রোজার দিনের গল্প

রোজার দিনের গল্প

তুমি ডাকবে না আমাকে?

মানহার কথায় আমি ওর দিকে শান্ত চোখেই তাকালাম।মেয়েটার মুখে এখনও অপরাধীর ছাপ।মনে হচ্ছে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে।তবে ও যে ঘুমের ঘোরে আছে সেটা বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছি।

আমি টেবিলে খাবার দিয়ে মানহাকে চেয়ার টেনে বসিয়ে দিয়ে বললাম,

-সবসময় তোমাকেই ডাকতে হবে কেন,আমি কিছু করতে পারিনা?
আমার কথায় মানহা একটু চুপ থেকে বললো,
-হ্যা করতে পারো কিন্তু এসব তো কখনও করোনি।
-করিনি তাতে কি,আজ করছি।
কথাটি বলে আমি চেয়ার টেনে বলতে বসতে বললাম,
-তুমি না উঠলেও পারতে। উঠেই যেহেতু পড়েছো তাহলে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
আমার কথায় মানহা শুধু মাথা নাড়ালো।তবে কিছু বললো না।

মানহার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে এই মাস ছয়েক হবে।বলতে গেলে আমাদের এটা প্রথম রোজা।একসাথে প্রথম রোজা।তবে ওর আনন্দে ভরা মুখটা কেমন যেন হুট করেই মলিন হয়ে গেলো।

গতরাতে যখন মানহা আমাকে সেহরী খাওয়ার জন্যে উঠে বসালো তখন আমি ঘুমের মধ্যে ডুবে আছি।কিছুক্ষন আগেই ঘুমানোর ফলে এসময় উঠতে আমার বেশ কষ্টই হচ্ছিলো।কিন্তু মেয়েটা খুব সহজেই আমাকে জাগিয়ে দিয়ে খাবার টেবিলে এনে বসালো।

আমি আড়মোড়া ভেঙে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসতেই মানহা প্লেটে ভাত বেড়ে দিল।আমি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম।আজানের খুব একটা বেশি দেড়ি নেই।এদিকে আমি খাওয়া শুরু করলেও মানহাকে দেখলাম মলিন মুখে বসে থাকতে।আমি পানি খেতে খেতে মানহাকে বললাম,

-তুমি খাবে না?

আমার কথায় মানহার মুখটা আরও একটু মলিন হয়ে গেলো।মেয়েটা হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।মানহার চুপ থাকা দেখে আমি আবারও বললাম,

-কিছু হয়েছে?কোন সমস্যা?

মেয়েটা এবার কিছুক্ষন চুপ থেকে আস্তে করে বললো,

-পিরিয়ড শুরু হয়েছে।

মানহার কথায় আমি ওর দিকে এবার একটু ভাল করে তাকালাম।এই কথাটা বলতেই একদম কুকড়ে গেছে।আমি উঠে মানহার পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বললাম,

-এটা বলতে এত ভয়,এত লজ্জা।

আমার কথায় মেয়েটা এবারও কিছু বললো না।আমি মানহাকে আমার দিকে ঘুরিয়ে ওর মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বললাম,

-এটা তো স্বাভাবিক,হতেই পারে।তাছাড়া আমাকে বলতে এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে,বোকা মেয়ে।এখন রোজা থাকতে পারছো না এটা না হয় পরে রেখে দিও, সমস্যা কি।

আমার কথায় মানহা এবারও কিছু বললো না।আমার হাতটা বেশ শক্ত করেই ধরলো।আমি মানহাকে খায়িয়ে দিয়ে সবকিছু গুছাতেই মেয়েটা আমাকে বাধা দিল।

আমি মানহার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-আমি পারবো এসব করতে,তুমি চুপচাপ বসে থাকো।

আমার কথায় মানহা আর কিছু বললো না।চুপচাপ বসে পড়লো।আসলে প্রতিমাসে মেয়েদের একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত এটা হয়েই থাকে।স্বাভাবিক।এটা বলতে এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে আমি বুঝিনা।

মানহা যখন খাবার টেবিলে এসে বসলো ততক্ষনে আমার রান্না প্রায় শেষ।প্রতিদিন সেহরীতে মানহা আমাকে ডাকলেও আজ আমি ওকে ডাকিনি।আমি যখন উঠলাম তখন মেয়েটা ঘুমাচ্ছে।এমনিতেই শরীর ভাল না তার উপর রান্না করতে গেলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।তাই আর ডাকিনি।আমি যেটুকু পারি সেটুকুই রান্না করেছি।
আমি মানহার প্লেটে খাবার বেড়ে দিতেই মেয়েটা বললো,

-আজ খাইয়ে দেবে না?

মানহার কথায় আমি কিছু বললাম না।মুচকি হাসলাম।তারমানে মেয়েটা চাচ্ছে আমি ওকে খায়িয়ে দেই।আমি উঠে মানহার পাশে বসতেই মেয়েটা আমাকে বললো,

-প্যাড তো শেষ।
মানহার কথায় আমি ওর মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বললাম,
-সকালে অফিসে যাওয়ার আগে আমি ফার্মেসি থেকে এনে রেখে দেবো।
আমার কথায় মানহা কিছু বললো না।ঠিক আগের মতই আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো।

নামাজ শেষে ফিরতেই দেখি মেয়েটা এখনও জেগে আছে।আমাকে দেখেই হাসিমাখা মুখে বললো,

-তোমাকে ছাড়া ঘুম আসছিল না।

মানহার কথায় আমি মুচকি হেসে ওর পাশে শুয়ে পড়তেই মেয়েটা আমার বুকে মাথা রাখলো।আমি মানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম,

-ঠিক হয়ে যাবে,সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমার কথায় মানহা আমাকে আরও একটু শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলো।ওর ছোট ছোট চাওয়া গুলো যদি আমি পূরন করতে পারি আর সেটাতে যদি ওর মুখে হাসি ফুটে ওঠে তাহলে এরকম ইচ্ছে আমি হাজারটা পূরণ করতে রাজি।তবুও এই কষ্টের মাঝেও হাসি ফুটুক ওর মুখে।হাসি ফুটুক আরও হাজারটা মানহার মুখে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত