প্রতীক্ষা

প্রতীক্ষা

নিলয়ের এই ডুব টা ছিল প্রায় ৩ মাসের। এই তিন মাসে তার সাথে কোন কথাই হয় নি মৌলির।মৌলিও অবশ্য এখন আর নিলয়ের আশায় বসে থাকে না।যে কবি নিলয়ের প্রেমে মৌলি পড়েছিল নিলয় তার চেয়েও ভয়ংকর কবি। রাস্তায় রাস্তায় ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়ানো তার কাজ।সপ্তাহ ,মাসের পর এখন সে তিনমাস ধরে উধাও ছিল।তিনমাস পর হঠাত একদিন নিলয়ের টেক্সট।

-কেমন আছো?
-ভালো।তুমি?
-এইতো।
-কোথায় আছো এখন?
-খাগড়াছড়িতে।
-ও আচ্ছা।

মৌলি খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে না।মেয়েটার আগ্রহে চরম ভাটা পড়ে গেছে কবেই। এক বছরের সম্পর্ক শেষ করে নিলয় যেদিন বলল তুমি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও।আমার মত একজন ভবঘুরে কবি তোমাকে কিছু কবিতা শোনাতে পারবে।এরচেয়ে বেশি কিছু না।কবিতা কবিকে খাদ্য যোগায় তার প্রিয়তমাকে না।আমার ভাত লাগে না।কবিতা হলেই আমার পেট ভরে যায়৷ তোমার অনেক প্রেমের দরকার ,অনেক ভালোবাসার দরকার।আমি তার কিছুই দিতে পারছি না তোমাকে।মৌলি, তোমার অনেক স্বপ্ন আছে।সংসার করবে। বাচ্চাকাচ্চা হবে।আদতে আমি এমন কোন স্বপ্নই দেখি না।আমি স্বপ্ন দেখি উদাস হয়ে বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো।আমি স্বপ্ন দেখি প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া।তুমি স্বপ্ন দেখো আমার সাথে মিশে যাওয়া। তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও প্লিজ।আমি চাই অন্তত আমার প্রতি তোমার শ্রদ্ধাবোধ থাকুক।

মৌলি নিলয়কে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।কিন্তু ওই যে চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়।হঠাত হঠাত করে নিলয়ের উত্থান হয়।প্রথম দিকে মৌলি খুব অপেক্ষা করত।এখন করে না।অপেক্ষা শব্দটা যখন চরম উপেক্ষিত হতে থাকে তখন আর এর দাম থাকে না।মৌলি তাই আর অপেক্ষা করছে না।তবু কোথায় জানি একটা টান থেকে যায়।এই টানটা কোথায় থেকে আসে মৌলি জানে না।জানার চেষ্টাও করে না।পৃথিবীতে কিছু কিছু রহস্যের জট না খোলাই ভালো।এতে করে রহস্যময় অনেক কিছু পাওয়া যায় ।বেঁচে থাকার জন্য কিছু রহস্য দরকার।আচ্ছা,বেঁচে থাকার জন্য অপেক্ষার কি দরকার আছে? কে জানে।হয়তোবা আছে । মৌলি কি অপেক্ষা করছে ?

-মৌলি।
-হুম, বলো।
-আমার খুব বাঁচতে ইচ্ছে করছিল এবার।
-কবে?
-এইতো কিছুদিন আগে একটা দুর্গম এলাকায় গিয়েছিলাম।তিনমাস সেখানেই ছিলাম।
-তারপর?
-কিছু সন্ত্রাসীদের হাতে ধরা পড়লাম।
-তাতে তো তোমার বয়েই গেছে! তুমি তো এমনই চাইতে। তো নতুন কোন কাব্য আসল এবার?
-ধুর। জানো, এবার তোমাকে খুব মনে পড়ছিল।
-কেন?
-ওরা মেরে ফেলতে চাইছিল।
-মারে নি তো আর।আর মরার আগে আমাকে মনে পড়বে কেন?
-না মারে নি কথা সত্য তবে আটকে রেখেছিল বেশ কিছুদিন।

-এরপর?
-আমার এক বন্ধু ছিল সাথে। আমাদের বলল টাকা দিতে না হয় মেরে ফেলব।আমি বললাম আমি কবি।
-তারপর ছেড়ে দিল?
-না।আমি বললাম আমি কবি। ফকিন্নি কবি।অভাবী কবি।টাকা পয়সা নাই।ছেড়ে দেন আমাকে।
-তারপরই ছেড়ে দিলো?
-না।আমাকে জিজ্ঞেস করল তোদের এখানে পাঠাল কে?
-আমি বললাম কেউ পাঠায় নি হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম।
-তারপর?
-আমার বন্ধু সে আমার সাথে সখ করে এসেই বিপদে পড়ে গিয়েছে।সে কোনভাবে এক লাখ টাকা ম্যানেজ করে দিলো।

-এরপর ছেড়ে দিলো?
-নাহ।দুইমাস আমাদের রেখে দিলো। ধরা পড়েছিলাম প্রথম মাসেই।এক লাখ দেয়ার পর বেঁচে থাকাটা নিশ্চিত হলো আর কিছু না।
-ও আচ্ছা।
-তোমার কথা কেন মনে পড়ছিল জানো?
-না।আমাকে মনে পড়ার কোন কারণ দেখছি না ।
-মৌলি, আমি জানি তুমি আমার অপেক্ষায় থাকো। আমি এভাবে মরে গেলে তুমি সারাজীবন আমার অপেক্ষায় থাকবে।

-ভুল জানো।
-না ভুল জানি না। আমার মন বলে কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করে । সে অপেক্ষারত মানুষটার নামও আমি জানি , মৌলি।
– শুনো ,নিলয়। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করি এটা সত্য না ।যে অপেক্ষা করে সে আমি না ।সে তোমার সাবেক প্রেমিকা। প্রেমের বলে একটু অপেক্ষা আসতে পারে।কিন্তু সেটা আমার করা অপেক্ষা না। তুমি ভালো থাকবে ।আর কখনোই আমার সাথে যোগাযোগ করবে না।
-মৌলি ,শুনো।

মৌলি শুনল না।সে ফোন কেটে দিলো। সব কিছু থেকে নিলয়কে ব্লক করে দিলো। তার ফোনের সিমটাও ভেঙে ফেলল। মৌলি কাঁদছে।এই কান্নার কারণ সে জানে না ।সব কিছু জানতেও হয় না ।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত