ফেসবুক ফ্রি রিচার্জ

ফেসবুক ফ্রি রিচার্জ

হঠাৎ অপরিচিত একটা আইডি থেকে ছোঁয়া নামের একজন মেয়ের ম্যাসেজ- ভাইয়া রিকোয়েস্ট টা একসেপ্ট করেন। ম্যাসেজ পড়ে রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে জিজ্ঞেস করলাম কি করেন? কোথায় পড়েন? সে জানাল-

— ভাইয়া আমি ভিকারুননিসায় ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আর আপনি?
— আমি অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ছি।
— ও, তাহলে তো আমি আপনার চেয়ে অনেক ছোট আপনি আমাকে তুমি করে বললে খুশি হব।

আমি তো আপনার ছোটবোনের মতনই তাইনা? এরপর থেকে ছোঁয়াকে আমি তুমি করেই বলি। মাঝে মাঝে ছোয়াঁ ম্যাসেজ দিত। আমিও মাঝে মধ্যে ম্যাসেজ দিয়ে খোঁজ খবর নিতাম। একদিন রাত এগারোটার দিকে সে ম্যাসেজ দিয়েছে ভাইয়া আছেন? ম্যাসেজ দেখে রিপ্লে করলাম- হ্যাঁ আপু বল। “ভাইয়া আমার মোবাইলে তো ব্যালেন্স নেই, বাসাতেও কেউ নেই বিশ টাকার কার্ড একটা দিতে পারবেন? আজকে কলেজে যাইনি তো বান্ধবীর কাছ থেকে পড়া জেনে নিতাম। আমি কালকেই দিয়ে দিব।” ছোটবোন চেয়েছে না দিয়ে পারি কি করে? ৫০ টাকার একটা কার্ড কিনে নম্বর পাঠিয়ে দিলাম।

সে বেশ খুশি হয়ে বলল এতো টাকার কার্ড দিতে গেলেন কেন? আমি কালই দিয়ে দিব। এরপর আবার একদিন রাতে ছোঁয়ার ম্যাসেজ- ভাইয়া আছেন? রিপ্লে করলাম- হ্যাঁ আপু বল। “জানেন ভাইয়া বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে। মোবাইলে টাকা নেই ফেসবুকে আমাকে ও ব্লক করে রেখেছে। বিশ টাকার একটা কার্ড দিতে পারবেন ভাইয়া?” পকেটেই একটা কার্ড ছিল, ঘসে নম্বর পাঠিয়ে দিলাম। সে বলল, ভাইয়া আমি কালই আপনাকে ফেরত দিব। এরপর থেকে তেমন একটা ম্যাসেজ আদান- প্রদান হত না। মাঝে মাঝে শুধু কার্ডের প্রয়োজনে ম্যাসেজ দিত। আমি ছোটবোনের মতন ভেবে দিয়ে দিতাম।

একসময় কার্ডের জন্যও তার ম্যাসেজ আসা বন্ধ হয়ে গেল। দীর্ঘদিন থেকে তার কোন ম্যাসেজ নেই দেখে প্রোফাইলে গিয়ে দেখলাম তার ১০হাজারের বেশি ফলোয়ার হয়ে গিয়েছে। ভাবলাম সে বেশ ফেমাস হয়ে গিয়েছে, এখন এরকম কার্ড দেয়ার মতন অনেক ভাই সে পেয়ে গেছে, তাই আমাকে আর প্রয়োজন পড়ে না। ধীরে ধীরে ভুলে গেলাম ছোঁয়া নামের আমার একটা ফেসবুকীয় ছোট বোন ছিল। মাস ছয়েক পরের কথা একদিন রাত প্রায় একটার দিকে বেলকনিতে বসে গল্পের বই পড়ছি হঠাৎ মোবাইলে টুইং করে ম্যাসেজের শব্দ হল। মোবাইল ফোনের লক খুলে দেখলাম, রানা নামের একটা ছেলে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে-

— হ্যালো ভাইয়া কেমন আছেন?
— ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন?
— জি ভাল। ভাইয়া আপনি কিসে পড়েন?
— ফাইনাল ইয়ারে। আপনি?
— আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, ঢাকা কলেজে।
— ও আচ্ছা।
— ভাইয়া আমিতো আপনার চেয়ে অনেক ছোট আমাকে তুমি করে বলবেন।
— আচ্ছা ঠিক আছে। কিছুদিন পর আবার রানার ম্যাসেজ-
— ভাইয়া আমার একটা উপকার করবেন?
— কি উপকার?
— গার্লফ্রেন্ডের সাথে ভীষণ ঝগড়া হয়েছে।

ও আমাকে ব্লক দিয়েছে। আমার নম্বরে ৫০টা টাকা পাঠাবেন? আমি কালকেই দিয়ে দিব। সে একটা নম্বর লিখে দিয়ে বলল, প্লীজ ভাইয়া পারলে দিয়েন। ছোট কোন ভাই-বোন নাই বিধায় কেউ ভাইয়া বললে খুব মায়া লাগে। ৫০টাকা পাঠিয়ে দিলাম। বেশ কিছুদিন রানার আর কোন খবর নাই। প্রায় মাসখানেক পর হঠাৎ আরেকদিন রাতে রানা ম্যাসেজ পাঠাল-

— ভাইয়া আছেন?
— আমি রিপলে করলাম, হ্যাঁ। কেমন আছো?
— ভাল না ভাইয়া, গার্লফ্রেন্ড খুব অসুস্থ। মোবাইলে টাকা নেই, খবর নিতে পারছিনা। আমার নম্বরে ২০ টা টাকা পাঠাবেন ভাইয়া? আগের বারের টা সহ কালকেই দিয়ে দিব।

— আমি রিপলে করলাম, ঠিক আছে, মিনিট দশেক পরে পাঠিয়ে দিব। এরপর সে থ্যাংইউ লিখে সাথে একটা লাভ রিএক্ট দিল। রানার নম্বরে টাকা পাঠাতে গিয়ে, কেন যেন মনের মধ্যে একটা খটকা লাগল। চ্যাটবক্স ওপেন করে, রানার সাথের কনভারসেশন, ঘাটতে শুরু করলাম। বেশকিছু ম্যাসেজ ঘাটার পর দেখলাম, ছোঁয়ার ম্যাসেজ- ভাইয়া আমি ছোঁয়া ভিকারুননিসাতে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। বুঝলাম ভিকারুননিসা হয়ে গেছে ঢাকা কলেজ, বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেছে গার্লফ্রেন্ড।

রানা হয়ে গিয়েছিল ছোঁয়া, ছোঁয়া হয়ে গেছে রানা আর আমি হয়ে গেলাম বোকা? রাগে রানাকে একটা ম্যাসেজ পাঠালাম- ছোঁয়া থেকে রানা হলে কবে? কিছুক্ষণ পর ম্যাসেজ সিন করে কোন রিপ্লে দিচ্ছে না দেখে ওর প্রোফাইলে যেতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু প্রোফাইলে যাবার চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলাম, সে আমাকে ব্লক দিয়েছে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত