অবনী কে আমার ভালো লাগে৷ খুব ভালো লাগে৷ রাস্তার মোড়ে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকেই ভালো লাগে৷ আমি প্রতিরাতে সিদ্ধান্ত নিই, আজকেই বলে দিবো ভালো লাগার কথা অবনীকে৷ অবনীকে এবার ইন্টার পরীক্ষা দিবে৷ কলেজের সামনে,কোচিং,প্রাইভেটের সামনে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকি অবনী কে দেখবো বলে৷ মাঝে মাঝে অবনী আমার দিকে তাকায়৷ অামার লজ্জা লাগে তখন৷ শেষমেষ বুঝতে পারলাম, অবনীকে ভালো লাগার কথা আমার দ্বারা বলা সম্ভব নয়৷
ছোটবোনের সাহায্য নিতেই হবে আমার৷ ঘরে ফিরে দেখি ছোটবোন মনযোগ দিয়ে লিখছে৷ হাতের লিখা মাশাল্লাহ৷ আর আমার হাতের লিখার কথা নাই বা বললাম৷ ছোটবোনের চুলগুলো বিলি কেটে আদর করে বললাম,
-ময়না পাখি?
-এই সপ্তাহে টিফিনের টাকা জমাইনি আমি!
-টাকা চেয়েছি আমি?
-টাকা লাগলেই তো ময়না ডাকিস৷ এমনিতে কাক ও না৷ ছোটবোনের কথাশুনে তব্দা খেয়ে গেলাম৷ ইচ্ছে করছিল কেচি দিয়ে সিল্কি চুলগুলো কেটে কটকটি ওয়ালার কাছে বিক্রি করে দিই৷
পরক্ষণেই অবনীর কথা মনে পরলো৷ রাগ কন্ট্রোল করে ছোটবোন কে বললাম,
-পাখি ভাইয়াকে একটা কাজ করে দিবি? -বল৷ -পাশের বিল্ডিংয়ের অবনী মেয়েটাকে ভালো লাগে আমার৷
-তো? -আমি তো বলতে পারি না৷ একটা চিঠি লিখে দিবি?
-প্রেমপত্র?
-হ্যা৷
-দিবো৷ তবে…
-তবে কি?
-ফুচকা খাওয়াবি৷ আর প্রেমপত্র যেটা লিখে দিবো৷ সেটা তুই পড়বিনা৷ সোজা অবনী আপুকে দিয়ে দিবি৷
-পটবে তো?
-না পটে যাবে কই?
-আচ্ছা পাখি৷ তুই লেখ তবে৷ আমি অপেক্ষায় আছি৷ পরেরদিন সকাল হতেই ছোটবোন ঘুম ভাঙিয়ে দিল৷ হাতে চিঠি টা দিয়ে বলল,
-নে চিঠি৷ দিয়ে আয়৷ অবনীর কোচিং সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম ঘন্টাখানেক৷ তারপরেই অবনীর দেখা৷ হাতের চিঠি বাড়িয়ে দিতেই টুপ করে নিয়ে চলে গেল৷ কিছুদূর যেতেই মুচকি হেসে ফিরে তাকালো৷ ছোটবোনের শর্ত অনুযায়ী আমি পড়িনি চিঠি টা৷ চিঠির শেষে নাকি আমার ফোন নাম্বারটাও দেয়া ছিল৷ সেদিন রাতেই অবনীর ফোন৷ ব্যস জমে গেল প্রেম৷ পড়ার ফাঁকে ফাঁকে চলছিল আমাদের প্রেম৷ আহা! সে কি অনূভুতি৷ আজ আমাদের প্রেমের ৩মাসের উপরে হলো৷ ছোটবোনকে এখন ময়না পাখি ছাড়া ডাকি না৷ ছোট বোন মুচকি হাসে৷ আজ অবনীর রেজাল্ট দিয়েছে পরীক্ষার৷ অবনী পাশ করে৷ বিকেলে দেখা করার পালা৷ মিনিট ত্রিশেক অপেক্ষা করতেই অবনীর আগমন৷ মুখটা একটু গম্ভীর দেখাচ্ছে৷
-আমাদের সম্পর্ক শেষ আজ থেকে!
-মানে কি অবনী?
-কোনো মানে নেই৷ এই নাও তোমার চিঠি৷ আর কখনো যোগাযোগের চেষ্টা করবানা! এই বলেই হাঁটা ধরলো মেয়েটা৷ আমি কাঁপাকাঁপা হাতে চিঠিটা খুলে পড়া শুরুকরলাম, প্রিয় অবনী আপু, আপনার ভাঙা কপাল দেখে আমার মায়া হচ্ছে৷ শেষমেষ একটা ছাগল আপনার প্রেমে পরলো৷ যাইহোক, আমার ভাইটা ছাগল হলেও ভাগ্যবান বটে৷ ক্লাস ফাইভে থাকাকালীন এক মেয়ের সাথে প্রেম করেছিল সে৷ মেয়েটা সমাপনীতে এ+পেয়েছি৷ ক্লাস 8এ প্রেম করেছিল আরেক মেয়ের সাথে৷ সেই মেয়ে পেয়েছিল গোল্ডেন৷ আর এসএসসির সময় যার সাথে করেছিল৷ সে তো আরেক ধাপ এগিয়ে৷ আমাদের জেলাতেই প্রথম হয়েছিল মেয়েটা৷ শুনলাম, আপনি নাকি ইন্টার দিবেন৷ কি সৌভাগ্য আপনার! আমার ভাই আপনার প্রেমে পরেছে৷ তারমানে আপনি দেশসেরা হতে চলেছেন৷ তাই অতশত না ভেবে টুপ করে প্রেম শুরু করে দিন আমার ভাইয়ের সাথে৷ ইতি, আপনার প্রেমিকের বোন৷” আমি বিধ্বস্ত মন নিয়ে ঘরে ফিরলাম৷ ছোটবোনের হাতে চিঠিটা দিতেই বলল,
-ব্রেকাপ?
-হু৷
-ভালোই হয়েছে৷ মেয়ে B+ পেয়েছে৷ ক’দিন বাদে বিয়ে দিয়ে দিবে৷
-সর সামনে থেকে৷
-জানি তুই ছ্যাকা খাবি আজকে৷ তাই বিরিয়ানী রেঁধেছি আমি৷ খেতে আয়৷ আমি খাইয়ে দিবো৷ চল৷ ছোটবোন হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল ৷ অতঃপর ছোটবোনের হাতে বিরিয়ানী খেয়ে আমি ছ্যাকার যন্ত্রণা ভুলে যেতে বসেছি৷ ছ্যাকা খাওয়ার গল্প ৷