বেলার বড় ভাই

বেলার বড় ভাই

এটা আমাদের বসার জায়গা এখানে কেন বসে আছো?নিরব তাকিয়ে দেখল আট নয় বছরের একটা মেয়ে কোমড়ে দুইহাত দিয়ে রাগি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছে।নিরব বললো এটা তোমাদের বসার জায়গা আমি তো জানতাম না তাই বসে পড়েছি। তুমি যে বললে তোমাদের বসার জায়গা তো তুমি একা কেন?আমি আর নিরা বসতাম এখানে। কিন্তু নিরারা চলে গেছে।কোথায় গেছে?নিরার বাবার পোস্টিং হয়েছে তাই ওরা কুমিল্লা চলে গেছে।তোমরা এখন যে ফ্ল্যাটে আছো সেখানে নিরারা থাকতো।

নিরার জন্য তোমার মন খারাপ?হুম খুব মন খারাপ।কোন ক্লাসে পড় তুমি?ক্লাস থি তে পড়ি।আমি কি তোমার সাথে গল্প করতে পারি?বেলা বলল হুম। নিরব এবার এসএসসি দিয়েছে। তাই এখন সে তিনমাস ফি আছে।তাই নতুন বসার ছাদে উঠে বসে ছিল সে।এভাবেই বেলার সাথে নিরবের কথা শুরু হয়েছিল।কয়েকদিনের মধ্যেই বেলার সাথে নিরবের খুব মিল হয়ে যায়।নিরবের একটা বোন আছে নাম সীমা।সীমা ক্লাস সেভেনে পড়ে।সীমা ও খুব আদর করে বেলাকে।বেলার মনে হত ওর একটা বড় ভাই থাকলে খুব ভালো হত।ও যখন দেখে ওর ক্লাসের বান্ধবীরা স্কুল শেষে ভাইয়ের সাইকেলের পিছনে বসে আইসক্রিম খেতে খেতে বাসা যায় তখন ওর ও খুব ইচ্ছা করে ভাইয়ের সাইকেলের পিছনে বসে আইসক্রিম খেতে।কিন্তু ওর তো কোন ভাই নেই।

নিরবের মাঝে ও ওর ভাইকে খুজে পায়।যে ভাই ওকে খুব ভালোবাসে। ওর সাথে বসে ছাদে গল্প করে।আজ নিরব আর বেলা ছাদে উঠেছে।নিরব বলছে ওই দেখ তোর ভাবি।নিরব এখন বেলাকে তুই করে বলে ঠিক বড় ভাইয়ের মতো।বেলা বলছে কে আমার ভাবি?আমার তো কোন ভাই নেই।ভাবি পাব কোথায়?নিরব মন খারাপ করে বলল তুই তাহলে এখনো আমাকে ভাই ভাবতে পারিস নি।বেলা এবার ভাবি কথাটা বুঝতে পেরেছে।বেলা আগ্রহ নিয়ে বলল কোথায় ভাবি দেখবো?নিরব এবার একটু হাসি দিয়ে বলল এই যে পাশের বাসার দুই তালায় দেখ।

বেলা মেয়েটাকে দেখছে এই সময় সীমা ছাদে এসে বলল দুই ভাইবোন মিলে কি দেখা হচ্ছে শুনি।বেলা বলল ভাবিকে দেখছি।কি সুন্দর দেখতে! সীমা বলছে ভাইয়া এই বইপোকা কে তোর পছন্দ!এতো বই ছাড়া কিছুই বোঝে না।সারাদিন খালি বই পড়ে।বেলা বলল সীমাপু তুমি ভাবিকে চেন?হুম আমাদের স্কুলে ক্লাস নাইন এ পড়ে। নিরব বললো এই বইপোকাকেই আমার ভালো লাগে।সীমা বললো দেখ পটাতে পারিস কি না?যে মুডি মেয়ে কারো সাথে তেমন একটা কথা বলে না। আজ একবার ও বেলা নিরবদের ফ্যাটে আসে নি।নিরব সীমাকে বলছে কি রে বেলা বুড়ি কেন জানি আজ একবারও আসে নি আমাদের কাছে।সীমা বললো ঠিকই বলেছিস আজ একবারও আসে নি।নিরব বললো দেখে আয় তো বেলার কি হয়েছে?ওকে সাথে করে নিয়ে আসবি?সীমা বললো যাচ্ছি।সীমা বেলাকে নিয়ে এসেছে বেলাকে দেখে নিরব আর হাসি থামাতে পারে নি।হাহাহা করে হেসে দিয়েছে।

এই জন্য তুই আসছিলি না আমাদের বাসায়।তোর এই অবস্থা কে করলো?বেলা মুখ গোমরা করে আছে।সীমা বললো আন্টি ওকে পার্লারে নিয়ে গিয়ে ভালো করে চুল কেটে দিবে বলে নিয়ে গেছিল।কিন্তু পার্লারে নিয়ে যাওয়ার পর আন্টি বয় কাট কেটে দিতে বলেছে।গরম যাতে না লাগে সে জন্য এই কাট কেটে দিছে আন্টি।বাসায় আসার পর থেকে নাকি এই বোকা বুড়িটা কান্না করেই যাচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যেই তো চুল বড় হয়ে যাবে কিন্তু এই বুড়িটা তো কিছুতেই বুঝতেছে না।নিরব বললো বেলা তোকে আর পাকা বুড়ি বলে ডাকবো না তোকে এখন থেকে পাকা বুড়ো বলে ডাকবো।হাহাহাহা।

বেলা মন খারাপ করে দোড় দিয়ে বাসায় চলে গেল।সীমা বললো দিলে তো ওর মনটা আরো খারাপ করে।এখন বাসায় যেয়ে আবার হয়ত কান্না করছে।নিরবের খুব খারাপ লাগছে ও মনে মনে ভাবছে এভাবে না বললেও পারতাম।ছোট মানুষ খুব কষ্ট পেয়েছে।নিরব বললো যানা সীমা ওকে নিয়ে আয় ওকে বলবি আমি আর হাসবো না।ও আমাকে যেটা শাস্তি দেবে সেটা আমি মাথা পেতে গ্রহণ করবো।দশ মিনিট পর সীমা আর বেলা আসলো।বেলার হাতে একটা বড় প্রিচ ডাকনা দিয়ে ডাকা।নিরব বললো আর হাসবো না লক্ষি বোন আমার।কথা বল আমার সাথে।সীমা বললো ও কথা বলবে যদি তুই ওর শাস্তি গ্রহণ করিস।নিরব বললো আমি শাস্তি গ্রহণ করতে প্রস্তুত।বেলা বললো সীমাপু তুমি ভাইয়ার হাত দুটো ভালো করে ধরো।নিরব বললো কি শাস্তি আমি কি জানতে পারি।

বেলা এবার বড় প্রিচ থেকে একসাথে  অনেকগুলা বরফ বের করে নিরবের টি শার্টের ভিতরে দিয়ে দিল।নিরবের একটু ঠান্ডা লাগছে তবে খুব একটা বেশি না।নিরব মনেমনে বলছে ভাগ্যিস এটা গরমকাল শীতকাল হলে না জানি কত কষ্ট হতো।এবার বেলার মুখে হাসি ফুটেছে নিরবকে শাস্তি দিতে পেরে।এভাবেই বেলা সীমা আর নিরবের দিন কেটে যাচ্ছিল খুনশুটিময় ভালোবাসায়।কিন্তু সুখের দিন বেশি দিন স্থায়ী হয় না।হঠাৎ করে বেলার বাবার পোস্টিং হয়ে যায়। তাই বেলারা চলে যায়।নিরব আর সীমার খুব মন খারাপ হয়েছিল।আর বেলা তো যাওয়ার সময় কান্না করছিল।ওর কান্না দেখা সীমা ওনিরব কান্না করে ফেলেছিল।

ছয় বছর পর একদিন বেলা আর ওর মা মেলায় গেছে। হঠাৎ করে নিরব আর ওর মায়ের সাথে দেখা।বেলার মা তো নিরবের মাকে দেখে খুশিতে আত্মহারা।নিরবের মাও বেলার মাকে পেয়ে খুশি।দুজনেই গল্প করছে।বেলা একপাশে দাড়িয়ে আছে।বেলার খুব ইচ্ছা করছে নিরব ভাইয়ার সাথে কথা বলতে।কিন্তু বলতে পারছে না।বেলা বুঝতে পারছে না নিরবকে আপনি করে বলবে না তুমি করে বলবে।

এত দিন পর দেখা।ওর কথা কি নিরবের মনে আছে?নাকি ভুলে গেছে?হঠাৎ নিরব বললো কি রে বেলা বুড়ি কথা বলছিস না কেন?তুই কি শান্ত হয়ে গেছিস নাকি?বেলার মুখে একটু হাসি ফুটে উঠল।বেলা বলল কেমন আছো ভাইয়া?সীমাপু কেমন আছে?ভালো আছি।তোর সীমাপু ভালো আছে।কিরে তুই তো অনেক বড় হয়ে গেছিস আর সাথে তোর চুলগুলোও বড় হয়ে গেছে।হুম।চলতো ওই দোকানটায় যাই।আচ্ছা চলো।দোকানে গিয়ে বেসলাইট দেখছে নিরব।বেলা বলল ভাবির জন্য কিনবে নাকি?নিরব বললো ভালো কথা মনে করেছিস ওর জন্যও কেনা যাবে।

কিন্তু এখন এই বেসলাইটা কিনেছি আমার পাকা বুড়ি বোনটার জন্য। দে হাতটা পড়িয়ে দেই।এতবছর পর বেলার মনে হচ্ছে সেই হারিয়ে যাওয়া বড় ভাইটাকে ও খুজে পেয়েছে।চোখের কোনে জলকণা জমছে ওর।নিজেকে সামলে নিয়ে বেলা বললো ভাবির ছবি দেখাও।নিরব ছবি দেখালো।বেলা বললো এটা তো সেই বইপোকা আপুটা!নিরব বললো হুম।এই বইপোকাকে পটালে কিভাবে? সে অনেক বড় গল্প সেটা আর একদিন শুনাবো।তোর নাম্বারটা দে। বেলা ওর নাম্বার টা দিল।এরপর বেলা নিরবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলো।(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত