উচ্চশিক্ষিত বাবু

উচ্চশিক্ষিত বাবু

বাসে উঠে সবদিকে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলাম। রোদ না পড়ে মতো জানালার পাশ বরাবর একটা সিটে গিয়ে বসলাম।

মোবাইল বের করে ডাটা অন করেছি এমন সময় দেখলাম এক ভদ্রলোক তার স্ত্রী ও ছয়-সাত বছরের এক বাচ্চাকে নিয়ে আমার সামনের সিটে এসে বসেছেন।

বাচ্চাটি কোনো এক কারণে মন খারাপ করে রয়েছে। কেননা তাকে প্রায় টানতে টানতেই গাড়িতে তোলা হয়েছে। উঠার পর থেকেই উনারা কেউ কোনো কথা বলেননি। আমি বসে বসে নিউজফিড ঘাঁটছিলাম।

বাস ছাড়ার পাঁচ মিনিট পর ভদ্রলোক হঠাৎ বড় করে বলে উঠলেন, “আহ্ রে! কি রাস্তা এসব। গর্তের উপর গাড়ি চলছে। এজন্যই আমি তোমার বাপের বাড়ি যেতে চাই না।”

তার মানে ভদ্রলোক শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন। তিনি বড় করে কথা বলায় আশেপাশের সবাই উনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু তিনি সেদিকে নজরও দিলেন না। বরং আমার কেন জানি মনে হলো তিনি উল্টো খুশি হয়েছেন। এদিকে তার স্ত্রীও তাকে কিছু বললেন না।

কিছুক্ষণ পর তিনি আবার বড় করে বলে উঠলেন, “আগামীকাল সকালের মধ্যেই চলে আসতে হবে না হয় বাবুর পড়াশোনার ক্ষতি হবে কিন্তু।”তার স্ত্রী এবারও নিরুত্তর ছিলেন।

বিষয়টা আমার বেশ মজা লাগছিল। আমি সবকিছু বাদ দিয়ে ঐ ব্যক্তির দিকে মনোযোগী হলাম। এমন সময় বাস চলতে চলতে হঠাৎ জোরে ব্রেক মারল। বাসে সকল যাত্রী নড়েচড়ে উঠল। ঐ ভদ্রলোক সামনের সিটে ধাক্কা খেয়ে আবার নিজের সিটে চলে আসলেন।

এবার তিনি রেগে গিয়ে বললেন, “এরকম জানলে তো আমাদের কারটা নিয়েই বের হতাম। এসব গাড়িতে মানুষ চড়ে? আমাদের বাবুর এসব গাড়িতে চড়ার অভ্যাস আছে!”

বাসের সকল যাত্রী ড্রাইভারের জোরে ব্রেক মারায় যতটা না বিরক্ত হয়েছে তার চেয়ে বেশি বিরক্ত হয়েছে এই বাবু সচেতন বাবার কথায়। আমি যেহেতু বাসে একা আছি তাই অন্যের বিরক্তি দেখতে আমার বেশ ভালোই লাগছিল।

হঠাৎ উনার বাবু হু হু করে কেঁদে উঠল। উনার বাবুর হয়ত তখনও মন খারাপ ছিল। তাই তিনি ছেলের মন ভালো করার জন্য বললেন, “বাবু আগামীকাল স্কুল থেকে আসার সময় তোমাকে একটা আইসক্রিম কিনে দিব। কেমন? এখন কান্না করো না।”

বাচ্চাটি হয়ত বড় করে কান্না করতে চেয়েছিল কিন্তু তার মা তার মুখে হাত চাপা দিয়ে রেখেছে। তাই স্পষ্ট করে কোনো শব্দ আসছে না। বাচ্চার মা বাচ্চাকে আঞ্চলিক ভাষায় কিছু একটা বলে কান্না থামানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু না! ছেলের কান্না থামার কোনো লক্ষণ নেই।

বাচ্চার বাবা হঠাৎ বাচ্চার মায়ের উপর রেগে গিয়ে বললেন, ” কতবার মানা করেছি তোমাকে ওর সামনে এসব ভাষায় কথা না বলতে! শিখে ফেললে তখন কি করবে তুমি?” কথাটা শুনে তার স্ত্রী কোনো উত্তর দিলেন না। উদাস মনে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলেন তিনি।

কয়েক মিনিট পর বাস একটা সেতুর উপর উঠল। বাবুর বাবা এবার বাবুকে জানালার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন, ” বাবু দেখো দেখো! ওই যে পানির উপর দেখছো ওগুলোকে জাহাজ বলে। ইংরেজিতে শীপ বলে। কি বলে বাবু বলো তো?”

এইবার বাবু মায়ের হাতটা জোরে টান দিয়ে তার মুখ থেকে নামিয়ে বিকট শব্দে চিৎকার করে বলল, “জাহাজ অর মারে তুদ। আগে তকলেট কিনি দে তুই।”

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত