“তোমার কখনো মনে হয়নি আমাকে ছেড়ে তোমার চলে যাওয়া উচিত?”
বেলা একবার জাহিদের দিকে তাকালো। নির্বাক চোখ, শান্ত মুখ যেন বেলা কিছুই শুনতে পায়নি। বেলা একনজর তাকিয়েই হাত থেকে ব্যাগটা রেখে দিল।
“বেলা আমি বোধহয় তোমাকে কিছু বলছি।”
জাহিদ শোয়া থেকে উঠে বসলো। তার মুখ থমথমে। জাহিদের নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। বেলা একটা মেয়ে মানুষ হয়ে সমগ্র দুনিয়া চালিয়ে নিচ্ছে আর সে পুরুষ হয়েও অসুস্থতার দোহাই দিয়ে ঘরে বসে আছে। এক্সিডেন্ট করে বাম পাশের পা টা প্যারালাইজড করে ঘরে বসে আছে। কেন সে কিছু করছে না? ইচ্ছা থাকলে কি উপায় হবে না?
জাহিদ নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে। উত্তর পায়না কোনো। তবুও ইচ্ছে করে কিছু একটা উত্তর ভেতর থেকে আসুক।
“তোমার হঠাৎ এমন কেন মনে হলো?”
বেলার মুখ শান্তশিষ্ট। ঘরের কাজ কিছুই গোছানো হয়নি। অফিসের ফাই ফরমাশ খাটতে খাটতে বেলা ক্লান্ত। আজ বাড়ি ফিরতে গিয়ে পাশের বাড়ির অনুর জন্য দেরী হয়ে গেল। মেয়েটা একবার কথার আসর জমালে আর ছাড়তে চায় না। বয়স খুব বেশি না তবুও কথায় পরিপক্বতা। কাজ শেষ করে এসে জাহিদের কাছ থেকে এমন কথা আশা করেনি বেলা। তবুও বেশি একটা অবাকও হয় না। সবকিছু আজকাল তুচ্ছ মনে হয় বেলার।
“মনে হবার কারণ আছে বেলা। আমি একটা কাপুরুষ। নিজের সংসারের দায়িত্ব আমি তোমার উপর চাপিয়ে নিজে পা তুলে বসে আছি।”
জাহিদ মুখ নামালো।
হাতের কাজ রেখে এবার বেলা জাহিদের পাশে বসলো। মুখ ভার হয়ে গেছে বেলার। যেন সাদা আকাশটা কালো মেঘে ভর করেছে।
“তোমার নিজের সংসার? এই সংসার তোমার একার জাহিদ? আমি কে তাহলে? এই সংসার আমার না? তুমি এমন বলতে পারলে?”
বেলা মুখ নামিয়ে নিয়েছে। দুচোখে পানি উপচে পড়ছে।
জাহিদের এবার নিজেরই খারাপ লাগছে। বেলার কান্না ওর সহ্য হয়না। “ওতো ওমন ভেবে বলতে চায়নি,কেন মুখ থেকে এমন কথা বের হয়?”
জাহিদ বেলার হাত ধরে বললো,
“আমাকে মাফ করো বেলা। আমি ওমন বলিনি তোমায়। এ সংসার তোমার,এ সংসার আমাদের। কিন্তু….”
জাহিদ চুপ করে গেল।
বেলা চোখ তুলে অবাক করে তাকালো।
“কিন্তু কি জাহিদ? তুমিতো জোর করে কখনো আমায় কিছু করাও নি। আমি সব জেনেশুনে তোমার ঘরে এসেছি।”
“আমার নিজেকে অপরাধী মনে হয়। স্বামী হিসেবে আমি তোমায় কতটুকু দিতে পেরেছি বলো? তোমার জীবন নরক করে দিয়েছি। ”
জাহিদ আড়ালে চোখ মোছে।
“তুমি যা দিয়েছো তাই বা ক’জন দেয় বলোতো? এমন করে ভালো কেই বা কাকে বাসে? আমিতো বেশি কিছু চাইনি তোমার কাছে।”
মৃদুস্বরে জাহিদ হাসলো।
“কেবল মুখে বললেই কি ভালোবাসা হয় বেলা? আমি কি কিছুই বুঝিনা?”
বেলা বোঝে মানুষটার অক্ষমতা মানুষটাকে কুড়ে কুড়ে খায়। ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে জাহিদ। কিন্তু বেলা কিছুতেই তা হতে দেবেনা।
” তুমি আমি কি আলাদা জাহিদ? আমার এমন হলে তুমি আমায় ছেড়ে দিতে?”
“ছিঃ বেলা আমায় পিচাশ ভাবো তুমি? আমি কখনোই তোমায় ছেড়ে যাবার কথাও ভাবি না।”
জাহিদ যেন কেঁপে উঠলো।
“তবে আমায় কেন নিষ্ঠুর হতে বলছো তুমি? আমি বুঝি তোমায় ছাড়া খুব থাকতে পারি?”
“বেলা।”
বেলা নিরুত্তর। বসা থেকে সে জাহিদের বুকে মাথা রাখলো। পরম শান্তিতে দুচোখ বন্ধ করে বেলা।
“শুনছো?”
“হুম।”
“ভালোবাসা কী কেবল শরীরে শরীরে হয় জাহিদ? মন নামক জিনিসটা কি একদমই ফেলনা?”
জাহিদ চুপ করে থাকে।
ভালোবাসার কাছে সবাই হারে। জাহিদ ধীরে ধীরে বলে,
“শেষবেলায় ভালোবাসার কাছে সবাই হারে।আমিও তোমার কাছে হেরেছি বেলা।”