে আমি পাত্তা দেইনা আর এই ব্যাটা কিনা আমাকে থাপ্পড় মারে! তার একটা বিহিত করতেই হবে। স্যার চলে যাওয়ার পর আম্মুকে গিয়ে বললাম ” আম্মু স্যার ভালো পড়ায় না, আমি ওনার পড়া বুঝি না। ওনাকে বাদ দিয়ে দাও।
– কেনো? আরো অনেকেই তো ফাহমিদের কাছে পড়ে। সবাই তো ভালোই বলে।
– আমি এতো কথা বুঝি না। পড়বো না বলেছি তো পড়বো না। ( বেশ রেগে)
– (আম্মুও রেগেমেগে) তোর জন্য এখন নতুন স্যার কোথায় পাবো? এটা তোর তেত্রিশ নাম্বার টিচার। আর টিচার চেঞ্জ করতে পারবো না। তাছাড়া ফাহমিদ তোর বাবার বন্ধুর ছেলে। ওর সাথে যদি উল্টাপাল্টা ব্যাবহার করিস তাহলে তোর টিচার নিয়োগ তো বন্ধই এবং পড়ালেখাও বন্ধ।
স্যার যে আমাকে থাপ্পড় মেরেছে ঐটাও বলতে পারছি না ভয়ে। কারন বললোই জিজ্ঞেস করবে কেনো থাপ্পড় মেরেছে? তখন আম্মুকে কি বলবো! তাই আর কথা না বাড়িয়ে মন খারাপ করে চলে আসলাম। ঘরে এসে ভাবতে লাগলাম ব্যাটাকে কি করে শায়েস্তা করা যায়। আর ওমনেই ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো। সিন করে দেখলাম “নীলিমা বিশ মিনিটের মধ্যে তোমার কলেজের সামনে চলে এসো” কে বা কাহারা ম্যাসেজটা দিলো আমি কিছুই বুঝলাম না। রিপ্লাই দিলাম” আপনি কে?” উত্তর এলো” আমি ফাহমিদ, তোমার টিচার।” আমাকে ম্যাসেজ দিলো কি জন্য! এবার কি কলেজের সামনে রেখে আরো অপমান করবে নাকি! কি শুরু করলো এই ছেলেটা! যাবো কি যাবো না ভাবতে লাগলাম। অবশেষে ভয়ে ভয়ে গিয়ে কলেজের গেটের দাঁড়ালাম। বিশ মিনিটের বদলে পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাগলো। এবার কি হবে!
কিন্তু যখন মিঃ স্যার আমার সামনে এসে দাঁড়ালো তখন তো আমি পুরোই অবাক! একি আসলেই সেই ফাহমিদ যে কিনা আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলো! এতো দেখছি পুরোই উল্টো, একদম কাঁচুমাচু হয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আর আমতা আমতা করে বললো,
– আসলে তখন থাপ্পড়টা দেয়ার জন্য সরি। সত্যি কথা বলতে কি আমিও তোমার উপর ক্রাশ খেয়েছি।
ওমা! এতো দেখছি সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছে শায়েস্তা করার। গার্লফ্রেন্ড হলে তো এই অপমানের বদলা হাজার বার নিতে পারবো।আর দেখতেও সেই হ্যান্ডু তাই ভাবছি প্রপোজ করলে হ্যাঁ বলে দিবো। তো কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললাম-
– না না সরি হতে হবে না। আপনাকে আমি মাফ করে দিলাম।
– আসলে একটা কথা বলার ছিলো।
– বলুন……..
– আলাবিউ…..
– আলাবিউ ২, ৩,৪,৫,৬……….. ১০০।
শুরু হলো স্যার আর ছাত্রীর প্রেম কাহিনি। কিন্তু সমস্যা হলো ও যখন আমাকে নিয়ে ঘুরতে যায় তখন একদম বিড়াল হয়ে যায়। রীতিমতো মিউ মিউ করে, আর যখন আমাকে বাসায় পড়াতে আসে তখন একদম ঘেউ ঘেউ করে। মাঝে মাঝে ওকে দেখলে মনে হয় ওরা মনে হয় জমজ দুই ভাই। একজন আমাকে পড়ায় আর অন্যজন আমার প্রেমিক।
আজ ও আমাকে পড়াতে এসে বিশবার কানে ধরিয়ে উঠবস করিয়েছে। সামান্য একটা পড়ায় ভুল হয়েছে বলে নিজের গার্লফ্রেন্ডকে এমন করতে পারে কেউ! আমার ভীষণ রাগ হচ্ছিলো। কিন্তু বাসায় কিছু বললে আম্মু এসে উল্টা আমাকে না বকে দিয়ে যায় এই ভয়ে কিছু বলিনি।ও আমাকে পড়িয়ে যাওয়ার পর ম্যাসেজ দিয়ে দেখা করতে বললাম।
খুব রিল্যাক্স লাগছে। বিকালে পার্কে ওকে সবার সামনে পঞ্চাশ বার কানে ধরিয়েছি। প্রতিশোধ কাকে বলে! এবার থেকে ও আমাকে বাসায় যা যা করবে সব আমি এভাবেই বদলা নিবো। আমার টা তো কেউ দেখে না কিন্তু ওর শাস্তি সবাইকে দেখিয়ে দিবো।