রোজা নিয়ে ফারদিন আর আমার মধ্যে রোজ রোজ ঝগড়া হয়, ব্রেকাপ এর ভয় দেখিয়েও তাকে একটা রোজা রাখাতে পারলাম না। সে নাকি এখনও শিশু, সে রোজা রাখতে পারবে না। যতো আশকারা পেয়েছে ওর মায়ের থেকে। লাই দিয়ে দিয়ে ছেলেকে মাথায় তুলেছে। আমি তো বলেই দিয়েছি বিয়ের পর আমি রোজা রেখে ওর জন্য রান্না করতে পারবো না। ও বলল, মা তো আছেই! নাহ, এই ডোজেও কাজ হল না। রোজ রোজ একই ঝামেলা করতে করতে আমি অস্থির। আর ও অস্থির নতুন নতুন বাহানা খুঁজতে।
আমি যদি ওকে রোজা রাখার ১০ টা ভালো দিক দেখাই, ও রোজা না রাখার ১০০ অজুহাত এক মুহুর্তে দাড় করিয়ে দিতে পারে।
– কি বলো বাবু? আজ রোজা? আউচ… আমি তো ভুলেই গেছি। (ন্যাকামি)
– জানো না, সে এক লম্বা কাহিনী। আগের দিন ফ্রিজে পানি রাখি নি বলে বাসার সবাই মিলে জোর করে আমাকে পানি খাইয়ে দিয়েছে। ( ডাহা মিথ্যা কথা)
– ভোরে উঠতে পারি নাই, রোজা রাখবো কেমনে! (অথচ, ভোরে অনলাইনে পাইছি তাকে)
-ভুলে পানি খেয়ে ফেলেছি। (তিন নাম্বার হাত, অজুহাত)
– শুনছি রোজা রেখে নামাজ না পড়লে রোজা হয় না, আর আমারও না নামাজ মিস গেছে। ভাবলাম রোজা তো হবে না, তাই ভেঙে ফেলছি। (হাদিস শুনায় আমারে, মনটা চায় কান ফাটায়া দেই)
– জানো, টমি না রাগ করছে। আমাকে ছাড়া সে খাবেই না, কি করবো বলো! তাই রোজা ভেঙে আমি আর টমি দুপুরে একসাথে ইফতার করছি। (কুত্তার আবার অভিমান!)
– ইন্তিকার জন্মদিন ছিলো, পার্টিতে যাওয়ার পর ভুলেই গেছিলাম যে আমি রোজা। (আহা, নিষ্পাপ বান্দা)
– হা হা হা, আজ তো শুক্রবার, সরকারি ছুটি। আজকের দিনে কি কেউ রোজা রাখে?(ওরে আমার লজিক রে)
– পাশের বাসার ভাবী মারা গেছে, এই শোকে আমরা তিনবন্ধু আর রোজা রাখতে পারি নাই। (ভাবী মরছে তো তোর কি?)
– বন্ধুরা জোর করে সিগারেট খাওয়াইয়া দিছে। (কচি খোকা)
– পাশের বাসার ভাবীর পিচ্চি টা চকলেট গিফট করছে, চোখের সামনে কেমনে সহ্য করি? অতপর রোজা ভাইঙা গেছে। ( লোভী একটা)
এসব শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন একটা ছক কষে ফেলি আর দেখা করতে বলি। পার্কের কোনার সিট টা ওর ই পছন্দ করা আর আমার জন্যও বেশ সুবিধার হয়। চোখ বন্ধ করিয়ে সারপ্রাইজ দেয়ার নামে গাছের সাথে বেধে ফেলি। তারপর স্টুডেন্ট এর থেকে ভাড়া করা বেত দিয়ে বেধড়ক পিটাই আর বলতে থাকি,
“সব সহ্য করতে পারি বাট আমার সাথে এসব ফাইজলামি চলবে না। তুই তো রোজা রাখবি রাখবি সাথে তোর বাপও রোজা রাখবে। বল রোজা রাখবি?”
– “রাখবো তো রোজা, কাল থেকেই রোজা রাখবো। না না আজ থেকেই রোজা রাখবো।”
– “কেমনে বিশ্বাস করি?”
– “আমার কসম, আমার বাপের কসম, আমার চৌদ্দগুষ্টির কসম।”
– “রোজা রাখবি তো ঠিকমতো? একটাও মিস যাবে না তো? ”
– “আমি রোজা রাখবো, আমার বাপ রোজা রাখবে, আমার চৌদ্দগুষ্টি রোজা রাখবে, ছাড়ো আমাকে।”
ইচ্ছামতো পিটায়া ফার্মেসীতে নিয়ে গেছি, ওষুধ কিনে বাসায় পাঠাইছি। কিন্তু পুরো রাস্তা ই খেয়াল করলাম ফারদিন শুধু বিড় বিড় করেই যাচ্ছে। আমি ব্যাপার টা ইজিলি নিয়ে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলাম। কিন্তু, পরে জানতে পারলাম বেচারার মাথা খারাপ হয়ে গেছে এখনও শুধু বিড় বিড় করতেই থাকে, “আমি রোজা রাখবো, আমার বাপ রোজা রাখবে, আমার চৌদ্দগুষ্টি রোজা রাখবে।”