আমার রুমে কানে হেডফোন লাগিয়ে পুরো ভলিউম দিয়ে বাদশার ডিজে ওলে বাবু গানটা শুনছি আর নাচছি। খেয়াল করি নি বাবা কখন আমার রুমে এসেছে।এই পৃথিবীতে আমি একজন মানুষকেই ভয় পাই।আর তিনি হলেন আমার বাবা। বাবার সামনে গেলেই আমি বিড়ালের মত হয়ে যায়।আর ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল গুলো বাবার সামনেই করেছি। ক্লাস টেনে যখন রেজিস্ট্রেশন করি তখন স্যার আমায় বলেছিলো বাবার নামটা শুদ্ধভাবে লিখতে। আমার পাশে আমার বাবাও ছিলো।
আমি ইসলাম উদ্দিন না লেখে লিখে ফেলেছিলাম ইসমাঈল উদ্দিন।তা দেখে বাবা এতগুলো টিচারের সামনে আমার বামগালে থাপ্পড় মেরে বলেছিলেন, তকে জন্ম দিয়েছি আমি আর তুই কি না আমার নাম না লিখে কোথাকার না কোথাকার ইসমাঈলের নাম লেখিস।আজ বাসায় যা তোর খবর আছে। বাসায় আসার পর বাবা আমার ডানগানে থাপ্পড় মেরে বলে, তোর বাবার নাম কি? আমি বলি, ইসলাম উদ্দিন। বাম গালে থাপ্পড় মেরে বলে, তোর বাবার নাম কি? আমি বলি ইসলাম উদ্দিন।
এইভাবে যখন বাবা আমায় মারছিলো তখন মা এসে বাবাকে বলেছিলো, তুমি পাগল হলে না কি এত বড় ছেলেকে বাবার নাম শিখাচ্ছো? মা তখন আমায় বললেন, বল তো বাবা তোর বাবার নাম কি? আমি আবারও ভুল করে বলে ফেললাম ইসমাঈল উদ্দিন। যার ফল সরূপ পরীক্ষার আগের রাতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে ১০০০ বার লিখতে হয়েছিলো আমার বাবার নাম ইসলাম উদ্দিন। আমার মনে আছে ভার্সিটিতে আমি সবে ভর্তি হয়েছি৷ বাবার এক বন্ধুর বাড়িতে সুন্নাতে খৎনা অনুষ্ঠানে আমাদের দাওয়াত করে নিয়ে গিয়েছিলো। দাওয়াতে যাওয়ার আগে বাবা আমায় বলেছিলো আমি যেন হাসি মুখে সবার সাথে আদবের সহিত কথা বলি।
অনুষ্ঠানে বাবা যখন তার বন্ধুর সাথে কথা বলছিলেন তখন বাবা আমায় চোখে ইশারা করলেন আমি যেন তার বন্ধুর সাথে কথা বলি। আমি কি বলবো না বলবো বুঝতে না পেরে আমি হাসি হাসি মুখে আংকেলকে বলেছিলাম, আংকেল আপনিও কি মুসলমানি ( সুন্নতে খৎনা) করিয়েছেন। আমার কথা শুনে বাবা আর তার বন্ধু ২ জনেই হা করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি কত বড় ভুল করে ফেলেছিলাম। তাই আমি সেদিনেই ১ মাসের জন্য বাসা থেকে পালিয়েছিলাম।
~কি রে তুই রুমের ভিতর বান্দরের মত লাফালাফি করছিস কেন?
— না বাবা মানে…
~চুপ কর বেয়াদব কোথাকার। আর একজন মুসলমানের সন্তান হয়ে হাফপ্যান্ট পড়ে লাফালাফি করতে তোর লজ্জা লাগে না? আমি তখন চোরের মত মাথা নিচু করে বললাম,
— বাবা ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবে না।
~কাল তকে নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবো ।
সকাল সকাল তৈরি হয়ে থাকিস। পড়াশোনা শেষ হয় নি এখনি না কি আমায় বিয়ে করাবে৷ কিন্তু করার কিছু নেই আমার এইকথা বলার সাহস নেই যে আমি এখন বিয়ে করবো না। তাই বাধ্য হয়ে মেয়ে দেখতে আসলাম।
বাবা আগেই বলে দিয়েছে এইবার যেন আমি কোন ভুল না করি। যদি ভুল করি তাহলে না কি বাবা আমায় বাসা থেকে বের করে দিবে। আমি আর বাবা বসে আছি এমন সময় শাড়ি পড়া একটা মেয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। বাবা চোখে আমায় কি যেন একটা ইশারা করলেন। আমি তখন বাবাকে হাসতে হাসতে বললাম, বাবা মেয়ে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি বিয়ে করলে এই মেয়েকেই বিয়ে করবো। এমন সময় মেয়েটি বললো,
— কে মেয়ে? আমি তো মেয়ের মা।
কথাটা শুনার পর আমি বাবার দিকে তাকালাম। বাবা দেখি রাগে লাল হয়ে গেছে। তারমানে বাবা আমায় চোখে ইশারা করছিলো আমি যেন মহিলাকে সালাম করি আর আমি কি না ভুল করে পাত্রী মনে করে ফেলেছিলাম। তাই আর দেরি না করে বাসা থেকে বের হয়ে পড়েছি। ১ মাসের জন্য আবারও হাওয়া হয়ে যেতে হবে।