ক্লাসমেট

ক্লাসমেট

দোস্ত চল আমরা বিয়ে করে ফেলি মিতুর এই কথাটি শুনে আমি নড়েচড়ে বসলাম। ফাজলামি করছিস আমার সাথে? বাবা আমার জন্যে পাত্রী ঠিক করে রেখেছে, আগামীকাল আমি পাত্রী দেখতে যাবো আর তুই এই সময় আমার সাথে মজা নেস?  তুই তোর বাবাকে গিয়ে বল তুই আরেকজনকে ভালোবাসিস।  এই মিতু ফাজলামি বাদ দে! আমরাতো ক্লাসমেট, আমাদের ফ্রেন্ডশিপ ৪বছরের। তুই এই ফ্রেন্ডশিপটাকে রিলেশনশীপে নিয়ে যেতে চাস কেন?  এইটাইতো মেইন ফ্যাক্ট! আমাদের ৪বছরের ফ্রেন্ডশিপ তাই আমাদের আন্ডার্স্টেন্ডিং খুবই ভালো। আমাদের যদি এখন বিয়ে হয় তাহলে একে,অপরকে বুঝতে সমস্যা হবেনা। নতুন করে কাউকে লাইফ পার্টনার বানালে তাকে বুঝতে আবার অনেক সময় লাগবে।

রাখ তোর আজাইরা লজিক! ক্লাসমেট কখনো সউলমেট হতে পারেনা।  ক্লাসমেট যদি সউলমেট হয় এর থেকে ভালো কি হতে পারে বল?  তোর মাথা পুরাই গেছে মিতু! আমি গেলাম বাবা ফোন করছে। ক্যাম্পাস বন্ধ যা তুই নিজের বাড়ি গিয়ে চিল কর, আমি যাই আমার বাড়ি। কয়েক ঘন্টার ট্রেন ভ্রমণের পর নিজের গ্রামের বাড়ি এসে পৌঁছালাম। আগামীকাল আমার জন্যে পাত্রী দেখতে যাবো তাই সবার সামনে লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আমার কিছু করার ছিলোনা। রাতে মিতুর ফোন পেয়ে রিসিভ করলামঃ হ্যাঁ মিতু বল!  দোস্ত আমাকে বাঁচা প্লিজ।

আমাকে কাল এক ছেলেপক্ষ দেখতে আসছে। বাড়িতে আসার সাথে,সাথেই এ কথা জানতে পারলাম।  আরে এইটাতো খুবই ভালো কথা। আমিওতো আগামীকাল পাত্রী দেখতে যাচ্ছি। আমাদের খুবই মিল তাইনারে?  ফাজলামি বন্ধ করবি এইবার? আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা। তুই যে করেই হোক কাল ওই ছেলেপক্ষ আমাদের বাড়ি আসা থেকে আটকা?  কেমনে সম্ভব তা? আমিতো কাল পাত্রী দেখতে যাবো।  আমি জানিনা কিছু তুই যে করেই হোক আটকা। নাহলে আমাদের ফ্রেন্ডশিপ শেষ!  আচ্ছা, আচ্ছা ওয়েট.. আমার কাছে কিছু গুন্ডা টাইপ লোকের নাম্বার আছে যারা টাকার বিনিময়ে কাজ করে। আমি তোকে ওদের একজনের নাম্বার দিচ্ছি তুই ওদের সাথে যোগাযোগ করে তোর এলাকায় ডেকে নে আর তোকে দেখতে আসা ছেলেকে তোদের বাসায় আসার আগেই রাস্তায় হাত,পা ভেঙে দিতে বল। ”“ গ্রেট আইডিয়া দোস্ত! থ্যাংকস, থ্যাংকস, থ্যাংকস। ” মিতুকে একটা গুন্ডার নাম্বার ম্যানেজ করে ওকে ম্যাসেজে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

সকালে অনেক খুশি মনে ঘুম থেকে উঠি। আজ আমি পাত্রী দেখতে যাবো! বিয়ে মোটামোটি ঠিক করে রেখেছে বাবা, আমি মেয়েকে দেখে পছন্দ করলেই বিয়ের তারিখ ফিক্সড হবে। মেয়ের বাড়ি আমাদের এলাকা থেকে একটু দূরে। বাবা আর ভাবি আমার সাথে যাচ্ছে মেয়ের বাড়ি। মেয়ের বাড়ি আমি চিনিনাতো তাই এদের যাওয়া, নাহলে আমি একাই যেতাম।

একসময় একটা জায়গায় এসে গাড়ি থামে। বাবা বলে এইটাই মেয়ের বাড়ির এলাকা। আমরা সবাই গাড়ি থেকে নামি। গাড়ি থেকে নামার সাথে,সাথে কিছু মুখ বাঁধা লোক হাতে হকিস্টিক নিয়ে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করেঃ

“ এইযে ভাই আপনিই কি পাত্রী দেখতে যাচ্ছেন? ”
“ হ্যাঁ আমিই পাত্রী দেখতে যাচ্ছি। ”

এই কথাটি বলার সাথে,সাথে ওই লোকগুলোর হাতে থাকা হকিস্টিক দিয়ে আমাকে ক্রিকেট বলের মতো পেটাতে শুরু করলো। মাইর খেতে, খেতে এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

আজ ক্যাম্পাস খুলবে তাই ট্রেনে উঠেছি ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্য। ওইদিনের মাইরে আমি ৩দিন মেডিকেলে ছিলাম। আমার মাথা এবং হাতেও এখনো পুরো ব্যান্ডেজ পেছানো। পুরো শরীর ব্যাথা! সামনে এক্সাম তাই এই অবস্থায়ও ক্যাম্পাসে যেতে হচ্ছে। ক্যাম্পাসে আসার সাথে, সাথে মিতু পিছন থেকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।

দোস্ত ওইদিন তুই আমার অনেক বড় উপকার করেছিস। তোর কথামতো আমি এক গুন্ডার সাথে কথা বলে আমাদের এলাকায় আসতে বলি। ওরা আমার এলাকায় আসে! ওই ছেলেপক্ষ যেদিন আমাকে দেখতে আসবে ওইদিন ওই গুন্ডাগুলো রাস্তার মধ্যে দাঁড়ায়, আমিও ছিলাম একটু দূরে। ওই ছেলেপক্ষ আসার পর ছেলেটাকে কি খেলানিই না দিছে তা আর কি বলবো দোস্ত! আমি দূর থেকে ওই ছেলের মুখ দেখতে পারিনি কিন্তু ফিগারটা একদম তোরই মতো। কিন্তু আমি তোর মতো কপি চাইনা অরজিনাল তোকেই চাই! তোকেই আমি আমার ” সউলমেট ” বানাবো তুই দেখে নিস। ”

আচ্ছা তুই এইবার বল দেখি তোর পুরো মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ কেন? পাত্রী দেখতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করেছিস নাকি? আমার মন অনেক কিছুই বলতে চাইছে কিন্তু মুখ দিয়ে আমার কোন কথাই বের হচ্ছেনা, বের হচ্ছেতো শুধু চোখ দিয়ে পানি।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত