সামনে ঈদ শপিং করতে হবে, ভাবলাম গার্লফ্রেন্ডরে নিয়ে শপিং করমু। বাসা থেকে টাকা নিছি মোট ২৩ হাজার টাকা। ১৫ হাজার টাকা নিছি ফোন কিনব বলে, ৩ হাজার প্রাইভেটের টাকা। আর ৫ হাজার ঈদের শপিং এর জন্যে। প্রেমিকারে দিলাম ফোন……
আমি: জান, শপিং করতে যাব। যাবা আমার সাথে?
গার্লফ্রেন্ড:- হ্যা জান যাবো। বাবা মাত্র ২ টা ড্রেস কিনে দেছে। মাত্র ২ টা ড্রেস দিয়ে ঈদ হয় বলো বাবু?
আমি:- হ্যা বাবু,
২ টা দিয়ে কি আর ঈদ হয়? (চিল্লানির ইমো হপে) ২৩ হাজার টাকাই নিলাম। কি না কি হয় ভেবে। প্রথমে গেলাম ওর ড্রেস কিনতে। ভাবলাম ওর কাজ সেরে আমি কিনব ড্রেস ২ টা পছন্দ করলো। কিন্তু একটারও ওড়না নাই আমি কিছু বললাম না। বিল হলো ৯,৫০০ টাকা। আমার হাত থেকে ড্রেসের ব্যাগ নিয়ে বললো, “জান বিল দাও আমি স্যান্ডেল এর দোকানে যাচ্ছি” আমি তো একটা ঝটকা খেলাম, শালা কয় কি?সাড়ে নয় হাজার টাকা কেম্নে দিমু? ভাবলাম পরে দিবে হয়ত। তাই পুকুত করে টাকাটা দিয়ে স্যান্ডেলের দোকানে গেলাম। মহারানী বসে বসে পায়ে দিয়ে দিয়ে স্যান্ডেল চেক করতেছে মনটা চাইলো থাপ্রাইয়া বাসায় নিয়া যাই। কিন্তু পারলাম না। হাজার হলেও গার্লফ্রেন্ড হয়।
মহারাণী স্যান্ডেল নিলো ২৮০০ টাকা দিয়ে। ভাবলাম, এই বিল অন্তত ও দিবে। কিন্তু একি! এটাও ও আমাকেই দিতে বললো ভাবলাম বড়লোকের মেয়ে, পরে হয়ত সুদ সহ ফেরত দিবে আমার খরচ অলরেডি ১২,৩০০ টাকা হয়ে গেছে। আমাকে বললো, “জান আমার একটা ব্রেসলেট কিনে দিবা”? আমি তো রাইগ্যা কইলাম, “ব্রেসলেট কি করবা? ব্রেসলেট তো ছাগলিরা পরে বাবু” ও ক্ষেইপা বললো, “আমি ছাগলি ইইই। যাও কিনে দিতে হবেনা। আমি কে তোমার যে ঈদ মার্কেট করে দিবা আমাকে”? আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে আর না করিনি। ব্রেসলেট নিয়ে দিলাম ৪৭৫০ টাকা দিয়ে। ১৭,০৫০ টাকা শেষ কইরা দিলো হারামি। ইচ্ছা করলো সব কিছু কাইড়া নিয়ে কান পোট্টী ফাডাই দিই থাপ্রাইয়া।
আমাকে পাবলিক প্লেসেই জড়াই ধরলো, আর বললো, “আমার জান অনেক ভালো। জান আসো, আসল জিনিস তো কিনিই নাই” আমাকে জড়িয়ে ধরাতে আমার মন আমার বিরুদ্ধে গিয়ে গলে গেলো। ওরে নিয়ে গেলাম কসমেটিক্স এর দোকানে এই লিপস্টিক, ওই আইলাইন, ওই চুড়ি, এই ছাল আমার মেজাজটা গরম হয়ে গেল। সব মিলিয়ে ১,৫০০/- টাকা শেষ। ও বললো, “জান সে কখন আসছি! এত কিছু কেনা কাটা করলাম, খুব ক্ষুধা লাগছে” আমি অনিচ্ছা সত্বেও রেস্টুরেন্ট এ ঢুকলাম ওরে নিয়া। হ্লায় হ্রামি মাইয়া একের পর এক অর্ডার দিলো। রমজান মাসে রোজা তো নাই ইইই সাথে এত গুলা শপিং কইরা মহারাণির মত চিকেন খাচ্ছে বিল আসলো ৪৫০/- টাকা আর হ্যা ঢাকা শহরের এ মার্কেট ও মার্কেট যেতে যেতে গাড়ি ভাড়া দিতে দিতে খরচ গিয়ে ঠেকলো ২০,০০০/- আমার তো হার্ট এটার্কের অবস্থা। খোদা এমন গার্লফ্রেন্ড শত্রুরেও দিও না।
ও বললো, “জান তুমি আমাকে এত কিছু দিলা আমি একটা কিছু দিব তোমাকে। চলো আমার সাথে” এবার ধরে প্রান এলো, ভাবলাম যাক গার্লফ্রেন্ড আমার পার্ফেক্ট কিন্তু একি! ও আমাকে নিয়ে গুলিস্তানের ঢুকলো গিয়া ৬৫০ টাকা দিয়া একটা নীল পাঞ্জাবি কিনে দিলো। তাও ৫০ টাকা আমার থেকে নিয়ে। ও বললো “জান ৫০০ টাকার নোট না ভাঙাই। ৫০ টাকা খুচরা দাও” দিলাম…পকেটে হাত দিয়ে দেখি ৩ টা ১০০০ টাকার নোট (প্রাইভেট বেতন ৩ হাজার টাকা) আর ১০ টাকার একটা নোট। ও ৬৫০ টাকার নীল পাঞ্জাবি হাতে ধরাইয়া চলে গেলো… আমি পাগলা হইয়া গেলাম। খুচরা ১০ টাকা দিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম। কাছে মাত্র ৩,০০০ টাকা আছে। তাও সেটা প্রাইভেটের। ২০,০০০ টাকা খরচ করে মাত্র একটা পাঞ্জাবি পেলাম ৬৫০ টাকার। স্ট্রোক করলাম মনে মনে কয়েকবার। কিডনি স্ট্রোক, হার্ট স্ট্রোক, ফুসফুস স্ট্রোক সব স্ট্রোক করলাম।
মাত্র ১৫ দিন পর ঈদ। জানিনা বাসায় কি জবাব দিমু, ফোন কই পামু, ৫০০০ টাকার মার্কেটই বা কে কইরা দিবে? বুকটা ধক করে উঠতেই আম্মুর ডাক শুনলাম রোকন এই রোকন ওঠ বাবা, আর কত ঘুমাবি? চল মার্কেটে যাই। শপিং করতে যাবো”। আমি আর থাকতে পারলাম না। চোখের পানি চিরিত করে ছেড়ে দিলাম। যাক বাবা স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষন। ভাগ্যিস গার্লফ্রেন্ড নাই, অনেক ভাল আছি।