সায়মা আর রাফির দ্বিতীয় গর্ভস্হ সন্তানও নষ্ট হয়ে যায়। কোনো কারণ ছাড়াই ঠিক সাড়ে চার মাসের মাথায় বাচ্চাটা নষ্ট হয়। আগের বাচ্চাটাও এভাবে নষ্ট হয়েছিলো। ডাক্তারের মতে এমন কোনো জটিলতা নেই যে কারণে মিসক্যারেজ হতে পারে। তবে এই মৃত ভ্রূণগুলো বের করতে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয় মাকে। চার পাঁচ মাসে বাচ্চা অনেকটা পরিপক্ক হয়ে যায়, আর যদি কেউ গর্ভপাত করতে চায় তা তিন মাসের মধ্যেই করতে হয়।
রাত প্রায় দশটা, সায়মা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে, পাশে রাফি বসে। কি হতে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। সায়মা অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে, শারীরক আর মানসিকভাবেও। রাফি কেবিন থেকে বেরিয়ে বারান্দায় কিছুক্ষণ হেঁটে নিচে সিগারেট টানতে গেলো। অদুরে একটা ব্রিজ, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে এক দুই টান দিতে দিতে দেখে একটা ২৪/২৫ বছরের মেয়ে ব্রিজ থেকে লাফ দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সিগারেট কোনোমতে শেষ করে সে ছুটে যায় বাঁচাতে। গিয়ে মেয়েটার হাত ধরে টেনে সরিয়ে এনে বলে ” সমস্যা কি আপনার, মরতে চান নাকি? ” মেয়েটা রাফির দিক তাকাতেই রাফি বোবার মত হয়ে যায়। মেয়েটার চোখ লাল টকটকে, অশ্রু ঝরছে আগুনের মতো। চোখে একটাই আকুতি, ” আমাকে কেন মরতে হলো? ” অদভুত এক হাসি দেয় মেয়েটা। তারপর রাফির কিছু মনে নেই, জ্ঞান ফিরে দেখে ও হাসপাতালের বেডে, যে হাসপাতালে তার স্ত্রীও ভর্তি, রাত ১২টা পার হয়েছে মাত্র। জ্ঞান ফেরার পর রাফি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়, কিন্তু ভিতরে ভিতরে হতে পারে না। সায়মার কেবিনে গিয়ে দেখে সায়মা ঘুমাচ্ছে, পাশে নার্স বসে আছে। রাফিকে দেখেই বলে,
” অসুস্হ স্ত্রীকে রেখে কই গেছিলেন, উনি কত খুঁজলো আপনাকে? ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়েছি অনেক কষ্টে। এখন আপনি এসে গেছেন, সামলে রাখেন। কোথাও চলে যাইয়েন না!”
রাফি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে সায়মার পাশে গিয়ে বসে। নার্স চলে যায়। অজান্তে চোখের কোণে পানি জমে রাফির, আর আস্তে করে বলে, ” আমার পাপের শাস্তি এত বড় হবে, আর সেটা অন্য কাউকে কষ্ট দেবে ভাবতে পারিনি! ”
প্রায় তিন বছর আগের ঘটনা,
– রাফি, আমি অন্তঃস্বত্তা। এখন তো বিয়ে করতেই হবে।
– শিমু, সম্ভব না, তুমি বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলো
– কি বলছো এসব?
– হ্যাঁ, তাই করো। মা বাবাকে এখন বোঝানো যাবে না, আর উনারা মানবেই বা কেন?
– এমন অবস্থায় ঠিকই মানবে।
– কথা বাড়িয়ো না, যা বলছি করো শিমু।
– সম্ভব না, চার মাস পার হয়ে গেছে, এখন বাচ্চা নষ্ট করা সম্ভব না
– যে কোন মূল্যে করতেই হবে, নাইলে তুমি তোমার বাচ্চা নিয়ে থেকো, আমি নেই।
– এই অবস্থায় কেউ বাচ্চাটা নষ্ট করতে চাইবে না
– ব্যবস্থা আমি করবো।
…….শিমুর আপত্তি থাকা সত্বেও রাফি তার পরিচিত নার্সিং হোমে কথা বলে বাচ্চা নষ্ট করার ব্যাপারে। প্রথমে তারা রিস্কি বলে না করলেও পরে রাফি বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে বাচ্চা নষ্ট করায়। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে মা বাচ্চা দুইজনই হারিয়ে যায় মৃত্যুর কোলে।
পরের বছর রাফি সায়মাকে বিয়ে করে পরিবারের মতে। যথারীতি সন্তান সম্ভবা হয় সায়মা, কিন্তু চার মাস পরেই মিসক্যারেজ হয়। প্রথমে স্বাভাবিক নেয় কিন্তু এই দ্বিতীয় বারের পর আর মানা সম্ভব নয়, কারণ ব্রিজের উপর যে মেয়েকে দেখেছে রাফি সেটা শিমুই ছিলো যার চোখে মুখে একটাই প্রশ্ন ” কেনো মারা হলো তাকে? “