মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল সুরভীর। উঠে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। শরীরটা খুব হালকা লাগছে। সিদ্ধার্থের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিল বুঝতেই পারে নি। আজ তাহলে সিদ্ধার্থ আর ফিরল না। কিন্তু ওর সাথে কথা বলা খুব দরকার ছিল। কি কারণে যে সিদ্ধার্থ ডিভোর্স চাইছে তা ওকে জানতেই হবে। কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করছিল ওর ব্যবহার পাল্টে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ যে কাল একেবারে এভাবে মুক্তি চাইবে সেটা সুরভী ভাবতে পারে নি। তবে যে কারণই থাক না কেন সুরভী যে কিছুতেই ডিভোর্স দেবে না সে কথা কালই সিদ্ধার্থকে জানিয়ে দিয়েছে।এত সহজে সিদ্ধার্থকে ছেড়ে, এ বাড়ি ছেড়ে সে কোথাও যাবে না।
ভালোবেসে বাড়ির অমতেই সিদ্ধার্থকে বিয়ে করেছিল সুরভী। বিয়ের বছর খানেক সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু আগের অফিস ছেড়ে নতুন অফিসে আসার পরই আস্তে আস্তে বদলে যেতে থাকে সিদ্ধার্থ। কাজের অজুহাতে রাতে দেরী করে ফেরা, বাড়ির বাইরে রাত কাটানো রুটিনে দাঁড়িয়ে গেছিল। কিন্তু সুরভী কোনোদিনই সন্দেহ করে নি। আজ মনে হচ্ছে করা উচিত ছিল। তাহলে হয়তো তার সংসার ভাঙাটা আটকাতে পারতো।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই সুরভীর মনে পড়ল কিছুক্ষণ আগে কফিটা খাওয়ার পরেই গলা আর বুকটা জ্বালা করে উঠল। কেমন যেন দম আটকে আসছিল।আর তারপরেই এত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল ও। তবে কি কফিতে কিছু ছিল? কিন্তু ও তো ফ্রীজে রাখা দুধ দিয়ে ও নিজেই কফি বানালো। তাহলে কি দুধে কিছু মেশানো ছিল?কাল রাতে ঝামেলার পর ঘুম আসছিল না সুরভীর। অনেক রাতে সিদ্ধার্থকে বিছানা থেকে উঠে রান্নাঘরের দিকেই যেতে দেখেছিল। তবে কি……
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ সুরভীর চোখ পড়ল চেয়ারটার দিকে। চমকে উঠল সুরভী। টেবিলে মাথা রেখে চেয়ারে বসে রয়েছে সুরভী নিজেই।চোখ দুটো খোলা,যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। জানলার কাছে দাঁড়ানো সুরভীর দিকে বিস্ফারিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে চেয়ারের সুরভী। প্রাণহীন শরীরটা যেন বলতে চাইছে সিদ্ধার্থর বিশ্বাসঘাতকতার কথা।
তার মানে সিদ্ধার্থ এইভাবে মুক্তি নিল সুরভীর থেকে? এখন তাহলে সুরভী অন্য এক জগতে বিরাজ করছে যেখান থেকে ফেরার আর কোনো উপায় নেই? তার আর সিদ্ধার্থের মাঝে তাহলে এখন গোটা এক জগতের দূরত্ব।