বাবার দায়

বাবার দায়

বাসা থেকে আমার স্ত্রী রাহেলা ফোন দিয়ে বলল নিরু কলেজ থেকে ফিরে চুপচাপ বসে আছে।মেয়েটা বাসায় ফিরেছে শুনে একটু স্বস্তি পেলাম।তবে একটু চিন্তাও হলো চুপচাপ কথাটা শুনে।

অফিস থেকে আজ একঘণ্টা আগে বাহির হলাম।প্রতিদিনই ফেরার পথে মেয়েটার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে যাই।মেয়েটা আমার বড় হয়েও হলো না আচরণগুলো বাচ্চার মতোই রয়ে গেল।

রাস্তার পাশে একজন মহিলা হরেক রকমের চুড়ি সাজিয়ে বসে আছে।কি সুন্দর ভাবে চুড়িগুলোর বিবরণ দিয়ে যাচ্ছে।কোনটির কি নাম কোথায় তৈরি হয়? ভাবলাম মেয়েটার জন্য আজ কিছু চুড়ি নিয়ে যাই।নীল রংয়ের একমুঠ চুড়ি কিনে নিলাম।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিরুর রুমে আসলাম।যতটুকু আন্দাজ করতে পারলাম মেয়েটা হয়ত আমার উপর বিরক্ত।নিরু শুয়ে শুয়ে বই পড়ছে জিজ্ঞেস করলাম কিরে মা মন খারাপ?নিরু শোয়া থেকে উঠে বইটা পাশে রাখল।

“বাবা তুমি এতবার ফোন দাও কেন বলতো?তুমি তো জানই আমি কলেজে আছি।বান্ধুবীরা তোমার এই বার বার ফোন দেওয়া নিয়ে কেমন হাসাহাসি করে।আমার এসব ভালো লাগে না।আমি তো এখন আর বাচ্চা নই।কলেজে থাকাকালীন তুমি আর ফোন দিয়ো না তো বাবা।” এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে শেষ করল নিরু।

কোনো উত্তর না দিয়ে মেয়েটা মাথায় হাত বুলিয়ে চলে এসেছি। সকালবেলা পুরো পত্রিকাটা পড়তে পারিনি। বারান্দায় বসে পত্রিকা পড়ছিলাম। চেয়ার টেনে নিরু আমার পাশে বসল।

“বাবা আমি আসলে..” মেয়েটা কিছু একটা বলতে চেয়েছিল।হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে আমি থামিয়ে দিলাম।আমি জানি তুই কি বলবি। নাহ আমি তোর কথায় কিছু মনে করি নাই।

নিরু চুপচাপ বসে পায়ের অাঙ্গুলগুলো মেঝেতে ঘষছে।হয়ত নিরুর মাঝে অনুশোচনা বোধ কাজ করছে। পত্রিকাটা এক পাশে রেখে দিলাম।

তোর দাদা যখন মারা যায় আমি তখন খুব ছোট।সবকিছু স্পষ্ট মনে নাই শুধু এটুকু মনে আছে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে বাড়ির উঠানে শোয়ানো হয়েছিল বাবাকে।বাবার আদর স্নেহ কি তা আমি জানি না।মার হাতেই আমি বড় হয়েছি।মা যথাসম্ভব চেষ্টা করেছেন বাবার অভাব পূরণ করতে।কিন্তু আর যাই হোক বাবার অভাব এই পৃথিবীতে কোনো কিছুতেই পূরণ হয় না। নিরু পায়ের আঙ্গুলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ মাথাটা উপরে তুলে বলল “বাবা।”

এবার আসি তোর ফোনের ব্যাপারে।বাবার আদর স্নেহ আমি পাই নি।বাবার এই জিনিসগুলো আমার কাছে আপেক্ষিক ভাবেই রয়ে গেছে।হয়ত বাবা হিসেবে দায়িত্ব কর্তব্য গুলো কিভাবে পালন করতে হয় তা আমি ঠিক মতো জানি না।

নিরু উত্তর দিলো “না বাবা।তুমি..” আমি আবারও নিরুর কথা থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলাম বাবা হিসেবে দায়িত্বটা কি তা এখন বুঝি।তুই আমার একমাত্র মেয়ে আমার মা।কেউ যদি জিঙ্গেস করে আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কি আমার উত্তরটা কী হবে জানিস “আমার মেয়ে”।বাবা হিসেবে তোকে নিয়ে খুব চিন্তায় থাকিরে মা।হুম আমি এইটাও জানি তুই এখন আর বাচ্চা না। বড় হয়েছিস ভালো মন্দ সবই তোর জানা।বর্তমান পরিস্থিতি তো দেখছিস মা।এদিকে অজ্ঞাতনামা লাশ তো ঐ দিকে অপহরণ।

চারদিক মানুষরূপী জানোয়ারে ভরে গেছে।এই জানোয়ারদের কারণে সকল বাবাই এখন চিন্তিত।আমি জানি মা তুই যথেষ্ট সচেতন ও শালীনতা বজায় রেখেই চলিস। তবুও আমার খুব চিন্তা হয়।শুধু সংসার চালানোই না তোকে নিরাপদে রাখাও যে আমার দায়িত্ব।এই হিংস্র জানোয়াররা কি কখনো একজন বাবার দুঃখ বুঝে। অফিসে কাজ করি কিন্তু মনটা সারাক্ষণ তোর কাছেই পড়ে থাকে।তুই কি করছিস,কলেজে পৌছলি কিনা,বাসায় ঠিকমতো ফিরছিস কিনা।বাবা হিসেবে কি চিন্তায় থাকতে হয় তা হয়ত তুই বুঝবি না।

তবে যাক মা এখন থেকে আর ফোন দিব না তবে তুই কোথায় আছিস কি করছিস এইটুকু অন্তত জানিয়ে দিস। আর আমি হয়তো বাবা হিসেবে আমার দায়িত্ব কর্তব্য গুলো অতটা পালন করতে পারছি না ক্ষমা করিস মা।

কথাগুলো শেষ করা মাত্রই নিরু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল:”আমাকে মাফ করো বাবা। তুৃমি আমাকে যতবার খুশি ফোন দিও আমি কোনো রকম বিরক্ত হব না।কে বলছে তুমি দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে পারছ না। তুমি আমার বাবা। পৃথিবীর সেরা বাবা।”

নিরুর চোখের পানিতে আমার ফতুয়ার হাতাটা ভিজে গেছে।মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম বোকা মেয়ে তুই কান্না করছিস কেন।মেয়েটা আবারও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগল।

নিরু মা এবার কান্না থামিয়ে ঐ টেবিলের উপর প্যাকেটটা দেখত যা।নিরু চোখের পানি মুছতে মুছতে টেবিলের দিকে গেল।প্যাকেটটা খুলে দরজায় দাঁড়িয়ে বাবা বলে অশ্রুসিক্ত নয়নে আমার সকল দুঃখ কষ্ট দূর করা সেই কি ভূবন ভুলানো মিষ্টি হাসি।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত