গার্লফ্রেন্ডকে ম্যাসেজের পর ম্যাসেজ দিচ্ছি সে সিন করেও কোন রিপ্লে দিচ্ছে না। ভিডিও কল দিলাম অডিও কল দিলাম তাও কেটে দিচ্ছে। রাত বাজে সাড়ে বারোটা এতরাতে ওর কোথাও যাবার কথা না। সাড়ে এগারোটার দিকেও কত কথা বললাম। বাসায় কোন মেহমানও আসেনি আসলে ও আমাকে অবশ্যই বলল। রাগেরও কোন কারণ দেখছিনা। কিছুক্ষণ পর একটা ম্যাসেজ করলাম- সত্যি আমার সাথে আর কথা বলবে না? ওপাশ থেকে একটা লাইক এলো। লাইক দেখে ইমোশনাল হয়ে গেলাম।
আমাদের রিলেশন অনেকদিনের এরমধ্যে একবারও এমন হয়নি। আজ হঠাৎ ওর কি হল ভাবতে ভাবতে দিশেহারা হয়ে গেলাম। কিন্তু আমার দোষটা কি সেটা না জেনে তো চুপচাপ বসে থাকা যায় না। আমার মোবাইলে টাকা ছিল না, ইমার্জেন্সী ব্যালেন্সও আগেই নিয়ে নিয়েছি। নেটেই খরচ কম তাই ম্যাসেঞ্জারেই সবসময় কথা হয়। এতো রাতে রিচার্জের দোকান খোলা থাকেনা। কিন্তু কথা যে বলতেই হবে- চুপ করে আব্বার ঘর থেকে মোবাইলটা নিয়ে এলাম। দরজা বন্ধ করে দিয়ে গার্লফ্রেন্ডের নম্বরে কল দিলাম, রিং বাজতেই ওপাশ থেকে বলল হ্যালো।
আমি এবার এক নিশ্বাসে বলতে শুরু করলাম- হ্যালো শুনছো কি হয়েছে তোমার? হ্যালো হ্যালো ওপাশ থেকে কোন শব্দ আসছে না দেখে ভাবলাম রেগে আছে, রাগ ভাঙ্গানোর জন্য বললাম- ময়না পাখি, জান্টুস পাখি কথা বলছ না কেন? রুম্পার ছবিতে লাভ রিএক্ট দিয়েছি বলে রাগ করেছো এই যে কান ধরছি আর দিব না। এবার ওপাশ থেকে একটা কন্ঠ বজ্রপাতের মতন গর্জে উঠে বলল- ছুডাইতেছি তোর জান্টুস পাখি, বাড়ি কৈ তর? বল এক্ষুনি বলবি বাড়ি কই তোর? ভয়ে লাইনটা কেটে দিলাম। ফোন রেখে দিতেই বার বার কল আসছে। একবার ফোনটা ধরতেই আবার সেই ভয়ংকর কণ্ঠ গর্জে উঠল, ভয়ে ভয়ে বললাম স্যরি দুটা টা ডিজিট ভুল হয়ে আপনার নম্বরে কল চলে গেছে।
সেই ভয়ংকর কণ্ঠ আবার গর্জে উঠে বলল, ভুলে আসছে না? ভুলে আসছে তাইলে রুম্পারে চিনলি কেমনে সত্যি করে বল তর বাড়ি কই? আমি আবার ফোনটা কেটে দিয়ে নম্বর ব্লক লিস্টে দিয়ে দিলাম। বিছানায় শুয়ে মোবাইল টিপতে টিপতে দেখলাম অনেকগুলো ম্যাসেজ এসেছে, এমনিতেই মেজাজ টা খারাপ, এর উপর এতো ম্যাসেজ দেখে মেজাজ টা আরও খারাপ হয়ে গেল। সারাদিন ফোন কোম্পানির ম্যাসেজের জালায় আর থাকা যায় না। ম্যাসেজ মার্ক করতে করতে হঠাৎ দেখলাম একটা অপরিচিত নম্বর থেকে গার্লফ্রেন্ড ম্যাসেজ পাঠিয়েছে- সেখানে লেখা। শোন আম্মু মোবাইল নিয়ে গেছে ভুলেও কল বা ম্যাসেজ দিওনা।
ম্যাসেজ দেখে নিজেকে গাধা মনে হল। হবু শাশুড়ি আম্মার ভয়েস একেবারে আমার গার্লফ্রেন্ডের মতন। কি করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আব্বার মোবাইল খুললেই যদি আবার অন্য নম্বর থেকে কল আসে? শেষে আব্বার মোবাইলে আমার সিম ঢুকিয়ে চুপচাপ আব্বার ঘরে দিয়ে আসলাম। চিন্তায় ঘুম আসছিল না। চিন্তা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে হৈচৈ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল, রুম থেকে বের হয়েই দেখি আম্মা কাঁদতে কাঁদতে আব্বাকে বলল- ছি ছি এই বয়সে লুকিয়ে লুকিয়ে তুমি আরেকজনের সাথে প্রেম করছ। আব্বা বলছেশোন আমার কথা তো শোন।
এরমধ্যেই আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছেআম্মা? আম্মা বলল ওরে তোর আব্বা লুকিয়ে লুকিয়ে আরেকজনের সাথে প্রেম করছেরে। আব্বা আবার বলল ওই ম্যাসেজ কে পাঠিয়েছে আমি সত্যি জানি না। আম্মা বলল না জানলে ওর নম্বর তোমার মোবাইলে জান্টুস পাখি দিয়ে সেভ করা থাকে? ওরে শেষ হয়ে গেলরে বলেই আম্মা বেহুশ হয়ে গেল। টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মোবাইল টা টেবিলের উপরে পড়ে আছে। মোবাইল নিয়ে ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে দেখলাম আমার গার্লফ্রেন্ড ম্যাসেজ পাঠিয়েছে।
ম্যাসেজে লিখা- “গতকাল রাতে আম্মা খুব বকেছে বুঝি? মন খারাপ কর না, কদিন পর সেই তো তোমার শাশুড়ি হতে যাচ্ছে। বিকেলে চলে এসো কিন্তু, লাভ ইউ জান্টু”। ম্যাসেজ দেখে আমিও বেহুশ হয়ে গেলাম- জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম আব্বা ডাণ্ডা হাতে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই আবার বেহুশ হয়ে গেলাম।