অদ্ভুত সম্পর্ক

অদ্ভুত সম্পর্ক

দূর থেকে দেখতে পারছি আম্মু চোখ বড় বড় করে রাগি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে ভাবছি আজ আমার রক্ষা নেই। এই খবর আম্মুকে কে দিল এই কথাই আমার ছোট মাথায় ঘুরছে।জীবনে প্রথম কলাগাছের ভেলায় উঠেছি।কি যে আনন্দ হচ্ছিল তা বলে বোঝাতে পারবো না।কিন্তু এই আনন্দ এক নিমিষেই মাটি হয়ে গেল।ভেলা থেকে যখন নামলাম তখন আম্মু বললো কোন সাহসে তুই ভেলায় উঠেছিস?তুই সাতাঁর জানিস!একবার পড়ে গেলে কে তোকে এই পানি থেকে উঠাতো।

এবার আমাকে মারার জন্য হাত তুললো আর আমি জীবন রক্ষা করতে উসাইন বোল্টের মতো তীব্র গতিতে বাসার উদ্দ্যশে দৌড় দিলাম।বাসায় এসে যেই রুমের মধ্যে যাব তখনই মিশু বলে উঠলো আপু আন্টির সাথে তোমার দেখা হয় নি?এবার বুঝলাম কে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্এ করেছে।আমি ওর কথার উওর না দিয়ে রুমে ডুকে গেলাম।এই ছেলের জন্য কোন কিছুই ঠিকমতো করতে পারি না।মিশু আর আমরা একই বাসায় ভাড়া থাকি।আমি ক্লাস ফোর এ পড়ি আর মিশু ক্লাস টু তে পড়ে।এই পিচ্চি ছেলের মনে হয় কোন কাজ নাই তাই সারাদিন আমার পিছনে লাগে।

প্রতিটা দিন সকালে উঠে আমি আমার সেন্ডেল খুজেঁ পাই না।কারণ এই দুষ্ট ছেলেটা আমার সেন্ডেল লুকিয়ে রাখে।যাতে করে আমি ওর আগে গিয়ে বকুল ফুল কুড়িয়ে আনতে না পারি।আবার আগেও গিয়ে ও বকুল ফুল কুরিয়ে আনে না।যখন আমি সেন্ডেল খুজেঁ বের করে বকুল ফুল নেওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হই তখন দেখি রাস্তার মাথায় ও দাড়িয়ে।আর আমিও বোকার মতো ওকে দেখে দৌড়ে রাস্তার মাথায় যাওয়ার চেষ্টা করি।ও আমার আগে গিয়ে ফুল কুরাতে থাকে। আমিও তাড়াতাড়ি ফুল কুরাতে থাকি।ও আমার থেকে বেশি ফুল পেয়েছে অর্থাৎ আমাকে হারাতে পেরেছে ওতেই ওর আনন্দ।আম্মুকে যখন বলতাম মিশু আমার সাথে সারাদিন দুষ্টমি করে।তখন আম্মু বলতো ওতো ছোট মানুষ। তোর ভাই হয়।

ওর সাথে ঝগড়া করিস না। একবার মিশু আমাদের দরজার সামনে প্রসাব করেছিল।যখন প্রসাবের গন্ধ রুমে আসছিল তখন আম্মু বুঝতে পারলো। আম্মু বালতিতে করে যখন পানি নিয়ে এসে দরজার সামনে দিচ্ছিলো তখন মিশু র মা বললো ভাবি পানি দিচ্ছেন কেন?আম্মু হেসে বলেছিল এমনি ভাবি।মিশু ওদের দরজার সামনে দাড়িয়ে দুই হাত দিয়ে আম্মুকে বলতে মানা করছিল তখন আন্টি দেখে ফেলে।আন্টি মিশুকে মারার জন্য যখন যাচ্ছিল তখন আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল।কিন্তু আমার আনন্দ ধুলোয় মিশে দিল আম্মু।আম্মু আন্টিকে আটকিয়ে বললো ভাবি ওতো ছোট মানুষ। ওকে মারিয়েন না।আন্টি বললো না ভাবি এই ছেলে আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না।ওকে না মারলে ও ঠিক হবে না।

আম্মু আর আন্টি কথা বলতে বলতে মিশু বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেল।হঠাৎ করে কয়েকমাসের মধ্যেই মিশু আর আমার খুব মিল হয়ে গেল।আমরা যে পাড়ায় থাকতাম ওখানে আমাদের সমবয়সী আরও কয়েকজন ছিল।আমাদের গ্রুপের সবাই আমরা খুব মজা করতাম।ধানের জমির আল দিয়ে আমরা হেটেঁ অনেক দূরে যেতাম।কামরাঙা চুরি করতে গিয়ে মিশু আর সিবু গাছের ডাল ভঙ্গে ঝুলে থাকতো।নভেম্বর মাসে যখন পাড়ায় ওয়াজ হতো তখন মিশু আর আমি ঠাকুমার ঝুলি;ভুতের গল্পের বই কিনতাম।বৃষ্টির দিনে পুকুরের অল্প পানিতে গোসল করতাম।আর আম্মুদের বকনি খেতাম।আমাদের রুমের দরজা খুলে রেখে সিসিমপুর দেখতাম যাতে মিশু দেখতে পায়।

আন্টি ওকে সিসিমপুর দেখতে দিত না কারণ ও টিভি দেখলে আর পড়তে চাইতো না। আমি;আপু আর মিশু ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেছিলাম। মিশু আমার জামা পড়ে ছবি তুলেছিল।ছবিগুলো যখন ওয়াশ করে বাসায় আনা হলো তখন আন্টি ; আংকেল আমরা সবাই ছবিগুলা দেখে খুব হেসেছিলাম। আর মিশু লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। আপু আর আমি মাঝে মাঝে ওকে লুসিফারের কথা বলে ভয় দেখাতাম।তখন দুষ্ট মিশু শান্ত হয়ে যেত।আংকেলের পোস্টিং হওয়ায় ওরা চলে গিয়েছিল। এরকম হাজারও স্মৃতি আছে ওর সাথে আমার। সত্যিই একটা দুষ্ট মিষ্টি ছোট ভাই পেয়েছিলাম।কিছু কিছু সম্পর্ক আছে যা কোন রক্তের সম্পর্ক না। কিন্তু রক্তের সম্পর্ককের মতো এই সম্পর্কগুলোও অনেক সুন্দর।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত