Happy birthday

Happy birthday

চারিপাশ কেমন ঝাপসা। অন্ধকার নয় আবার আলোও নেই।কিছুটা কোয়াশার আবরণে ঘেরা। দূর দূর পর্যন্ত জনমানবশূন্য। রুহি কেন এখানে দেখা করতে বললো জানা নেই। ছোট বেলায় দাদু বলেছে ভৌতিক কিছু কারণে এই এলাকায় লোকজন বসবাস করে না।রাজারদের আমলে এক মন্ত্রী অন্য রাজ্যের সাথে হাত মিলিয়ে রাজমহল সহ এই গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছিলো।এরপর থেকে রাতে কান্নার আওয়াজ কষ্ট মিশ্রিত আর্তনাদ শোনা যায়। দিনে এই এলাকায় পা রাখলে শরীর কেমন শিউরে উঠে।এটা তো রাত! আচমকা নুপুরের ঝুমঝুম আওয়াজ কানে ভেসে এলো।রফি ছিটকে উঠে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে কেউ একজন সাদা শাড়ি পড়ে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে।হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি। মোমের মৃদু আলো তাকে পথ দেখাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতি দেখে রফি ঘাবড়ে গেলো।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।মেয়েটার শরীরের গঠন আন্দাজ করা যাচ্ছে না। শাড়ি এমন এক বস্ত্র যা পরিধান করলে চিকন মেয়েদেরও মোটা লাগে। তাই অহেতুক বোঝা সম্ভব নয়। তবে কণ্ঠ শুনে কিছুটা আন্দাজ করা যেতে পারে। ফলস্বরূপ,রফি জোরে জিজ্ঞাসা করলো “এইযে হ্যালো!কে আপনি?” মেয়েটা থেমে মাথা উচু করে ভয়ংকর হাসি হাসলো। এ হাসি সাধারণ মেয়ের পক্ষে হাসা সম্ভব নয়। এর মধ্যে রুহি পেছন থেকে রফির কাধে হাত রাখলো।হঠাৎ স্পর্শে রফি পেছন ঘুরে তাকায়। হলুন শাড়ি পড়নে যেন এক পরী দাঁড়িয়ে।কোমড় ছুই চুল,কাধের পাশ দিয়ে সামনে মেলে রেখেছে। হাতে চকলেট কেক।

রফি রূপের ঝলকে হারিয়ে যাচ্ছে।শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ খুব ভালভাবে নাকে আসছে।কোন সাধারণ পুরুষের পক্ষে এমন মুহূর্তে ঠিক থাকা কষ্টসাধ্য। তবে রুহি কোন ফিল না করে তাঁর কোকিলা কণ্ঠে বললো “Happy birthday to you.” ততক্ষণে রফি ভুলে গেছিলো সাদা শাড়ি পড়া কন্যার কথা।সে পেছন ফিরে কন্যার খোঁজ করতে গিয়ে দেখে নেই।পুরো শুনশান পরিবেশ। রফির মনে তখন প্রশ্নের পাহাড় তৈরী হলো। কে ছিলো? কোথা থেকে এসেছিলো? এমন বিকট হাসি হাসলো বা কিভাবে?  ভূত নয়তো! আচ্ছা রুহি কি দেখেছে তাকে? জিজ্ঞাসা করে দেখবো তাঁর কাছে? রুহি রফির ভাবনার ঘোর দেখে একটা খুচা মেরে বললো “কিছু ভাবছো?” রফি থতমত খেয়ে জবাব দিলো “তোমার সারপ্রাইজের কথা ভাবছি।”

– এখনো অনেক সারপ্রাইজ বাকি।
– বুঝলাম।কিন্তু এই ভয়ংকর জঙ্গলে সারপ্রাইজের মানে কি?
– আছে!অনেক মানে আছে।
– বলো শুনি।
– আমার বড় আপুর কথা মনে পড়ে?
– নেহা আপু?
– হুম।
– তাকে নিয়ে আবার কি মনে পড়বে?
– তিন বছর আগে তাঁর সাথে ঘটনা গুলার কথা মনে করার চেষ্টা করতো একটু।
– নেহা আপুকে যে হত্যা করা হয়েছিলো সেটা?
– আমি যদি বলি হত্যার সাথে তুমি যুক্ত ছিলে।
– তোমার মাথা ঠিক আছে?
– হা হা হা।

সেদিন নিজের চোখে দেখেছিলাম।তুমি বাকি তিন জনের সাথে মিলে আপুর হত্যা করেছিলে।খুব কষ্ট হচ্ছিলো দেখতে।তবু এই ভেবে সামনে যাইনি আমায় দেখলে আমাকেও মেরে ফেলতে।জানো রফি,বাকি সবাইকে কঠিনতম মৃত্যু দিয়েছি।কিন্তু তোমায় তো ভালবাসি।তাই তোমাকে সবচেয়ে সহজ মৃত্যু উপহার দিবো।

– তুমি ভুল বুঝছো রুহি।
– ভুল ঠিক জানিনা।চলো আগে কেক কাটি।

রফি কিছু না বলে খুব সুন্দরভাবে মাটিতে জায়গা করে বসে কেক কাটলো।তারপর এক খন্ড কেক রুহিকে খাইতে দিতে গেলে রুহি সেটা নিয়ে রফির গালে পুরে দিলো। রফি অবশ্য বাধা দিলো না।হাসি মুখে খেয়ে নিলো।ভাগ্যক্রমে খাওয়ার ত্রিশ সেকেন্ড বাদে রফির গলা আটকে এলো। মুহূর্তে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।এমন লাগছে যেন গলা কেউ চেপে ধরেছে। রফি গলায় হাত দিয়ে ছাট পারতে লাগলো। রুহি পাশে শোয়া। ছাট পারা দেখে তাড়াতাড়ি করে উঠে ডাক দিলো “এই..এই উঠো?কি হয়েছে তোমার?এরকম করছো কেন?” রফি বিছানায় লাফ দিয়ে উঠলো। সবকিছু এলোমেলো লাগছে।চারিপাশে একনজর চোখ গুলিয়ে বললো “আমি কোথায়?”

– পাগল হয়ে গেলা নাকি?তুমি তোমার রুমে।
– রুমে!আমরা জঙ্গলে যাইনি?
– জঙ্গলে যাবো কি করতে?এতক্ষণ দুঃস্বপ্ন দেখছিলা মেয়বি।
– হতে পারে।যাইহোক আজ কত তারিখ?
– রুহি ফোনে সময় দেখে খাটের নিচ থেকে কেক বের করলো।এরপর লাইট জ্বালিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো জুন মাসের দুই তারিখ।
– তাহলে!
– Happy birthday to you.Happy birthday to you my dear Rofi.

রফি আবার ঘাবড়ে যাচ্ছে।প্রায় স্বপ্নের মতন সবকিছু ঘটছে। কেকটাও চকলেট কালার। রুহি রফির মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “খুশি হওনি?” রফি রুহিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো “বিশ্বাস করো আমি নেহা আপুকে মারিনি।প্রমিস জানু আমি কিচ্ছু জানিনা।”

– নেহা আপুকে মারতে যাবা কোন দুঃখে?আপু পাশের রুমে ঘুমিয়ে।শুনলে ধরে দিবে।
– তাইতো।তাহলে চলো একটু রোম্যান্স করি।
– ওই শালা কেক কি তোর শ্বশুর কাটবে?

রফি জবাব খুঁজে পাচ্ছে না।যদি এখন কেক কাটে তবে রুহি জোর করে হলেও প্রথমে খাইয়ে দিবে। আর যদি তখন বিষ মিশানো থাকে তাহলে তো কেল্লাফতে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত