বিকালে নীলাদ্রির মায়ের নাম্বারটাতে কল দিলাম।ওপাশ থেকে তার মা বলে উঠলো,
=হ্যালো
=হ্যালো নিলু?জানু কই তুমি?আজ ভার্সিটিতে আসোনাই কেন?ভেবেছিলাম কালকের মত আজকেও তোমাকে নিয়ে ডেটিং এ যাব। কিন্তু তা আর হলোনা।আচ্ছা যাই হোক কালকে সকালে তাড়াতাড়ি চলে আসবে। ওপাশ থেকে ফোন টা কেটে গেল। নীলাদ্রি আমার ফ্রেন্ড। বাঁশটা ইচ্ছা করেই দিছি তাকে। পরদিন সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছি, কিন্তু নীলাদ্রিকে দেখলাম আমাদের থেকে দুরে একটা জায়গায় বসে আছে। আমরা তার কাছে গেলাম।
=কিরে দোস্ত কি হইছে তোর? মন মরা হইয়া আছস ক্যা?(আমি)
=দোস্ত গতরাতে ৩, ৩টা চড় খাইছি।
=কার হাতে?
=আব্বুর হাতে ২টা আর ভাইয়ার হাতে দুইটা।
=(মর শালি) কিন্তু কেন খাইচচ?
=দোস্ত তুইতো জানিস আমার কোনো বফ নাই।
=হুম জানিতো।
=গত কাল একটা ছেলে আম্মুর নাম্বারে কল দিয়া কইলো সে নাকি আমার বফ। আরো অনেক ফালতু কথা বলছে।এইগুলা শুইনা আব্বু আর ভাইয়া চড় দিছে।
=(লও ঠেলা) কার এত্তবড় সাহস। তুই খালি নাম্বারটা দে।
=নাম্বার দিয়া কি করবি।
=দোস্ত তুইতো জানিস আমি পড়ালেখা ছাড়া অন্য যেকোন কাজ খুব সহজেই করতে পারি।এই নাম্বারের পোলারে তোর সামনে হাজির করার দায়িত্ব আমার আর সিয়ামের।
=এই নে নাম্বার।
=দোস্ত নাম্বারটাতো (সিয়াম)
=সাথে সাথে সিয়ামের মুখ চেপে ধরে বললাম,নাম্বারটাতো বের করতে খুব সহজ হবে মনে হয়।
=ওকে ট্রাই কর।
=দোস্ত টাকা কত আছে?
=ক্যা?
=সকাল থেকে পেটে ইদুর দৌড়াইতেছে।
=চল সবাই মিলে বিরিয়ানি খেয়ে আসি।।
খাওয়া যখন শেস হল তখন সবাই গল্পে মেতে পড়লো। হঠাত আমি বলে উঠলাম, =সবার জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে।
=কি?
=অপেক্ষা কর।(আমি আস্তে আস্তে হাটতে হাটতে দরজার কাছে গেলাম) নিলাদ্রিকে ডাক দিলাম,
=নীলাদ্রি?
=হুম।
=গতরাতের ওইপোলাটারে পাইছি।
=কই?
=এইতো আমি সেই পোলা।(এই বলে দিলাম দোড়) পেছন থেকে সবাই বলে উঠলো হারামি?
এরপর তিনদিন পর ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।গেইটের সামনে দাড়াইয়া চারদিক দেখতে লাগলাম, এরপর বুকে ফু দিয়া গেইট দিয়া ডুকলাম।রুমে ঢুকবো এমন সময় কে জানি পেছন থেকে শার্ট টাইনা ধরলো।তাকাই দেখি নীলাদ্রি? ষাঁড়ের মত একটা চিল্লানি দিয়া অজ্ঞান হইয়া গেলাম।৫মিনিট পর জ্ঞান ফিরলো। চোখ খুইলা দেহি আমার চারপাশে ৬জন অগ্নিচক্ষু দিয়া তাকাই আছে।অর্নব,রিহান,তুর্জ,তুবা,নীলাদ্রি আর নিহা। নীলাদ্রি বলে উঠলো,
=ওই আমার সাথে এমন করল ক্যা?
=একসপ্তাহ আগের কথা মনে আছে?
=কি?
=তুই যখন আমার বাসায় গিয়া আম্মুরে বলছিলি আমি সারাদিন মেয়েদের পিছনে ঘুরি তখন আম্মু আমারে কয়টা চড় দিছে জানিস?
=কয়টা?
=৫টা।
সবাই একসাথে বলে উঠলো, কি? এভাবে আমাদের বন্ধুত্ব ভালোই চলছিলো। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেছি মাত্র এই মুহুর্তে নীলাদ্রির কল,
=দোস্ত তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে আয়।
নাস্তা না করেই রওনা দিলাম।৫ মিনিটের পথ ৩০ মিনিট মনে হল। গিয়ে দেখলাম নীলাদ্রি পুকুর পাড়ে বসে আছে।আমি ডাকলাম,
=নীলাদ্রি?(সে পেছন ফিরে দৌড়ে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো)কি করছিস ছাড়।
=দোস্ত আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।
=কি হয়েছে সেটাতো বল?
=আজ আমাকে দেখতে আসবে।
=so?
=তাদের পছন্দ হলে আংটি পরিয়ে দিয়ে যাবে।
=তো?
=এরপর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবে?
=খুশির খবর।
=দোস্ত আমি তোকে ভালোবাসি!
=কেন মজা করছিস?
=নিশ্চুপ আমি মজা করছিনা!
=যাহ বাড়ি যা।
গিয়ে সুন্দর করে সাজবি, তারপর একটা সেলফি তুলে আমাকে পাঠাবি। সে কান্না করতে করতে চলে গেল। সেদিন ছেলে পক্ষ নিলাদ্রকে পছন্দ করলো একসপ্তাহ পর বিয়ে। গায়ে হলুদের দিন রাতে আমি চুপি চুপি নীলাদ্রির রুমে গেলাম।দেখলাম বেচারী রুমের এককোণে বসে বসে কাদছে।হাতে একটা ছোট্ট বোতল, বোতলের গায়ে সুন্দর ভাবে লিখা, বিষ। আমি নীলাদ্রিকে ডাক দিলাম,
=দোস্ত বোতলের ভিতরে কি আসলেই বিষ নাকি পানি ঢুকাইচচ?(সে আমার উপস্থিতিতে ওবাক হল)
=খেয়ে দেখ। আমি বোতলের ঢাকনাটা খুলতে যাবো এমন সময় সে আমার হাত থেকে বোতলটা কেড়ে নিল।
=আমারে তো খাইতে দেসনাই এবার নিজে খেয়ে দেখ। সে ঢাকনা খুলতে যাবে এমন আমি তার হাত থেকে কেড়ে নিলাম আর ফেলে দিলাম।
=ওই ভালো কি তুই একাই বাসিস? আমি বাসিনা?
=তাহলে?
=তাহলে কি যানোনা? দিলাম তারে লইয়া দৌড়।অতএব কেল্লাপতে……