অচেনা মেয়েটি

অচেনা মেয়েটি

টিউশনি শেষ করে যখনি বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছি তখনি রিহানের ফোন আসলো

–হ্যাঁ রিহান কি বলবি বল!
–আলী তুই তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় চলে আয়।
–তোর কি মাথা খারাপ নাকি? এখন রাত প্রাই ১০:১৭ মত বেজে গেছে আর বলছিস তোর বাসায় আসতে।
–আরে ভাই তুই আসেক তো ১০:১৭ বাজলো তে কি হয়েছে?
–কিসের জন্য ডাকছিস? কোন জ্বরুরি দরকার আছে?
–আম্মু আজকে বিরিয়ানি রান্না করেছে।তুই তাড়া তাড়ি আয় আমি বাসার নিচে তোর জন্য ওয়েট করছি।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো।

ভেবে দেখলাম রিহানদের বাসা একান থেকে ৭-৮ মিনিটের পথ এতো করে বলছে যখন বিরিয়ানি খেয়েই আসি। এখন রাত প্রায় ১১:২৩ এর মতো বাজে।আমি বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছি।রিহান ও আন্টি অবশ্য তাদের বাসায় থেকে যেতে বলছিলো কিন্তু আমার আবার নিজের বাসায় ছাড়া ঘুমাতে কষ্ট হয় তাই চলে আসলাম। রাস্তা পুরাই ফাঁকা।কোন রিক্সা নেই তাই হেঁটেই আসছি।গলির কাছে আসতেই দেখলাম একটা মেয়ে ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আগে অবশ্য তাকে দেখি নি। আশেপাশে কোথাও বাসা মনে হয় তাই ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে কোন কারনে।আমি সেদিকে খেয়াল না করে চলে আসলাম সেখান থেকে।

সামনের রাস্তাটা একটু অন্ধকার। একটু যেতেই মনে হলো আমার পেছনে কেউ আসছে।পেছনে তাকাতেই দেখলাম সেই মেয়েটি আমার পিছু পিছু আসছে।ইদানিং যে ছিন্তাই হচ্ছে রাতে চলাচল করাই নিরাপদ না।তাই মনের মধ্য ভয় হলো মেয়েটি কোন ছিন্তাই কারী দলের সদস্য না তো?? আমি হাঁটার গতি দ্বিগুণ করে দিলাম।তবুও দেখছি মেয়েটি আমার পিছু ছাড়ছে না।তাই আমি মেয়েটি কে বল্লাম

–অনেক ক্ষন থেকে লক্ষ্য করছি আপনি আমার পিছু পিছু আসছেন।ব্যাপার কি বলুন তো??
–মেয়েটি নিশ্চুপ।
–কি হলো বলছেন না কেন?
–তবুও নিশ্চুপ।

–কি হলো আপনি কি কথা বলতে পারেন না?আপনি আর আমার পিছু পিছু আসবেন না “বলেই হাঁটা শুরু করলাম।
হঠাৎ একটা মেয়েলি কন্ঠে আওয়াজ ভেসে আসলো ” একটা মেয়েকে এভাবে রাস্তায় ফেলে চলো যাবেন? ”
পেছনে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম কথাটি মেয়েটি বলেছে তাই বল্লাম

–রাস্তায় ফেলে যাবো না তো কি বাসায় নিয়ে যাবো নাকি???
-মেয়েটে কিছু বলছে না দেখে আমি বল্লাম
–আপনার বাসার ঠিকানা বলেন আমি এগিয়ে দিয়ে আসছি।
–আমার বাসা এখানে না।কুমিল্লা তে।
–আজিব তো! বাসা কুমিল্লাতে তাহলে রাজশাহীতে কি হকি খেলা দেখতে আসছেন??
–আসলে আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি।
–পালিয়ে এসেছেন মানে?
–আব্বু-আম্মু জোর করে তাদের পছন্দ করা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিচ্চিলো তাই পালিয়ে এসেছি।এখানে আমার এক বান্ধবির বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তার বাসায় সমস্যার কারনে সে বলেছে আমাকে কোন হোস্টেলে থাকতে কালকে সে এসে নিয়ে যাবে।

–তো হোস্টেলে যাওয়া বাদ দিয়ে আমার পিছু নিয়েছেন কেন?
–আসলে হোস্টেলে থাকার মতো টাকা আমার কাছে নেই।
–তা আপনার জন্য কি করতে পারি এখন?
–আপনি যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলবো?
–কি কথা?
–আজকে রাতটা আপনার বাসায় থাকতে দিবেন?সমস্যা নেই আমি সকালেই চলে যাবো। একটা রাতেরই তো ব্যাপার নাকি?
–পাগল নাকি!আপনাকে নিয়ে গেলে আম্মু কি ভাববে?
–দেখেন না একটু ম্যানেজ করতে পারেন কি না।প্লিজ!

একটু ভেবে দেখলাম এতো করে বলছে যখন তখন সাথে নিয়ে যাই।তাছাড়া মেয়ে মানুষ কখন কি না কি বিপদে পড়তে পারে।

–আপনাকে থাকতে দিতে পারি তবে সকালেই চলে যেতে হবে।
— হ্যাঁ সকালেই চলে যাবো।
–আসুন আমার সাথে।

বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই আম্মু দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলে আমার সাথে একটা মেয়েকে দেখে আম্মু সন্দেহজনক চোখে তাকিয়ে বললো

–মেয়েটা কে?
–কে তা ওর কাছ থেকেই শুনে নিও।ওনি বিপদে পড়েছে দেখে বাসায় নিয়ে আসলাম।ওনাকে থাকার জন্য ব্যবস্থা করে দেও।আর ওনি সকালেই চলে যাবেন।
–আচ্ছা আমি দেখছি তুই ফ্রেস হয়ে খেয়ে নে।
–আমি রিহানদের বাসা থেকে খেয়ে এসেছি।
–ও আচ্ছা।

আম্মুর সাথে কথা বলে আমার রুমে এসে হাত-পা টান টান করে দিলাম এক ঘুম। এক ঘুমেই রাত পার হয়ে গেলো।সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করতে এসে মেয়েটির কথা মনে হলো তাই আম্মুকে বল্লাম

–আম্মু ওই মেয়েটিকেও ডাকো একসাথে নাস্তা করি।
–ও তো চলে গেছে।
–চলে গেছে মানে?
–চলে গেছে মানে চলে গেছে।ওর বান্ধবি এসে নিয়ে গেছে।
–তুমি নাস্তা না করে যেতে দিলে কেন?
–নাস্তা করেই যেতে বলেছিলাম কিন্তু তাদের কি যেন জ্বরুরি একটা কাজ আছে তাই চলে গেছে।

মনে মনে মেয়েটির উপর প্রচুর রাগ হলো একটা উপকার করলাম কিন্তু একটা Thanks বলারও প্রয়োজন মনে করলো না ফাজিল মেয়ে কোথাকার। কিছুক্ষন পর আম্মু একটা কাগজ এনে দিয়ে বললো “এটা তোকে সেই মেয়েটি দিতে বলছিলো।” mকাগজটা খুললাম সেখানে বড় করে লিখা ছিলো THANKS।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত