ঈদের বিশেষ গল্প

ঈদের বিশেষ গল্প

“এই ঈদে পথচারি শিশুদের কাপড় কিনে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে দিন” অামি থাকি শহরে।যেখানে থাকি তার পাশেই একটি বস্তি।পাশের বস্তি থেকে ১০ বছরের একটি ছেলে প্রতি দিন আমার জন্য ফুল কুড়িয়ে আনে।ফুলের দাম হিসেবে তাকে কিছু টাকা দেয়। ছেলেটির নাম হলো রাশেদ।বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন বলতে কেউ রাশেদের নেই।আজ থেকে ৫ বছর আগে তার বাবা-মা মারা যাই।তার বাবা একটি বেসরকারি চাকরি করতো।তার এক ছোট বোন ছিলো, বোনটির নাম ছিলো রাইশা।

খুব সুখি পরিবার ছিলো।কিন্তু ভাগ্যের কি খেলা একটি এক্সিডেন্টে রাশেদের বাবা-মা মারা যাই।আর রাশেদের ছোট বোন রাইশা হারিয়ে যাই।রাশেদ তার বোন কে খুঁজতে খুঁজতে চলে আসে এই ব্যস্ততম শহরে।কেউ কাউকে চিনে না। কেউ কারো আপন না।কেউ কাউকে সাহায্য করে না।তারি নাম ঢাকা শহর।এই ঢাকা শহরে এসে সে কোথাও থাকার জায়গা পেল না।টিউবলের পানি আর রাস্তায় পরে থাকা খাবার খেয়ে বেঁচে ছিল রাশেদ।এই রাশেদ অনেক মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছে,তাকে একটা কাজ দেওয়ার জন্য।কিন্তু কেউ তাকে কোনো কাজ দেয়নি। যখন সন্ধা হয়ে যায় তখন রাশেদ ফুটপাতে মাথার নিচে একটা ইট দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

এক ঘুমেই সেই সকালে সবার অাগে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ওঠে যায়।তারপর খুঁজতে থাকে কোথাও একটা কাজ আছে নি।কিন্তু কোনো কাজই আর পায় না রাশেদ।পেট ও আর চলে না।ক্ষুদার্থ পেট নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় রাশেদ।অনেক দিন হয়ে গেল কোনো কাজ পায় না।পরে অবশেষে রাশেদ ঠোকাই দলে নাম লেখাই।হয়ে গেল ঠোকাই রাশেদ।সবাই এক নামে রাশেদ কে চিনে।রাশেদের একটা দল আছে।দলের নাম “অসহায়দের সাহায্যকারী”।এক সময় তার সাথের সকল ছেলে-মেয়েরা রাশেদের সাথে এক জোট হয়ে কাজ করে এমন হাজারো পথ শিশুদের জন্য।

রাশেদের সাথে পরিচয় হওয়ার আগে একিদন আমি অফিস থেকে অাসার সময় দেখলাম একটি ছেলেকে একটি লোক মারতেছে।তাড়াতাড়ি করে আমি সেখানে গেলাম।গিয়ে লোকটি জিজ্ঞাসা করলাম আপনি ওরে মারতেছেন কেন? লোকটি বলল.এই ছেলে আমার কাছে টাকা চায়,আমি এরে টাকা দিতাম।বাংগতি নাই বললাম এর পরেও আমার কাছে টাকা খুঁজ।আমি বললাম টাকা নাই,দিতে পারবেন না তার জন্য কি এই ভাবে ছেলেটাকে মারতে হবে।আপনি ধনী লোক বলেই তো আপনার কাছে এই ছেলে টাকা চাইছে।আর আপনি ছিছি।

আমার কথা শুনে লোকটি কোনো উত্তর দিত পারল না।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আমি বললাম আপনে আজকের পর থেকে আর এভাবে কোনো পথ শিশু কে মারবেন না।সেখান থেকে ছেলেটিকে এনে জিজ্ঞাসা করলাম।তর এমন অবস্থা কেন।ছেলেটি প্রথম যে কথা গুলো,সেগুলো বলছে। পরে জানতে পারলাম রাশেদ আমার পাশের বস্তিতে থাকে।প্রায় সময় রাশেদকে আমি দেখতে যেতামম বস্তিতে। তার অসহায় শিশুদের জন্য আমি রাশেদকে মাসে মাসে টাকা দিতাম।সারা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এমন হাজারো পথ শিশু আছে।তাদেরকে আমরা কখনো সাহায্য করি।

বরং তাদের কে দেখলে আমরা দূরে চলে যাই।আমরাই তো এমন হাজারে পথ শিশুদের জন্য কাজ করতে পারি।তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে পারি।একিদন রাশেদ সকাল বেলা আমার বাসায় এসেছে ফুল নিয়ে।রাশেদকে অামি কিছু টাকা দিলাম।তারপর রাশেদ বলতেছে, ভাই আল্লাহর রহমতে এহন আমি পুলাপানের জন্য কিছু করতে পারলাম।অাশা আছে সামনে রোজার ঈদে সবাইরে লইয়া এক সাথে ঢাকা শহরের সকল পথ শিশুদের জন্য ঈদের নতুন কাপড় কিনব।তাই এহন থেইকা টাহা জোগাইতাছি।সবার কাছ থাইকা টাহা অানতেছি।সবাই আমগোরে টাহা দেয়। আমি বললাম আমিও তদের পাশে আছি।এবছরের ঈদ আমি তদের সাথে কাঠামো। বাড়িতে যাইমু না।তদের মতো পথ শিশুদের সাথে আমি ঈদ করুম।

আসুন আমরা মিলে সবাই পথ চারি শিশুদের পাশে এসে দাঁড়ায়।তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়।তাদের শরীলে নতুন কাপড় পড়িয়ে দেয়।এমন হাজারো পথ শিশু আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।আমরা একটু সাহায্য করব বলে।আমরা যদি তাদেরকে সাহায্য করি।তাহলে তারা ঈদ করতে পারবে আনন্দে।এই বছর ঈদ আনন্দে আমরা সবাই পথ শিশুদের পাশে এসে দাঁড়ায়। এই ঈদের শপিং এর টাকা থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে পথচারি শিশুদের কাপড় কিনে দিন ওদের মুখের হাসি ঈদের মজাকে আরো বাড়িয়ে দিবে।তাহলেই আমাদের সাহায্যে এমন হাজারে পথ শিশু ঈদ করতে পারবে আনন্দে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত