বিয়ের কৌশল

বিয়ের কৌশল

শরীরটা বেশ কয়েকদিন ধরে খুবই খারাপ করছে। সারাক্ষণ অসুখ লেগে থাকে। আম্মাকে জানানোর পর থেকে শহরের প্রায় সব নামিদামি ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। কিন্তু, কোনো ডাক্তারের দ্বারাই আমার রোগটা নির্ণয় করা সম্ভব হলো না। তবুও আম্মা হাল ছেড়ে দেননি। হোমিও প্যাথিক, কবিরাজ সবার কাছেই নিয়ে যান। কিন্তু, তারা ও সঠিকভাবে রোগটি ধরতে পারলেন না।

এদিকে আমার রোগ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। অনেক আত্মীয়-স্বজন আমাকে দেখতে এসেছে। অনেক বন্ধু-বান্ধব ও এল। একটি মুখ অনেক করেই খোঁজার চেষ্টা করতেছিলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না। সে আর কেউ নয়! বন্ধু অভ্র। তাকে না দেখে মনটা এক মুহূর্তেই খারাপ হয়ে গেল।

কাছের সকল আত্মীয় এবং বন্ধুরা নিজ নিজ বাসায় চলে গেল। দূর থেকে আগত কিছু স্বজন বাসায় থেকে গেল। বাড়িতে চিল্লাচিল্লি অনেকাংশে কমে গেল।

নিজের রুমে একা শুয়ে আছি। আম্মা এসে কিছু ফলমূল দিয়ে গেলেন। এমন সময় কেউ একজন আমার খাবারে ভাগ বসিয়ে দিল। চোখ তুলে দেখলাম অভ্র! একটি সম্পুর্ণ আপেল মুখের ভিতর চালান করে দিয়েছে। গাল নাড়াতে পারছে না। অনেক কষ্টে আপেলটা শেষ করে আমাকে বললঃ ‘কি রে রোগী সাহেব! এইভাবে কতদিন থাকবি?’

আমি কোনো কথা বললাম। চুপ করে রইলাম। আমার নীরবতায় অভ্র একফোঁটা পরিমাণ ও বিচলিত হল না। আবার জিজ্ঞেস করলঃ ‘আন্টি কোথায় রে? আমি এবার মুখ খুললাম – ‘কেন?’

~ ‘এমনি। বল আন্টি কোথায়?’

– ‘বাইরে দেখ। ওইখানে থাকবে।’

আর কিছু না বলেই অভ্র বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আম্মা আর অভ্র দুইজন মিলেই আমার রুমে প্রবেশ করল। আম্মা বললঃ

– ‘অভ্র, কি হয়েছে বলবি?’

~ ‘আন্টি, আসলে একটা সুখবর নিয়ে এসেছি।’

– ‘কিসের সুখবর রে?’

~ ‘আন্টি একজনকে পেয়েছি যে কিনা সাইফের রোগ সারাতে পারবে।’

– ‘কে সে? বাবা, তাড়াতাড়ি বল।’

~ ‘সে এক বাবা। নাম হল লুঙ্গি বাবা।’

– ‘এ কেমন অদ্ভুদ নাম রে?’

~ ‘জানিনা। আন্টি, কালকে সাইফকে নিয়ে ওখানেই যাব।’

– ‘আচ্ছা।’

লুঙ্গি বাবার দরবারে আমি, আম্মা, অভ্র বসে আছি। লুঙ্গি বাবা নাকি তখনো ধ্যানে মগ্ন। ধ্যান শেষ করে সে বলে উঠলঃ ‘রোগী কে?’ অভ্র আমার দিকে দেখিয়ে দিয়ে বললঃ ‘ইনি।’ সে এক হুংকার দিয়ে বললঃ ‘লুঙ্গি বাবার দরবারে লুঙ্গি ছাড়া প্যান্ট পরে ঢুকার সাহস দিল কে? যা, এক্ষুণি লুঙ্গি পরিয়ে নিয়ে আয়।’

আম্মা তখনো চুপ করে বসে আছে। লুঙ্গি বাবার এক মুরিদ আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে লুঙ্গি পরিয়ে নিয়ে আসে। সব অসুখ খুলে বলার পর লুঙ্গি বাবা আম্মাকে বললঃ ‘হে মা জননী! তোর ছেলের এই রোগ কেউ ধরতে পারবে না। আর, এই রোগের একটাই চিকিৎসা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছেলেকে বিয়ে দে।’ লুঙ্গি বাবার সম্মানিটা দিয়ে তার দরবার থেকে বেরিয়ে আসলাম।

আম্মা আমার বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছেন। আমার কাছে পছন্দের কেউ আছে কিনা জিজ্ঞেস করাই জানিয়ে দিলাম নিশির কথা। আম্মা, আব্বা, অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মিলে নিশিদের বাড়িতে কথা বলে বিয়ের তারিখ ঠিক করলেন। অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে আমার আর নিশির বিয়ের অনুষ্টান শেষ হল। অদ্ভূদভাবেই বিয়ে শেষ হওয়ার সাথে সাথেই রোগটা সেরে গেল।

বাসর ঘরে ঢুকতে যাব এমন সময় পথ আগলে দাঁড়াল রাহাদ আর অভ্র। একজনের দিকে আরেকজনে চোখ পড়তেই হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলাম। অভ্র রাহাদের দিকে তাকিয়ে বললঃ ‘কি রে লুঙ্গি বাবা! অভিনয় তো ভালোই করলি।’

রাহাদ স্বহাস্যে বললঃ ‘হ রে বেটা। আন্টির সামনে ওইসব কথা বলতে লজ্জা লাগতেছিল। হাঁসি ও পাচ্ছিল খুব। আর সাইফফা! এতদিন অসুখের অভিনয় কেমনে করলি?’ আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। অভ্র বলে উঠলঃ ‘যাহোক! এরপর আমার পালা। তোরা দুজন তো অভিনয় করে হলে ও বিয়েটা করলি। এইবার আমার পালা।’

এর মাঝে হুট করে ঝাড়ু হাতে আম্মার প্রবেশ। বুঝতে পারলাম আম্মা সব শুনেছে। অবস্থা খারাপ দেখে অভ্র আর রাহাদ দিল উল্টো দিকে দিল এক দৌঁড়। আমি সোজা রুমের দিকে দৌঁড়ালাম। রুমে ঢুকেই ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। নিশিকে দেখলাম খাটের উপর ঘোমটা দিয়ে বউ সেজে বসে আছে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত