—তানিশা তুমি তোমার বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে নাও।(তন্ময়)
—-ও আচ্ছা।তো আমাকে তুমি বিয়ে করবে না কেন? (তানিশা)
—-আমি তো বেকার, এখনো পড়ালেখা শেষ করি নি।একজন বেকার ছেলের সাথে তো আর তোমার বাবা-মা বিয়ে দিবে না।(তন্ময়)
—-আচ্ছা তুমি আমাকে বিয়ে করার জন্য কতদিন সময় চাও বলো আমি তোমাকে সময় দিবো?(তানিশা)
—-আমি কোন সময় চাই না,আমার সময় কখনো হবেও না। তুমি তোমার বাবার পছন্দ করা ছেলে কে বিয়ে করে সুখি হও। (তন্ময়)
—-হিহি কত সহজে বলে দিলে যে অন্য ছেলেকে বিয়ে করে সুখি হও।একজনকে ভালোবেসে আরেকজনকে বিয়ে করে কিভাবে সুখি হবো বলো?(তানিশা)
—-এগুলা তোমার ভালোবাসা না সব আবেগ।(তন্ময়)
—-আমাদের চারবছরের ভালোবাসাকে আবেগ বলছো তাই না?আচ্ছা থাকা তোমার বিয়ে করতে হবে না। (তানিশা) বলেই অফলাইন হয়ে গেলো তানিশা।ওপাশে তন্ময় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বিকেলের দিকে তানিশা আবার তন্ময়কে মেসেজ দিলো
—-তন্ময় তুমি আরেকবার ভেবে বলো আমার কাছ থেকে কতদিন সময় চাও তুমি?(তানিশা)
—-তোমাকে বললাম তো আমার সময় হবে না কখনো(তন্ময়)
—-কেন সময় হবে না বলছো না কেন?(তানিশা)
—-বলতে পারবো না,আমাকে আর মেসেজ দিয়ে বিরক্ত করবে না।(তন্ময়) এ কথা বলে তন্ময় আইডি ডিএক্টিব করে ফেলল।তানিশা ওর বিছানায় শুয়ে থেকে কাঁদছে।কিছুক্ষণ পর তানিশার বাবা ঘরে ঢুকলো
—-কি রে মা একা একা শুয়ে আছিস যে?(তানিশার বাবা)
—-এমনি বাবা(তানিশা)
—-আচ্ছা মা তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?করলে বল তার সাথেই তোর বিয়ে দিবো।(তানিশার বাবা)
—-না বাবা কেউ নেই।(তানিশা)
—-ঠিক আছে তাহলে আমি ছেলের পরিবারের দিন তারিখ ঠিক করলাম।(তানিশার বাবা)
—-মাথা নাড়ালো…(তানিশা) তানিশার বিয়ের দিন চলে।তানিশা তন্ময়কে আরো একবার ফোন করলো
—-আমার সাথে তুমি আজ সন্ধ্যায় একটু দেখা করবে? (তানিশা)
—-আজ তো তোমার বিয়ে তুমি কিভাবে দেখা করবে?(তন্ময়)
—-সেসব নিয়ে তুমি ভেবো না,তুমি শেষবারে মতো আমার সাথে দেখা করো লক্ষী?(তানিশা) চারদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।তন্ময় নদীর তীরে দাড়িয়ে আছে।একটু পরই তানিশা আসলো।তন্ময় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানিশার দিকে।
—-আমরা দুজন যে স্বপ্ন গুলো দেখেছিলাম আজ সব কিছুই মিথ্যা হয়ে গেলো তাই?(তানিশা)
—-থাক এসব কথা,কিজন্য ডেকেছো বলো(তন্ময়)
—-আমাকে শেষবারের মতো তোমার বুকে টেনে নিবে? (তানিশা) তন্ময় তানিশাকে বুকে টেনে নিলো।একটুপর তানিশা একটা চিঠি বের করে দিয়ে বলল
—আমি চলে যাওয়ার পর এই চিঠিটা পড়বে,আর কখনো কষ্ট পাবে না,নিজের খেয়াল রেখো।(তানিশা) তানিশা চলে গেলো,তন্ময় তানিশার চলে যাওয়া দেখছে। দেখতে দেখতে ওর চোখ পানিতে ঝাপসা হয়ে আসলো।
বাসায় এসে তন্ময় চিঠিটা খুলে পড়তে লাগলো,, প্রিয় তন্ময়, তুমি যেদিন প্রথম আমায় তোমার ভালোবাসার কথা বলে ছিলে সেদিন থেকে তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলাম।যতদিন বাচবো দুইজনের একজনও কারও হাত ছাড়বো না। ভালোবাসার সাত রঙ্গে রাঙাতে চেয়েছিলাম তোমাকে কিন্তু সেটা আর হলো না।শুধু কি তাই,ভেবেছি আমাদেরও একটা ছোট সংসার হবে সেখানে দুইজন ছোট ছোট ছেলে মেয়ে থাকবে।আজ তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি দিনের কথা আমার মনে পড়ছে।কত কি বলে আমাকে রাগাতে আবার পরক্ষণে সেই রাগ তুমিই ভাঙ্গাতে। মাঝে মাঝে যখন তোমার সাথে অভিমান করে কথা বলতাম না তখন তুমি আমার সাথে পাগলের মত আচরন করতে।
কিন্তু আজ সেই তুমি হঠাৎ করে বদলে গেলে,জীবনের মাঝ পথে এসে আমার হাতটা ছেড়ে দিলে।কিন্তু কেন হতটা ছেড়ে দিলে সেটা আমার কাছে অজানা থেকে গেলো।যতক্ষনে তুমি চিঠি পড়ে শেষ করছো ততক্ষনে আমি আর এই দুনিয়ায় থাকবো না। তোমাকে ভালোবেসে অন্যজনের সাথে সুখি হবো এটা ভাবলে কি করে?তাই আমি নিজেকে শেষ করে দিলাম।পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।তুমি আমাকে ভেবে কখনো কষ্ট পাবে না কিন্তু,আমি যে তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারি না।ভালো থেকো। ইতি, তোমার তানিশা চিঠিটা পড়ে শেষ করে তন্ময় ডুকরে কেদে উঠলো।কিন্তু ততক্ষণে তানিশা দুনিয়ার মায়া ত্যাগ চলে গেছে না ফেরার দেশে। দুইদিন পর,,,,তন্ময় তানিশার কবরের কাছে গেলো গিয়ে বলল:
—-কিরে তুই আমাকে ছেড়ে খুব শান্তিতে ঘুমিয়ে আছিস তাই না।আমি কেন তোর হাত ছেড়ে দিলাম জানিস,কারন সেদিন আমি প্রথম জানতে পারলাম আমার শরিরে ব্লাড ক্যান্সার বাসা বেধেছে।পৃথিবীতে আমার আয়ুষ্কাল মাত্র কয়েকমাস।একথাটা শুনলে তুই অনেক কষ্ট পেতি। তাই আমি একথা তোর কাছ থেকে আড়ালে রেখে তোর সুখের জন্য অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে বলেছিলাম।কিন্তু তুই আমাকে ছেড়ে চলে গেলি।অপেক্ষা কর আমিও খুব শিঘ্রই তোর কাছে আসছি। একমাস পর তন্ময় ও তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে চলে গেল ওপারে।
(সমাপ্ত)