মামাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। অত্যন্ত ভালো কথা, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিয়েতে যাওয়া নিয়ে। উনি বিয়ে করবেন,এতে আমার কোনই আপত্তি নেই। তবে উনার বিয়েতে নাকি আমার যেতেই হবে। আমি অবশ্য কারো বিয়েতে খুব বেশী যাইনা।
সবজিনিষ/ কাজের একটা নির্দিষ্ট সীমা থাকে,তেমনি একজন মানুষ কতটা বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারবে,তারও নিশ্চয়ই একটা লিমিট আছে?! তেমনিভাবে আমারও হয়তো আছে,কিন্তু আমি যদি আমার বিয়ের আগেই অন্যদের বিয়েতে অনেকবেশী যাই, তাহলে হয়তো দেখা যাবে আমার বিয়ে আসার আগেই আমার বিয়েতে যাবার লিমিট শেষ হয়ে গেলো! তখন কী হবে?? তখন তো নিজের বিয়েতে নিজেই যেতে পারবোনা। বউ বেচারী একা একা কাঁদবে। সুতরাং, হবু বউয়ের উপর ভালোবাসা প্রদর্শনপূর্বক আমি বিয়েতে খুবই কম যাই।
কিন্তু এইবার আর না গিয়ে পারা গেলোনা! সবাই এত্তো জ্বালাতন শুরু করলেন যে,মুখ ভার করে হলেও যেতেই হলো।তারপর কনের ছোটভাই হিসেবে গেট ধরায়ও থাকতে হলো। আমি বদ্ধ পরিকর যে, বিশাল অংকের একটা এমাউন্ট ছাড়া ঢুকতে দেবনা বরপক্ষকে। করছিও তাই। একদম নাস্তানাবুদ করে ফেলেছি তাদের,কথা বলে একাই সামাল দিচ্ছি আমি এই সাইড।
ঠিক এমন সময়…! হ্যাঁ! ঠিক এমন সময় আমি তাকে দেখলাম। সবুজ শাড়ি পরা তাকে দেখলাম! আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি,কিন্তু সে আমার দিকে তাকাচ্ছে না। বরপক্ষ থেকে গেট ধরা নিয়ে আর কোন কথা কানে ঢুকছে না আমার, আমি গেট ছেড়ে দিয়ে উদভ্রান্তের মত দাড়িয়ে আছি,তাদের ছুড়া স্প্রে এসে আমার চুল,চোখ,পান্জাবী, মুখ সব সাদা করে দিচ্ছে, আমি তাও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। হ্যাঁ! এ-ই তো সে! যার বিয়েতে যাব বলেই এখন আমি বিয়েতে যাইনা।
আমার চোখে স্প্রে এসে পরলে তখন সেটা শুধু সরিয়ে নিচ্ছি, আমার হাতের বোতলটাও কে যেন নিয়ে গেলো! আমি তখন আর পৃথিবীর কোন কিছুতেই আগ্রহী না। হঠাৎ করেই যেন সবকিছু মুল্যহীন হয়ে গেলো আমার কাছে!
সে খাচ্ছে, এত সুন্দর করে কেউ খেতে পারে আমার জানা ছিলোনা। বিয়েতে মেয়েরা পানি পান করার সময় গ্লাসে লিপস্টিক লাগিয়ে ফেলে বাজে অবস্থা করে,কিন্তু ও তাও করছে না! আমি কনের ভাই, বরপক্ষের সবার খাওয়াদাওয়া ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, সেটা দেখা আমার দায়িত্বেরর মাঝেই পরে। কিন্তু আমার সব দায়িত্ব যেন ঐ টেবিল ঘিরেই! বারবার গিয়ে জিজ্ঞেস করছি কিছু লাগবে কি না সবার! কারোই কিছু লাগবেনা। হঠাৎ করেই “সে” কিছু একটা বলে উঠলো। আমার কানে যেন একশো চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ বেজে উঠলো। শব্দটা ছিলো “লবণ”, তাদের টেবিলে লবণ নেই।
আমি এক দৌড়ে কিচেনে চলে গেলাম। কিন্তু এখানে লবণের কৌটা নেই, কেউ দিচ্ছেও না,দেরি করছে। কিন্তু দেরি করলে তো আমার হবেনা, আমি আরেক দৌড়ে বাইরে চলে গেলাম। সবকিছুর মিনিপ্যাক থাকলেও,লবণের আধাকেজির নিচে কোন মিনিপ্যাক নাই।
লবণ নিয়ে আসলাম কিনে, আধাকেজির প্যাকেট। এসিআই লবণ। পুরো প্যাকেট ধরিয়ে দিলাম মেয়েটার হাতে, মেয়েটা হা হয়ে গেলো! প্যাকেট তো সে চায়নি। হাসতে লাগলো! কলকল সুর তোলে ঝর্ণার মতো সে হাসির শব্দ। আমি লবণের প্যাকেট ছিড়ে প্ল্যাটে ঢেলে দিলাম একটুখানি। মেয়েটা মিষ্টি হাসি দিয়ে থ্যাংকস বললো! এই হাসিটুকুর জন্য আমি আজীবন লবণ ঢেলে দিতে পারি তাকে।
জিজ্ঞেস করলাম বাকি লবণ কী করবো? মেয়েটা আবার হাসতে হাসতে বললো – দেখেন আর কারো টেবিলে লবণ লাগে কি না! আমি সাথে সাথে ফেরিওয়ালা হয়ে গেলাম,লবণের ফেরিওয়ালা। হাঁকতে লাগলাম ” লবণ লাগবে? লবণ?? ” মেয়েটা একটু দুরে দাড়িয়ে সবার ছবি তুলা দেখছে,আমি এগিয়ে গেলাম। কিন্তু কথা তো খুঁজে পাচ্ছি না। গিয়ে বললামঃ- আপু, একটু সাইড দিন।
কপাল কুঁচকে তাকালো সবুজ শাড়ি পরা মেয়েটা, জিজ্ঞেস করলো ” আপনি সেই লবণওয়ালা না?? ” আমি সম্মতি জানালাম।মেয়েটা বলে উঠলো ” বুঝলামনা আপনার ব্যাপার! সেই তখন থেকে আমার পেছন পেছন ঘুরছেন, আপনার দিকে তাকালেই দেখি আপনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন! ব্যাপারটা কী? আর এখন সাইড দিতে বলছেন? সামনে যে জায়গা আছে,আমি বা আপনি এত মোটা না যে এদিকে যেতে পারবোনা। ”
আমি দু’পকেটে দু’হাত ঢুকালাম, মাথা নিচু করে কাঁধ উঁচু করে বললাম -” সাইড তো আছে,তারপরও আপনি একটা মেয়ে মানুষ,যাবার সময় আপনার শরীরের সাথে যাতে আমার শরীর না লাগে,তাই বললাম। আর আপনি আমার দিকে না তাকালেই হয়,দেখতে পাবেন না আমি তাকাচ্ছি কি না। আপনার বোধহয় টিস্যু লাগবে,তাই না? এই নিন,হাত তো ভেজা আপনার। ” হাতে টিস্যু ধরিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম,পেছন থেকে ডাক আসলো ” এই যে শুনুন, আপনি তাকাচ্ছেন বলে যে আমার খারাপ লাগছে,এমনটা কিন্তু না। ”
আমি পেছনে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম “টিস্যু দিয়ে হাত মুছার আগে যদি একটু যদি দেখতেন,তাহলে ভালো হতো! “আমি খানিক দুর এসে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা মোবাইলে নাম্বার তুলছে টিস্যু দেখে দেখে। ইশশ..! এতো সুন্দর করে কেউ মোবাইল টিপতে পারে আমার জানা ছিলো নাহ।