ভালোবাসার অভাব

ভালোবাসার অভাব

খানিকক্ষণ পর পর দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি।অল্প একটু তাড়াহুড়ো অার ছটপট করছিলাম এটা সম্ভবত অামার ছাত্রী রাইসা বুঝে গিয়েছে।রাইসা অামাকে জিজ্ঞেস করল- ভাইয়া, অাপনার তাড়া অাছে মনে হচ্ছে।কোথাও যাবেন নাকি। বললাম- না তেমন কিছুনা।ম্যাথটা শেষ করছ?

– অার একটু বাকি।
– শেষ কর তাড়াতাড়ি।

কিছুক্ষণ পর রাইসা অাবার বলল- ভাইয়া, অাপনাকে একটা কথা বলি। বললাম- হ্যাঁ বল।

– অাপনার চুল, গোঁফদাড়ি গুলা অনেক বেশি লম্বা অার অগোছালো হয়ে গেছে।এবার একটু ছেঁটে ফেলেন।সুন্দর দেখাবে।

অামি রাইসার কথার প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে কেবল একটু হেসে বেরিয়ে অাসলাম।পেছন থেকে অান্টি ডাক দিল।খেয়াল করলাম অান্টির হাতে কিছু একটা হয়ত টাকার খাম-ই হবে।

– এই নাও বাবা।(অান্টি)

কথাটা বলতে বলতেই অান্টি খামটা অামার দিকে বাড়িয়ে ধরল।অামি সেটা হাতে নিয়ে মাঝখানে এক ভাঁজ করে জিন্সের সামনের পকেটে ডুকিয়ে নিলাম।অান্টি জিজ্ঞেস করল- তোমার মা কেমন অাছে এখন।অাগের থেকে একটু সুস্হ হয়েছে?

– খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি অান্টি।অাগের মতই অাছে।অাজ অাসি।একটা এক্স-রে করাতে হবে।দেরি হলে ল্যাব বন্ধ করে দিবে অাবার।
– ঠিক অাছে বাবা যাও।শোন কোনরকম সমস্যায় পড়লে অামি নয়ত রাইসার বাবাকে জানিও।
– অাচ্ছা অান্টি।

অতঃপর অামি পিছন ঘুরে হাঁটা ধরলাম। গত তিনবছর ধরে রাইসাকে পড়াচ্ছি।রাইসার বাবা-মা দুইজনই অামাকে নিজের ছেলের মত স্নেহ করে।ওনাদের ভালোবাসায় অামি সিক্ত।অামাদের মধ্যে কোন রক্তের সম্পর্ক নেই।নেই কোন জাতের সম্পর্ক তবুও একটা মনুষ্যত্বের টান অাছে ওনাদের।বলতে গেলে ওনাদের সাহায্যে অামি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছি।নাহলে এতদিনে কোন ছোটখাটো চাকুরিতে লেগে যেতে হব।সেদিন অনার্সে ভর্তির জন্য দশহাজার টাকার প্রয়োজন পড়েছিল।অনেকের কাছে হাত পেতেছিলাম।সুদের বিনিময়ে ধার পর্যন্ত নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু কেউ অামাদের পারিবারিক অবস্হা দেখে রাজি হয়নি।রাইসার বাবা কার থেকে জানি খবরটা পেয়ে যায়।তারপর উনি অামাকে নিজে ফোন করে বাসায় ডেকে নিয়ে যায়।রাইসার বাবা সেদিন বলেছিল-

– টাকার জন্য ভর্তি হতে পারছনা সেটা অামাদের বললেই পারতে।অন্তত সাহায্য করার মত সেই সামর্থ্যটুকু  অামাদের অাছে।কত টাকা লাগবে ভর্তির জন্য??
– দশহাজার।
– এই নাও এখানে পুরো দশহাজার টাকা অাছে।কালকেই ভর্তি হয়ে যেও।

টাকাটা নেওয়ার সময় অামার হাত কাপঁছিল।তবুও নিয়েছিলাম। পরদিন সকালে ফার্মেসী থেকে ওষুধ নিয়ে ফিরছিলাম।এমন সময় পিছন থেকে রিক্সা নিয়ে অারশি এসে হাজির।অারশি বলল- রিক্সায় উঠ। বললাম- উঠবনা।তুমি যাও। রিক্সাওয়ালাকে বললাম- মামা, অাপনি রিক্সা টানেন। অারশি বলল- মামা অাপনি রিক্সা টানবেননা।অার তোমাকে উঠতে বলছি তো।

– অারশি বুঝতেছনা কেন! পাড়ার কেউ দেখলে সমস্যা হবে।
– অত কথা শুনার টাইম নাই।তোমাকে রিক্সায় উঠতে বলছি উঠে বসবা ব্যাস।

অারশি ভীষন জেদি মেয়ে।ওর যেটা করতে মন চাই সেটা করে।গত দুইবছরে মেয়েটাকে হারে হারে চিনেছি।কখন কি করে বসবে তার হিসেব নেই।অামি অার কথা না বাড়িয়ে ভদ্র ছেলের মত ওর পাশে বসলাম।কিছুক্ষণ পর অারশি বলল-

-প্রেমিক পুরুষদের অত ভয় পেলে চলেনা।বুক ভরা সাহস রাখতে হয়।
– কোথায় যাচ্ছি অামরা?
– অাপাতত সেলুনে যাচ্ছি।
– সেলুনে কেন যাচ্ছি??
– অায়নাতে দেখেছ নিজেকে।চুল দাঁড়ির কেমন অবস্হা করে রেখেছ।এগুলো ছাঁটাই না করলে দুইদিন পর লোকে পাগল মনে করে ঢিল ছুড়বে।
– ঢিল ছুড়ুক।অামি তো পাগল-ই তোমার জন্য।
– অাসছে অামার পাগল….

অারশি বোকা কিনা জানিনা।তবে অামার কাছে বোকা বলেই মনে হয়।নাহলে অামার মত ছেলের পিছনে কখনই পড়ে থাকতনা।মেয়েটাকে গত দুইবছরে দামি কিছুই দিতে পারিনি সময় ছাড়া।তবুও মেয়েটা অামার হাত ছাড়েনি।অাপোষহীনভাবে অাকড়ে ধরে রেখেছে অামাকে।অামিও ছাড়তে চাইনা।তাইতো ভরসা দিয়ে সবসময় বলি-” অামার কাছে হয়ত ভাতের অভাব হবে! কিন্তু কখনও ভালোবাসার অভাব পড়বেনা।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত