ইপ্তির ইফতারি

ইপ্তির ইফতারি

ইপ্তি কিছুতেই ইশাকে বোঝাতে পারছে না আজ। ইশা জেদ ধরে বসে আছে,ইশার এক কথা….হয় আজ রজনীগন্ধা ফুল বাসায় আসবে নয়তো আজকের ইফতারি ইপ্তির জন্য বন্ধ।

১ম রোজার পর থেকেই এই জেদ ধরেছে ইশা।আসলে দোষ ইশাকেও পুরোপুরি দেয়া যাচ্ছেনা।সব দোষ ঐ মহিলার।উনার উদ্ভট সব রেসিপি আর পরিবেশন এর জন্য আজ ঘরে ঘরে পেট খারাপ,ডায়রিয়া আর বমির সমস্যা হুট করেই বেড়ে গেছে।
ইশার রান্নার হাত এমনিতেই এত ভালো যে রান্না খেলে সেটা হজম করতেই ২/৪ দিন লেগে যায়।তাই বাধ্য হয়ে ইপ্তিকেই বেশির ভাগ দিন রান্না করতে হয়।কিন্ত ১ম রোজার দিনেই সেই স্পেশাল নুডুলস-রজনীগন্ধা রেসিপি দেখার পর থেকে ইশা জেদ ধরেছে। এই কয়দিন ইপ্তি কোনোরকম বুঝিয়ে সুঝিয়ে রেখেছে।কিন্তু ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে আজ আর কিছুতেই তা সম্ভব হবে না।

ইপ্তি এই কয়দিন বাহানা দিতে দিতে ক্লান্ত। সে ইশাকে বলেছে ফুলের দোকান ঘুরে সে রজনীগন্ধা পায়নি,যে দু এক দোকানে পেয়েছে তাও বাসি,পঁচা।ইশা মেনে নিয়েছিলো বলে বেঁচে গিয়েছিলো।আসলে ফুলের দোকানে যে রজনীগন্ধা নাই তা কিন্তু না,আসল কাহিনী হচ্ছে সেই রান্নার ইপিসোড টেলিকাস্ট হওয়ার পর থেকে রজনীগন্ধার দাম যেন আকাশ ছুঁয়েছে। তবু কিনতে ইপ্তির সমস্যা ছিলোনা কোন কিন্তু ঐ যে সেই স্পেশাল রেসিপি আর ইশার হাতের রান্নার কথা মনে পড়ে বেচারা বার বার পিছু হটে এসেছে।শুধু নুডুলস হলে তাও এক কথা ছিলো কিন্তু তার ভিতর আরো কত কি আর সবশেষে সেই রজনীগন্ধা তো আছেই।ইপ্তি বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করলো আজকেও কোন না কোন বাহানায় পার পেতে কিন্তু না আজ আর সফল হলো না।তাই অগত্যা বাধ্য হয়েই বেরিয়ে পড়লো রজনীগন্ধা কিনতে।যাবার সময় ইশা বলে দিয়েছে যেন আরো দুই প্যাকেট নুডুলস নিয়ে বাসায় আসে।

ইপ্তি ফুলের দোকানে দাঁড়িয়ে আছে,তার সামনেই সাদা ঝরঝরে,তরতাজা, সুগন্ধিময় রজনীগন্ধা।ইপ্তিকে দেখেই আসলে ইপ্তির কাঁদো কাঁদো মুখটা দেখেই দোকানকার তার পান চিবানো লাল রঙের দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললো-“ভাইজান কি ফুল নিবেন!”
প্রতিউত্তরে ইপ্তি শুধু হাত দিয়ে সেই রজনীগন্ধা দেখিয়ে দিলো।দোকানদার ফুল ইপ্তির হাতে ধরিয়ে দিলো।চড়া দামে সেই ফুল কিনে ইপ্তি বাসার দিকে রওনা হতে হতে কি ভেবে যেন তার বোনের কাছে ফোন দিলো।ইপ্তির বোনের বাসা ইপ্তির বাসা থেকে বেশি দূরে না, মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যাপার। ইপ্তি ভাবলো আজ না হয় ইফিতারি আপার বাসায় করবে।ইশাকে ফুল দেখিয়ে ম্যানেজ করে নিবে আর বলবে আপা ইফতারি করতে বলেছে আজ।যেই ভাবা সেই কাজ।ফোন বাজছে,বাজছে ৩ বারের বেলা আপা ফোন রিসিভ করলো।

-হ্যালো আপা,কিরে ফোন ধরিস না কেন!
-হ্যা ইপ্তি বল,আসলে নুডুলস এর প্যাকেট টা খুঁজে পাচ্ছিনা জানিস তাই ফোন ধরতে দেরি হলো।
~নুডুলস শুনেই ইপ্তি চুপসে গেলো,তারপর ও এক বুক সাহস নিয়ে বললো,ইয়ে মানে আপা আজকে ইফিতারিরে কি বানাচ্ছিস বাসায়?
-আর বলিস না, ভেবেছি আজ কেকা আপার নুডুলস রজনীগন্ধা ট্রাই করবো।তোর দুলাভাইকে বলেছি ফুল নিয়ে আসতে কিন্তু নুডুলস এর প্যাকেটটাই পাচ্ছিনা বুঝলি।
~ইপ্তি ঢোক গিলে বললো,ওহ আচ্ছা ভালো ট্রাই কর তাহলে।আমি রাখছি এখন।
-আরে শোন শোন, তুই আর ইশা আজ চলে আয়না আমাদের বাসায় ইফিতারি করে যা!
~আরে থাক আপা আজ না,অন্যদিন আসবো নাহয়।তুই বরং নুডুলস এর প্যাকেট খোঁজ বলে ফোন রেখে দিলো ইপ্তি।

ইপ্তি তার আপাকে ভাল করেই জানে,সব কিছুতে এক্সপেরিমেন্ট করতে তার বোন ছোটো বেলা থেকেই কতটা ভালবাসে।হয়তো দেখা যাবে সে অতিরিক্ত টেস্টি করার আশায় আর বেশি ফ্লেভার আনতে ফুল কুচি কুচি করে নুডুলস এর সাথে মিশায়ে দিবে।আর নুডুলস এর প্যাকেট যে দুলাভাইই উধাও করেছে সেটা বুঝতেও ইপ্তির আর দেরী হলোনা।পাশের দোকান থেকে ইপ্তি মনের দুঃখে দুই প্যাকেট নুডুলস কিনে নিলো ইশার কথা মত।

তবে বাসায় যাবার আগে স্যালাইন, গ্যাসের ওষুধ আর ডায়রিয়ার ওষুধ নিতেও ভুললো না ইপ্তি।অবশেষে এক হাতে রজনীগন্ধা, নুডুলস আর অন্য হাতে স্যালাইন আর ওষুধ নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে বাসার দিকে এগুতে থাকলো বেচারা।আজ ইফিতারির আগে কেন জানি তার মাথা ঘুরান্টি দেয়ার মত হচ্ছে, আজ মনে হয় তার রোজা ধরে গেছে তবে ইফতারি করার কোন তাড়া নেই তার আজ। সে হাঁটছে মনের বিরুদ্ধের অসীম সুখে তার প্রিয়তমার জন্য রজনীগন্ধা নিয়ে হাতে।কলিংবেলটার সামনে এসে ইপ্তি গভীর চিন্তায় ডুব দিলো। না জানি আজ ইফতারিতে ইপ্তির জন্য ঠিক কি অপেক্ষা করছে!

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত