পান্তা ভাতের খিচুড়ি

পান্তা ভাতের খিচুড়ি

এই আমার জিলাপি কোই? রুমে ঢুকতেই সুপ্তির মুখে জিলাপির কথা শুনে আমার মুখটা কেমন যেন শুকিয়ে গেলো।একদম ভুলে গেছি।নামাজে যাওয়ার সময় মেয়েটা বারবার বলেছে জিলাপি আনতে।মসজিদের জিলাপি খাওয়াও নাকি বেশ সওয়াবের।ঠিক রোজা না রেখে নিয়মিত ইফতার করার মত।

সুপ্তির কথায় আমি কিছু বললাম না।আসলে এই জিলাপির মধ্যে কি এমন আছে।শুধু একটি মিষ্টি লাগে।এটুকুই।এই জিলাপি সহ কোন মিষ্টি জিনিস আমার কোনকালেই পছন্দ ছিল না আর এখনও নেই।কিন্তু আল্লাহ যে এমন জিলাপি পাগল বউ দেবে আমায় এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। সুপ্তি এবার আমার সামনে এসে চোখ পাকিয়ে বললো,

-আজকেও ভুলে গেছো।

সুপ্তির কথায় আমি শুধু মাথা নাড়ালাম।কি বলবো ভেবে পেলাম না।মেয়েটা বেশ রেগে গেছে।নামাজ না পড়ে জিলাপি খেয়ে উনি সওয়াব লাভ করবে।ব্যপারটা হাস্যকর হলেও এখন আমি হাসতে পারছি না।এমনিতেই বিপদে আছি,হাসলে যে কি হবে সেটা এমনিতেই আন্দাজ করতে পারছি। আমি সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললাম,

-সামনের শুক্রবারে শিওর নিয়ে আসবো।
-তুমি এখন আনবা।শুক্রবার তো দূরে থাক।

এতক্ষন চুপ করে ছিলাম সেটাই ভাল ছিল।এখন কথা বলে বিপদে পড়ে গেলাম।এখন জিলাপি পাবো কোই।এতক্ষনে মোল্লা সাহেবগুলা মসজিদ তালা নিয়ে বেচে যাওয়া জিলাপি গুলা নিয়ে বাসায় গিয়ে বউয়ের সাথে মজা করে খাচ্ছে।আর আমি খাচ্ছি ঝাড়ি। আমি সুপ্তির কাছে গিয়ে ওর গালে হাত রেখে বললাম,

-আসলে এখন তো আর জিলাপি পাওয়া যাবে না।সব তো শেষ।
-আমি জানিনা।আমার জিলাপি লাগবে।আর সেটা এখনই।

কথাটি বলেই মেয়েটা অন্য রুমে চলে গেলো।উফ কি যে একটা বিপদে পড়লাম।ফাজিল মেয়েটা যেটা বলবে সেটাই করতে হবে।নইলে তো এইযে দুই মিনিট হাটলেই ওনার বাবার বাসা,কিছু বললেই হনহন করে চলে যাবে।
আমি আর দাড়ালাম না।বের হলাম। দেখি জিলাপি পাওয়া যায় কিনা।

এসময় কেও আমার জন্যে জিলাপি হাতে দাঁড়িয়ে থাকবে না।তাই সুপ্তির হাত থেকে বাচার জন্যে বাজারের দিকে রওনা দিলাম।রোদে রিক্সার সিটটাও বেশ গরম হয়ে আছে।ঘরে বউ গরম আর বাইরে রিক্সার সিট।কোথাও শান্তি নেই,কোথাও না। ভাই এই জিলাপি দিয়ে মসজিদ মসজিদ গন্ধ বের হয়। আমার কথায় জিলাপি বিক্রেতা আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালেন।আসলে আমিই বা এটা কি বললাম।আমি ওনার দিকে তাকিয়ে আবারও বললাম,

-আচ্ছা মসজিদে দেওয়া জিলাপি আর এই জিলাপি কি একই?
-হ্যা ভাই,একই।তবে মসজিদের গন্ধ টা পাওয়া যাবে না।
-আমি যদি জিলাপি নিয়ে মসজিদের ভেতর থেকে ঘুরে আসি তাহলে কি গন্ধটা পাওয়া যাবে?

আমার কথায় জিলাপি বিক্রেতা এবার বোধও একটু বেশীই বিরক্ত হলেন।আমি আর ওনাকে কিছু না বলে জিলাপি কিনে ঘুরতেই দেখি সামনের হোটেলে বড় একটা ব্যনার।সেখানে বড় করে লেখা, তৃপ্তি বিরিয়ানি হাউজ।
নামটা দেখেই কেমন যেন তৃপ্তি পাচ্ছি।খেলে কি হবে সেটা নাহয় পরেই জানা যাবে।

কলিংবেল বাজাতেই সুপ্তি দড়জা খুলে দিল।মেয়েটা কি এখনও রেগে আছে নাকি ঠান্ডা হয়ে গেছে।আমি সুপ্তিকে কিছু না বলে জিলাপির প্যাকেটটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিতেই মেয়েটা অন্য প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললো,

-ওইটা কি?
-বিরিয়ানি।তুমি জিলাপি খাবা আর আমি বিরিয়ানি।ব্যাপারটা মজার না।
-হ্যা অনেক মজার।

কথাটি বলের সুপ্তি বিরিয়ানির প্যাকেটটা নিয়ে আমার হাতে জিলাপির প্যাকেট ধরিয়ে দিল।আরে এটা কি হলো।
খাবার টেবিলে বেশ চুপচাপ বসে আছি।আমার সামনের চেয়ারে সুপ্তি বসে আছে।শুধু বসে না,আমার জন্যে আনা বিরিয়ানি বেশ মজা করেই খাচ্ছে আর আমাকে ধরিয়ে দিয়েছে জিলাপির প্যাকেট।যে জিলাপি দেখলেই তার পাশ দিয়ে যেতাম না সেই জিলাপি নিয়েই এখন বসে আছি।আর আমার পছন্দের বিরিয়ানি এই ফাজিল মেয়েটা একাই খেয়ে সাবাড় করে দিচ্ছে।

আমি তাকিয়ে আছি সুপ্তির দিকে আর বিরিয়ানি আমার দিকে।আর এদিকে নিজেই নিজেকে শান্তনা দিচ্ছি, ধুর এটা তো বিরিয়ানি না,পান্তা ভাতের খিচুড়ি।পান্তা ভাতের খিচুড়ি কি আমি খাবো নাকি।না।কোন ভাবেই না।কোন মতেই না।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত