সারপ্রাইজ

সারপ্রাইজ

সেদিন রাফির ফোনে রিমি মেয়েটার ছবি দেখলাম!!! দুইজন পাশাপাশি বসে সেল্ফি। বুঝতে পারলাম যে, কয়দিন আগেই রিমির সাথে রাফি দেখা করেছে। অনেকদিন আগে ফেসবুকে রিমির সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। রাফির ছোটবোন হওয়ার সুবাদেই হয়ত রিমি আমাকে মেসেজ করত। অনেক কথাই জিজ্ঞেস করত। আমার একটা পিক চেয়েছিল, আমি তখন রাফিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, ” রিমি কেরে!!! ফেসবুকে তোর ফ্রেন্ড আছে দেখলাম। আমাকে মেসেজ করে,পিক চায়” ও তখন আমাকে বলেছিলল যে, আমি যেন আমার ছবি দেই, মেয়েটা নাকি অনেক ভালো।

আমি ছবি দেওয়ার আগেই পরদিন দেখি ওই মেয়েটা আমাকে আমার ছবিই পাঠিয়েছে!! বুঝতে পারলাম আমার ভাই ভালবেসে মেয়েটাকে আমার ছবি দিয়ে দিয়েছে!!! রিমি মেয়েটার আইডি দেখে ওকে আমার কাছে ততটা সুবিধার মনে হতনা। কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম, মেয়েটা আর আমাকে মেসেজ করছে না। তারপর রাফি যখন আমাকে হোস্টেলে রাখতে আসল, ওরও মন খারাপ। রিমির কথা জিজ্ঞেস করতেই বিষয়টা এড়িয়ে গেলো। আমি বুঝতে পারলাম যে, রিমির সাথে কোনো বিষয় নিয়ে ওর ঝগড়া হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু ওই কিছু বলল না। আমিও আর কথা বাড়াইনি। তারপর কয়বছর কেটে গেছে। আজ আবার ওর ফোনে রিমির ছবি দেখে মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেলো। আজও ও রিমির কথা এড়িয়ে গেলো।কিছু বলল না।

শুধু বলল যে, দেখা হয়েছিল তাই আর কি!!! আমিতো বুঝতে পারলাম সব, আর ছোটবোন হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছেনা!!! অনেক কষ্ট করে খুজে খুজে প্রোফাইল পিক দেখে রিমির আইডিটা খুজে বের করলাম।একটা নতুন আইডি খুলে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট, সাথে ছোট্ট একটা মেসেজ দিলাম যে, কথা আছে। কিছুক্ষণ পরেই দেখি রিপ্লাই দিছে আর রিকুয়েস্ট ও এক্সেপ্ট করছে!!! আমিতো সেই খুশি। শুরু হলো কথাবার্তা। আমার আইডিটা নতুন হওয়ায় সে বুঝতেই পারেনি যে, আমি রাফির বোন। সে তার অনেক কস্টের কথা বলত, তার মা কিভাবে তাকে কষ্ট করে বড় করে তুলেছে, তার বাবা আরেকট বিয়ে করে অন্য জায়গায় চলে গেছে! আরো অনেক কথা।

আমিও মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনতাম। এভাবেই প্রায় মাসখানেক কেটে গেলো। আমি বললাম তার সাথে দেখা করতে চাই। রাফি বাসায় আছে, ওকে নিয়ে যাওয়া যাবে! সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে। অনেক জোরাজুরির পর সে দেখা করতে রাজি হলো। রাফি যেকোনো বিষয়ে আমাকে সাপোর্ট করে, তাই আমারো উচিৎ ওকে সাপোর্ট করা। সেদিন যখন আমি মজা করে ওকে মেসেজ করেছিলাম যে, ” জানিস, আমার না একটা ছেলেকে খুব ভালো লাগে! আমাকে নাকি খুব ভালবাসে। কি করব বলত? তুই যা বলবি, ডিসিশন দিবি তাই করব” তখন ও যখন বলেছিল যে, ” তুই এখন বড় হয়েছিস, ভালমন্দ বোঝার জ্ঞান আছে। তোর যা ভালো মনে হয় কর।

শুধু এমন কিছু করিস না যাতে আমরা কষ্ট পাই। কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবি” সেদিন ওর কথা শুনে আবেগে আমার কান্না চলে আসছিল!!! আমিতো ভেবেছিলাম ও আমাকে বকা দিবে। কিন্তু উল্টো সাপোর্ট করছে। তাহলে এমন ভাইয়ের প্রতি বোন হিসেবে আমারোতো একটা দায়িত্ব আছে নাকি!!! সেদিন অনেক বলেকয়ে রাফিকে আমার সাথে নিয়ে গেলাম আর রিমিকে বললাম যে, আমি হলুদ কালারের ড্রেস পরব আর হাতে কালো রংয়ের একটা ব্যাগ থাকবে। আমি আর রাফি রেস্টুরেন্টে বসে আছি আর রাফিকে বলছি যে, ওর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। ও অনেক খুশি হবে দেখলে। এমন সময় পেছন থেকে একটা অচেনা ছেলে বলতে লাগল আপনি কি আয়শা?

_জ্বি।আপনি কে?
_ আমি কে মানে! অচেনা মানুষ আইডি… আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে, এতদিন আমি কার সাথে কথা বলেছি। রাফি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমি কি বলব কিছু বুঝতে পারছি না।

_ তাহলে প্রোফাইল পিক…
_ ওহ! ওইটা আমার ছোটবোন রিমি। ও বলেছিল, আমার প্রোফাইলে ওর ছবি দিতে, ছোটবোনের আবদার রাখতে….
_কিন্তু আমিতো ভেবেছিলাম ওইটা রিমির আইডি….
_আরে প্রোফাইলটাতো ভালো করে দেখবেন,

মেল আছে আর আমার অনেক ছবি দেওয়া আছে!!! আমিতো শুধু প্রোফাইল পিক দেখেই ভেবেছিলাম রাফি শুধু হাসতে হাসতে আমাকে বলল যে, এইটা তোর সারপ্রাইজ!!! ভালই ছিল।

ভাগ্যিস রাফি আমার সাথে ছিল। দুইজনকে পরিচয় করিয়ে দিলাম আর রিমিকে আমার অনেক আগের বান্ধবী বলে পরিচয় দিলাম। কি আর করার!!! প্রতিজ্ঞা করলাম ভালো করে না জেনেশুনে আর কাউকে হেল্প করতে যাওয়া ঠিক নয়… নিজেই ফেসে গেলাম!!! রাফিতো ভাবছে আমি ওই ছেলেটার সাথে দেখা করানোর জন্যই ওকে নিয়ে আসছি। কিছুই করার নেই!!! আমি অসহায়!!! এবাউট না দেখে শুধু প্রোফাইল পিক দেখে মানুষ চিনতে গেলে যা হয় আর কি!!!আর আমি এতো বোকার বোকা যে কথাতেও বুঝতে পারিনি, ছেলের সাথে কথা বলছি…

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত