বিলাসিতা

বিলাসিতা

ব্রেকআপের তিন বছর পর প্রাক্তনের সাথে এভাবে দেখা হবে ভাবিনি।শপিংমল থেকে বেরিয়ে বাইরে চুড়ির মেলাতে চুড়ি দেখছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল বেশ হাসি-খুশি একজোড়া কাপল। দেখে স্বামী-স্ত্রী ই মনে হচ্ছে। ছেলেটি মেয়েটাকে চুড়ি বেছে নিয়ে পরিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটার চোখে-মুখে খানিকটা লজ্জার আভাস। একদৃষ্টিতে তাদের দেখতেই লাগলাম। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম, ছেলেটি আর কেউ নয় আমার প্রাক্তন তনয়। অবাকের ঘোর কাটিয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সে মেয়েটির সাথে এতই ব্যস্ত যে তার সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি খেয়াল ই করলনা। আমি তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, কেমন আছো তনয়? সে আমার দিকে বিস্মিত চোখে চেয়ে রইল। চিনতে বেশ দেরী করলনা। বিস্তর হাসি টেনে বলল, জান্নাত যে! আলহামদুলিল্লাহ ভাল। তুমি কেমন আছো?

আমি উত্তর না দিয়ে কিউট মেয়েটিকে লক্ষ্য করে বললাম,”তোমার স্ত্রী?”ও ঘাড় না ফিরিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমার স্ত্রী মিথিলা। ১বছর হল বিয়ে করেছি।তোমার স্বামী কেমন আছে? কোথায় তিনি?”আমি মুচকি হেসে বললাম, হ্যাঁ, ভালো। এমন সময় আমার ফোনের টিউন টা বেজে উঠল। আমি একসাইডে সরে এসে কল রিসিভ করতে অপর পাশ থেকে আমার স্বামীর কন্ঠ শুনতে পেলাম, ” জান্নাত, তোমাকে না বারণ করেছি কাজের সময় কল দিবানা। কল দিয়েছো কেন?” আমি শান্ত গলায় বললাম, “আমি একটা চুড়ির মেলায় এসেছি। তুমি একটু আসবে? আমায় চুড়ি পছন্দ করে পরিয়ে দিবে। আজ বাহিরে ডিনার করব, রিকশায় ঘুরব।” ওপাশ থেকে বিরক্তমাখা কন্ঠে লাবিব বলে উঠল,

— তোমার ন্যাকামি গুলো কবে যাবে? আমার কাজের সময় তোমার এসব বলতেই হয়? তোমার এ্যাকাউন্টে তো আমি বড় একটা এ্যামাউন্ট দিয়েই দিয়েছি। যা খুশি শপিং করো না, আমাকে জ্বালিয়োনা।

প্রতিবারের মত এমন কিছু শুনব জেনেও আবদার করলাম। একটু চুপ থেকে বললাম, “আজ তো শুক্রবার। ছুটির দিনটাতেও আমাকে একটু সময় দেওয়া যায়না? আমি তো তোমার কাছে টাকা চাইনি, একটু সময় চেয়েছি।”
রাগান্বিতকন্ঠে উত্তর এল, “তোমার স্টুপিডমার্কা কথা শুনতে আমি আগ্রহী নই। আর এত টাকা যে উড়াচ্ছো, কাজ না করলে কোথায় পেতে? আমাকে আর কল দিয়ে ডিস্টার্ব করবেনা।”

কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লাবিব ফোনটা কেটে দিল।আজ রাতে সে আর বাসায় ফিরবেনা জানি। এমনিতে তো প্রায়সময় ফিরেই না, আজ রাগের অযুহাতে ফিরবেই না। চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে তনয়ের দিকে তাকালাম। কি লেইম এক্সকিউজে না সেদিন ওর সাথে ২বছরের রিলেশান শেষ করে দিলাম। তার শেষ কথাটা এখনো মনে পড়ছে। ভীষণ হ্যাপি কাপল ছিলাম আমরা। ৩বছর আগে সে আমার হাতটা ভীষণ শক্তভাবে চেপে কেদে কেদে বলেছিল,

— জান্নাত, তুমি কেন ব্রেকআপ করতে চাচ্ছো?
— তনয় বাসা থেকে আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।
— জান্নাত আমি তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই?
— কি যোগ্যতা নিয়ে যাবে তুমি? প্রাইভেট ফার্মে স্বল্প বেতনের জব করো। তা দিয়ে আমাদের সংসার কিভাবে চলবে?

বাসা থেকে যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে একটা কোম্পানীর সিইও। তনয় ছলছল চোখে তাকিয়ে বলেছিল,

— জান্নাত আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।
— অভাব যখন ধরা দিবে তখন এই ভালোবাসা কোথায় পালিয়ে যাবে সেটা আমরা নিজেরাও জানবনা। যাই হোক, আজই আমাদের রিলেশান শেষ। আসি। তনয় আর কিছুই বলেনি। নিচুকন্ঠে একবার বলেছিল,
— ভালো থেকো। সুখী হও।

আজ আমি সবই পেয়েছি, শুধু ভালোবাসা আর সময় ছাড়া। এখন বুঝতে পারছি বিলাসিতার লোভে কত মূল্যবান জিনিস আমি হারিয়েছি। এমনসময় মিথিলা এসে সালাম দিয়ে বলল, ধন্যবাদ বুবু। আপনি ওকে না ছেড়ে গেলে ওর মত খাটি রত্ন আমি পেতামনা। দোয়া করবেন আমাদের জন্য। তনয় এসে বলল,

— মিথিলার সাথে পরিচিত হয়েছো? এসো, কোথাও বসি। রেস্টুরেন্ট অর কফি শপ?

আমি মুচকি হেসে বললাম, না, আমার তাড়া আছে। অন্য একদিন হবে। আসি। দোয়া করি সুখে থেকো। তনয় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ভালো থেকো তুমিও। সুখী হও। আমি কথা না বাড়িয়ে হাটতে লাগলাম। একটুপর সামনে চলতে থাকা রিকশায় দেখলাম মিথিলা পরমশান্তিতে তনয়ের কাধে মাথা এলিয়ে দিয়েছে, ওর হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে তনয়। এই সুখটা হয়ত আমার প্রাপ্য ছিল। কিন্তু নিজের ভুলের জন্য সব হারালাম। এখন ওদের প্রতি হিংসে হচ্ছেনা, নিজের প্রতি ভীষণ করুণা হচ্ছে। টলমল চোখে তাদের রিকশা চোখের আড়াল হওয়া অবধি অপলক তাকিয়ে রইলাম।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত