তড়াক করে লাফিয়ে উঠল তুয়া। হাত চালাল বালিশের তলায়। নেই। নেই তো। বালিশটা সরিয়ে রাখল পাশে।না। চাদরের সাদা ফ্যাটফ্যাটে রঙ শুধু ক্যাটম্যাট করে তাকিয়ে আছে। হলুদ, গোলাপি, সবুজ ডিমের চিহ্নমাত্র নেই। অথচ এখানেই তো রেখেছিল।স্পষ্ট মনে আছে তুয়ার।
তুয়াকে ডেকে দিয়েই মা সরে গিয়েছিলেন ড্রেসিংটেবিলের কাছে। ঝাড়ন বুলিয়ে ধুলো মুছছিলেন।রোজকার মতই।ওখান থেকেই ধমকের গলায় বললেন, “ক’টা বাজে খেয়াল আছে? সাড়ে আটটা।স্কুল ছুটি বলেই কি এত বেলা পর্যন্ত বিছানায় পড়ে থাকতে হবে?সাপের পাঁচ পা দেখেছিস নাকি?”
“না। খরগোশের ডিম।”
“অ্যাঁ? কী?”
“খরগোশের ডিম মা। বালিশের তলাতেই তো রেখেছিলাম। কোথায় গেল? ও মা?”
“বোকার মত কথা বলিস না তুয়া।খরগোশের ডিম হয় না।”
“সাপেরও পা হয় না মা।”
কেমন যেন চমকে ওঠেন মা, “তর্ক করছিস? তুই আমার মুখে মুখে তর্ক করছিস?”
“তর্ক করিনি তো। সাপের পা হয় না মা। সত্যি সত্যি। সাপ বুকে ভর দিয়ে হাঁটে। বিজ্ঞান বইয়ে লেখা আছে আমাদের।”
এবার মা হেসে ফেলেন। বলেন, “আর বিজ্ঞান বইয়ে বুঝি লেখা আছে খরগোশের ডিম হয়? হ্যাঁ রে বিদ্যেধরী?”
কাতর স্বরে বলল তুয়া, “হয়েছিল গো মা। সত্যি সত্যি। একটা সাদা খরগোশ, না পুরো সাদা না, কানগুলো কালো কালো , এসে আমাকে বলল, আমার ডিমগুলো লুকিয়ে রাখো একটু, না হলে চিলে নিয়ে যাবে। তারপর আমি বালিশের তলায় ডিমগুলো লুকিয়ে রেখে দিলাম। কী সুন্দর সুন্দর ডিম সব! গোলাপি, সবুজ, হলুদ, লাল। ঠিক জেমসের মত। শুধু জেমসের থেকে একটু বড় বড়, আর বেশি গোল গোল। আচ্ছা মা, চিল ডিমগুলোকে নিয়ে কী করবে?”
হাসি চাপেন মা, “কেন, তুই জিজ্ঞেস করিসনি খরগোশকে?”
“না। জিজ্ঞেস করার আগেই তো ফুড়ুত করে পালিয়ে গেল। বলো না মা, কী করবে চিল ডিমগুলোকে নিয়ে?”
“ওমলেট করে খাবে হয়ত।ডিমের ডালনাও করতে পারে।”
“মা! ওত সুন্দর সুন্দর ডিম কেউ খেয়ে নিতে পারে নাকি? ইশ!”
“কেন? তুই জেমস খাস না নাকি? তখন তো বেশ চুষে চিবিয়ে খেয়ে নিস। তখন?”
“না গো মা, চিল বোধহয় ঘর সাজাতে নিয়ে গিয়েছে ডিমগুলো। যা সুন্দর দেখতে।”
“শোন রে বোকা মেয়ে, তুই স্বপ্ন দেখছিলি। ঘুমানোর আগে খরগোশের গল্প পড়ছিলি কিছু? তাই স্বপ্নে খরগোশ এসে তোর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছিল। স্বপ্ন মিথ্যে। খরগোশের ডিম মিথ্যে। তাই চিল কিচ্ছু নেয়নি। এখন ওঠ দেখি। দাঁত ব্রাশ করে রান্নাঘরে আয়। দুধ পাউরুটি খেয়ে পড়তে বস। অঙ্ক নিয়ে বসবি আগে। ছুটির ক’দিন কষে অঙ্ক করে নে।”
মা তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘরের দিকে রওনা হয়েছিলেন। পিছন থেকে তুয়া বলল, “আমার অঙ্ক করতে ভালো লাগে না। একটুও না।”
“না লাগলেও করতে হবে। নাহলে আমিও বলব, আমার পাস্তা বানাতে ভালো লাগে না,চকোলেট কেক বানাতে ভালো লাগে না। রাতের বেলা তুয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে শুতে ভালো লাগে না। তখন কি ভালো লাগবে তোর? ভালো মুখে বলছি তুয়া, অঙ্কখাতা বই নিয়ে বসো। গত ইউনিট টেস্টে পাঁচ পেয়েছ পনেরোতে। সবে তো ক্লাস ওয়ানে পড়ো তুমি। এখনই অংকের নাম্বারের এই অবস্থা হলে সারা জীবন তো পড়েই আছে। এবার অংকে ভালো নাম্বার না পেলে পিঠ তোমার আস্ত থাকবে না।তখন তোমার খরগোশ তোমাকে বাঁচাতে আসবে না।”
মা যখন ভীষণ রেগে যান তখনই তুমি করে বলেন। জানে তুয়া। তাই গোঁজ হয়ে বিছানায় কিছুক্ষন বসে থেকে উঠল। নীরবে মুখ ধুয়ে দুধ পাউরুটি খেল। ঝলমলে রোদ এসে পড়েছে রান্নাঘরের বারান্দায়। সেই রোদ ছুঁয়ে পিড়িক পিড়িক নাচছে একটা চড়ুই।
এই সুন্দর সকালে অঙ্ক করতে কারো ভালো লাগে? কিন্তু মা ছাড়বেন না। বসতেই হবে। বসার আগে যতটুকু সময় পাওয়া যায়। ফুলগাছ দেখার নাম করে সামনের ব্যালকেনিতে গেল। দেখল সামনের লনে চেয়ার পেতে বসেছেন দাদুন। হাতে চায়ের কাপ। কিন্তু চুমুক দিতে যেন ভুলেই গিয়েছেন। তাকিয়ে আছেন গোলাপের ওপর ভোঁ ভোঁ শব্দে উড়ে বেড়ানো বোলতাটার দিকে। তুরতুরে পায়ে বাগানে গিয়ে দাদুনের কোলে ঝাঁপাল তুয়াও, “দাদুন অঙ্ক করতেই হবে? আমার যে অংক করতে একটুও ভালো লাগে না।”
তুয়ার মাথায় আদর করে চাপড় মেরে বললেন দাদুন, “অঙ্ক তো সবাইকে করতে হয় রে সোনা। অঙ্ক ছাড়া কি জীবন চলে?”
“মোটেও সবাইকে করতে হয় না।পাশের বাড়ি তিথিদিদি, কলেজে পড়ে। ওকে করতে হয় না। ইতিহাস আর কী কী যেন কঠিন কঠিন নামের বই পড়তে হয়। তবে অঙ্ক মোটেও না।তোমাকেও তো অংক করতে হয় না।”
“আরে তিথিও তোর মত বয়সে অংক করেছে। তাই না আজ ওই কঠিন কঠিন নামের বই পড়ছে। আর আমাকে তো অঙ্ক করতে হয়। সবসময়। তোর বাবাকে। মাকেও।”
“তোমাকে অঙ্ক করতে হয়? তুমি তো রিটায়ার করে গিয়েছ। সারাদিন পেপার পড়, বই পড়, আর বাগানে ফুলগাছ লাগাও।বাবাওস্কুলে গিয়ে দাদাদের বাংলা পড়ায়। আমি যেন জানি না, না? আর মা অঙ্ক করে? কখন করে শুনি? মা শুধু রান্না করে, ঘর গোছায়, আমাকে বকে। আর পারুলদিদিকে কাজ বুঝিয়ে দেয়। তোমরা কেউ অংক করো না।শুধু আমাকেই অংক করতে হয়।”
“আমাদের সব কাজের মধ্যেই অঙ্ক আছে। এমনকি পারুলের কাজের মধ্যেও। অমন করে মাথা নাড়িস না। বুঝিয়ে দিচ্ছি, দাঁড়া। আগে তুই বস দেখি ওই মোড়াটাতে।”
বেতের মোড়াটা টেনে এনে দাদুনের সামনে রাখে তুয়া।তারপর দাদুনের মুখের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে থাকল।
দাদুন বলতে শুরু করলেন, “আচ্ছা অংক মানে কী? যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, এই তো? তার মানেই তো হিসেব। এই ধর আমি বাজারে গেলাম। আমার কুট্টিটার জন্য চিংড়ি মাছ কিনতে।আমার কুট্টিটা চিংড়ি খেতে বেজায় ভালোবাসে কিনা। তাই তো?”
খুশি খুশি মুখে মাথা নাড়ে তুয়া।
“তা কিনলাম। মাছ তো পাঁচশ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। আমি কিনলাম সাড়ে সাতশ গ্রাম। আমাকে কত টাকা দিতে হবে কী করে বুঝব? হিসেব করে? তা অঙ্ক করলাম না আমি? শুধু আমি কেন, যে লোকটা মাছ বিক্রি করছে সেও তো হিসেব করেই দেখবে আমি ঠিক টাকা দিচ্ছি কিনা। তবে অঙ্ক তো সেও করল। তাও আবার মুখে মুখে।”
চুপ করে বসে থাকে তুয়া।ভাবে। দাদুন আবার বলেন, “আবার দ্যাখ তোর বাবাকে স্কুলে পৌঁছাতে হয় সাড়ে দশটায়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটা পাঁচ মিনিটের। তারপর অটো করে আরো কুড়ি মিনিট। অটো থেকে নেমে রিক্সা।সেটাও ধর আরো দশ মিনিট। এই সময়গুলো যোগ করে করেই তো তোর বাবা ঠিক করবে কতক্ষণ আগে রওনা দেবে। তাই তো? তাহলে বাবাও স্কুলে যাওয়ার জন্যও অঙ্ক করল। করল না?”
“হ্যাঁ।” বুঝদারের মত মাথা নাড়ল তুয়া, “সে তুমি করলে। বাবাও না হয় করল। কিন্তু মা? মা তো বাজারে যায় না, স্কুলে যায় না।মা কে অঙ্ক করতে হয় না।”
“হয় তো। ধর ফ্রিজে সাতটা ডিম আছে। এবার মা রান্না করবেন। ক’টা করবেন? মা ভেবে নিলেন, চারজনের জন্য চারটা। তুয়াকে স্কুলে টিফিন দিতে হবে একটা ডিমসেদ্ধ।রইল বাকি দুটো। তাহলে এখনই বাজার থেকে ডিম কিনে আনিয়ে ফ্রিজে ভরে রাখতে হবে। তা যোগ, বিয়োগ করতে হল তো। তারপর ধর মা প্যানকেক বানাচ্ছেন।কতটা ময়দায় কতটা ডিম লাগবে হিসেব করতে হবে তো মাকে। তারপর ধর পারুল। ঘর মুছবে। কতটুকু জলে একটা ঘর মোছা যাবে, তাতে কতটুকু ফিনাইল মেশাবে, সেটাও তো হিসেব। অঙ্ক।”
ধুস। সে তো এমনি এমনি হয়ে যায়।
“পৃথিবীর কোনো কিছুই এমনি এমনি হয়ে যায় না রে । সবই শিখতে হয়। ফারাক একটাই, সব শেখা চোখে দেখা যায় না। এখন আর বকবক না। পড়তে যাও। এখন ঠিক করে পড়ে নাও। তাহলে বিকেলে আমরা ঘুরতে যাব। কেমন তো? এখন যা,মা যে অঙ্কগুলো করতে দিয়েছে করে ফ্যাল।”
এইজন্যই দাদুনকে এত ভালো লাগে তুয়ার।সব সময় ঝলমল করছেন হাসিতে গল্পে। পড়ার টেবিলে এসে বসল তুয়া। সামনে খোলা অঙ্ক খাতা।কয়েকটা অংক লিখে দিয়ে গিয়েছেন মা।যোগ, বিয়োগ, গুণ। সেদিকে তাকিয়ে হাই উঠল তুয়ার।
আগে তুয়ার পড়ার টেবিল জানালার সামনে ছিল। তুয়া হাঁ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকত বলে মা টেবিল টেনে এনে দেওয়ালের কাছে রেখেছেন। এখান থেকেই জানালার দিকে কাতর চোখে তাকাল তুয়া। ইশ। জানালা দিয়ে কী সুন্দর বাগানটা দেখা যেত। ঘাস, পাতা, ফুল, ঝোপঝাড়। প্রজাপতি।হাওয়া আসত। বর্ষাকালে বৃষ্টির ছাট। যাক গে, ভেবে আর কী হবে? তুয়া অংক খাতায় মন দিল।
আরে একি? পায়ে সুড়সুড়ি দেয় কে? একি? কে উঁকি দিচ্ছে টেবিলের নিচ থেকে? এই তো খরগোশটা। সাদা গা, কালো কান।পুঁতির মত কালো কালো চোখে তুয়াকেই দেখছে।
দুই
উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে পড়ে তুয়া, “এই তো তুমি! তবে মা যে বলল, তুমি স্বপ্ন?”
“ধ্যাত।স্বপ্ন হব কেন? আমাকে ছুঁয়ে দেখো। কেমন? স্বপ্ন কি ছোঁয়া যায়?”
প্রথমে ভয়ে ভয়েই হাত বাড়িয়েছিল তুয়া। খরগোশের নরম শরীরটা হাতে লাগতেই খুশি ছড়িয়ে পড়ল ওর মনে। কী নরম! যেন তুলোর বল একটা। ঝামুরঝুমুর লোম।বিলি কাটতে কাটতে তুয়া বলল মনেমনে, ইচ্ছে করছে কোলে তুলে নিয়ে সবাইকে দেখাই। বিশেষ করে মা’কে।
কী করে যেন খরগোশটা তুয়ার মনের কথা বুঝছে গেল। বলল, “তোমার মা আমাকে দেখতেই পাবেন না।”
“কেন? তুমি তো স্বপ্ন না। সত্যি সত্যি।তবে?”
“হ্যাঁ স্বপ্ন না। তবে সত্যি সত্যিও নই।মানে সত্যি,তবে অন্য রকমের সত্যি।”
“কী সব বলছ, কঠিন কঠিন কথা!”
“কিচ্ছু কঠিন না। এই ধরো তোমাদের এই যে পৃথিবী। তোমরা আছ, বাবা মা আছেন,বন্ধুবান্ধব, পাড়াপ্রতিবেশি সবাই আছেন। এটা একটা পৃথিবী। তার সঙ্গেই আরেকটা পৃথিবী আছে যেটা দেখা যায় না। কিন্তু আছে। কখনো কখনো দুই পৃথিবীর সীমাটা ভেঙে যায় আর ওই পৃথিবী থেকে টুক করে পশু পাখি, জীব তোমাদের পৃথিবীতে ঢুকে পড়ে। যেমন আমি পড়েছি। তবে আমাদের দেখতে পায় শুধু বাচ্চারাই। বড়দের মনে অবিশ্বাস। তাই তারা দেখতে পায় না। বুঝলে? না বুঝলে তো না বুঝলে। আমার বয়েই গেল। এখন আমার ডিমগুলো দাও দেখি। আমি যাই। মেলা কাজ পড়ে আছে।”
লজ্জায় মাথা চুলকে বলল তুয়া, “ডিমগুলো না হারিয়ে গিয়েছে। বালিশের তলায় রাখলাম। কিন্তু কোথায় যে গেল!”
“কোথাও যায়নি। ঐ যে চাদরটা উঁচু হয়ে আছে।ওখানে দেখো।”
“না না। ওখানে নেই। মা বিছানা গুছিয়ে রেখেছে। ঝাড়ু দিয়ে ঝপাং ঝপাং করে ঝেড়েছে। ওখানে ডিম থাকতেই পারে না।”
“দুত্তোর। ভালো করে না দেখেই কথা বলে। চোখ খুলে দেখো, চাদরটা উঁচু হয়ে আছে।ওখানেই আছে ডিমগুলো।”
ওমা! তাই তো! চাদরটা তুলতেই ঝলমল করে উঠল চারপাশ। গোলাপি, হলুদ, বেগুনী,সবুজ, রঙবেরঙের ডিমগুলো। তবে তখন দেখতে পেল না কেন?
খরগোশ বলল, “একটা ব্যাগ দাও দেখি। ডিমগুলো নিয়ে যাই।”
“ব্যাগ কোথায় পাব?”
“ওই তো তোমার স্কুলের ব্যাগটা ঝোলানো আছে। ওটা তো এখন লাগছে না। ওটাই দিয়ে দাও। ভরে নিয়ে যাই ডিমগুলো।”
ডিমগুলো ব্যাগে ভরতে গিয়ে থমকে গেল খরগোশ, “একটু গুণেগেঁথে বলে দাও তো কোন রঙের ডিম ক’টা আছে?” খুব খুশি হয়ে গুনতে বসে গেল তুয়া, “গোলাপি চারটে, হলুদ তিনটে,সবুজ চারটে,আর বেগুনী দুটো। মোট তেরোটা।”
আবার বলল খরগোশ, “আরেকটু হিসেব করে দাও দেখি।এই ডিমগুলোর মধ্যে দুটো সবুজ আর একটা গোলাপী ডিম নেবে আমার বন্ধু কাঠবিড়ালী।”
“দাঁড়াও দাঁড়াও, খাতাতে হিসেব করে বলছি,” তুয়া বলল।
“হল তোমার? তবে এবার বলো দেখি আরো এগারোটা ডিম আছে কচ্ছপের কাছে। সব মিলিয়ে কতগুলো হল? তারপর আরো একটা ডিম দিতে হবে প্রজাপতিকে। বেচারির কাছে ডিম নেই কিনা। ব্যাস এবার বাকি ডিম যা থাকল আমাদের চার ভাইবোনের মধ্যে ভাগ করে দাও। বলো এবার প্রত্যেকের কাছে কটা করে ডিম থাকল?”
“উফফ! এত হিসেব! ঘুমই পেয়ে গেল।” তুয়া টেবিলের ওপর মাথা গুঁজে দেয়।
রান্না, স্নান সেরে মা এলেন তুয়াকে স্নান করার জন্য ডাকতে। ঘরে ঢুকতে গিয়েই হোঁচট খেলেন। তুয়ার স্কুলব্যাগ! দেখেছ দুষ্টু মেয়ের কান্ড! ব্যাগটা নামিয়ে কী করেছে কে জানে! ইশ। গোছানো বিছানাটাও লন্ডভন্ড করেছে। এত যে কেন চঞ্চল হচ্ছে মেয়েটা কে জানে। নিজের মনেই বলতে থাকেন মা।
তারপর তুয়ার পড়ার টেবিলের কাছে এসে থমকে যান মা। ঘুমিয়ে পড়েছে তুয়া খাতার ওপর মাথা রেখে।হাতে এখনো ধরা আছে পেন্সিলটা। আহা রে! দেখো তো! ভাবতে ভাবতে মা খাতাটা টেনে নিয়ে দেখতে লাগলেন। আরে সবগুলো অঙ্ক ঠিক হয়েছে তো! সব যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ নির্ভুল করেছে। শুধু সবগুলো উত্তরের পাশে খরগোশের ডিম লিখে রেখেছে। দেখছ কান্ড। সেই যে সকালে খরগোশের ডিম খরগোশের ডিম নিয়ে হট্টগোল করেছিল স্বপ্ন দেখে, এখনো ভোলেনি।
তুয়াকে ডাকার জন্য হাত বাড়িয়েও হাত সরিয়ে নিলেন মা। থাক, যতক্ষণ স্বপ্নের ঘোরে থাকে থাকুক।