রাত্রিবেলা তার ওপর শিশির ঝরে টুপটুপ করে। সকালবেলা সূর্যের নরম আলোয় ভরে ওঠে চারপাশ। বেলা বাড়লে গাছের পাতার ছায়া পড়ে তার ওপর আর ঝিরিঝিরি নরম পাপড়ি গজিয়ে ওঠে।এইরকম দিনরাত্তির আলো আর বাতাসের আদরে ফুলের মধ্য শুয়ে থাকে নরম তুলতুলে মিষ্টি ফলের দানা।
মা ফল গর্ব আহ্লাদে টুকটুক করে মাথা দোলায় আর ভাবে -আহা ঝরে যেন না যায়। শত্রুর চোখে ধুলো দিয়ে পেকে টুসটুসে যেন হয় আমার মত।
পাশের গাছটায় বাসা বেঁধেছে রঙিন বেনেবউয়ের দল। তারা এদিক ওদিক উড়ে বেড়ায়। কত খাবার চারদিকে। সারাদিন মুখ চলছে তো চলছেই। মা-পাখির চোখ কিন্তু বুনো ডুমুরের কুঁড়িটার ওপর। আর একটু পাকলেই কী চমৎকার স্বাদ হবে ভেবেই ঠোঁটে জল চলে আসে।
ছোট্ট ফলটার যেদিন চোখ ফুটল পাতার আড়াল থেকে বাইরে আসবার জন্য সে ছটফট করে উঠল। মা’র নিষেধ ভুলে সবে টুসটুসে মুখটা বার করেছে, মাথা ঝাঁকিয়ে শিশির ঝেড়ে ফেলেছে কি ফেলেনি, মা বেনেবউ ঝাঁপিয়ে পড়ল তার ওপর। অনেকদিন থেকেই তক্কে তক্কে ছিল সে।
দু’তিন ডাল নিচে ছোটখাট বাঘের মত বুনো বেড়ালটা আড়মোড়া ভেঙে অপেক্ষা করছিল। মিষ্টি ডুমুরের লোভে আসে কি না দেখা যাক। বেচারা মা বেনেবউ! খাওয়া শেষ করে ঠোঁটটা পালকে ঘসতে পর্যন্ত পারেনি, বনবেড়ালের থাবা এসে পড়ল তার ঘাড়ে।
খানিকটা খেয়ে খানিকটা ছড়িয়ে হাত চাটতে চাটতে গাছের গোড়ায় বসে ভাতঘুম এসে গিয়েছিল ওর। বনের অন্ধকারে হায়নার চোখ জ্বলে উঠল। বুনো বেড়ালটা একেবারে শেষমুহুর্তে বুঝতে পেরেছিল,পালাতেও চেয়েছিল, কিন্তু তার আগেই বিদ্যুতবেগে হায়নাটা এসে পড়ল তার ঘাড়ে।
ভালই হল খাওয়াটা। হায়না ঢেকুর তুলে জলের কাছে যাবার জন্য উঠে দাঁড়াতেই চোখে অন্ধকার দেখল। বিরাট ভারী একটা কি যেন আচমকা তার ওপর। সে খানিকক্ষণ লেজ আছড়াল ছাড়া পাবার জন্য। তারপর নেতিয়ে গেল আস্তে আস্তে।
বাঘটা তার শিকার ছেড়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। খুব খিদে পেয়েছে। মরা শিকারের চারপাশে একপাক ঘুরে নিল সে। আঃ! অনেকক্ষণ ধরে খাওয়া যাবে। বেশ অনেকটা মাংস।
কিন্তু আনন্দটা বেশিক্ষণ উপভোগ করার আগেই মাথার মধ্যে যেন আগুনের একটা বল ফাটলো। তারপর আরও কয়েকটা। চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল সে।
আকাশমুখো বাঘের নড়াচড়া একদম থেমে গেলে পর অনেক গাছের ভিড় থেকে একটা গাছ আলাদা হয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এল মরা বাঘটার কাছে।
একী! এটা তো গাছ নয়। গায়ে বেঁধে রাখা ডালপালাগুলো খুলে ফেলে বেরিয়ে এল একটা মানুষ। চোরাশিকারী। তার মুখে লোভ চকচক করছে। বাঘের লোম, নখ, চামড়া সবই খুব দামি। বেশ বড় বাঘটা। ভালই লাভ হবে।
হঠাৎ খুব জোরে বাঁশি বেজে উঠল। তার উত্তরে এদিক সেদিক থেকে আরও কতগুলো। জঙ্গল পুলিশ ঘিরে ফেলেছে তাকে। দেখলেই গুলি করবে। ক্রমশ পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে তার দিকে। আর পালাতে পারবে না বুঝতে পেরে আকাশমুখো বাঘটার পাশে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল সে।