বোবা ছেলে

বোবা ছেলে

পাঁচ তলা বিল্ডিং এর সর্বশেষ তলার দক্ষিণ দিকের একটা রুমে আমার বসবাস। ব্যাচেলার হওয়ার কারণে ছোট খাটো এই রুমে একাই থাকি।রুমের দক্ষিণ দিকের জানালা খুললে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা হাওয়া সরাসরি আমার রুমে প্রবেশ করে।সেই সুবাদে এখানে খুব আরামে বাস করা যায়।অবশ্য আমার সাথে রুম মেট থাকার কথা।কিন্তু না,আমি প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে একাই থাকি।কেউ আর আমার সাথে কথা বলতে পারবে না,আড্ডা দিতে পারবে না,গল্প করতে পারবে না।তাই কেউ আমার রুম মেট হতে আগ্রহী না।

ওপরের তলা সিড়ি দিয়ে যখন নিচে নামার জন্য প্রস্তুত তখন বাধল এক বিপত্তি।বাড়ি ওলার মেয়ে আমার সামনে হাজির। এই মেয়েটি সবসময় আমার পিছু থাকে।যে কোনো ভাবে, যে কোনো সময়।মেয়েটি দেখতে অবশ্য সুন্দর,নামটাও বেশ ভালো।খাদিজা। মেয়েটিকে আমার ভালো লাগলেও মেয়েটির বাবার জন্য ভয় হয়। মেয়েটি অনেক বার বুঝাতে চেয়েছে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি তো বোবা ছেলে,কথা বলতে পারি না।অন্য দশ জনের মতো কথা বলার শক্তি আমার নেই।

মেয়েটি কে যখন পাশ কাটিয়ে চলে আসব,তখন বলল, “আপনার জন্য আজকে ইফতারি নিয়ে এসেছি” আমি কিছু বললাম না।প্রায় সময়ই আমার জন্য এটা সেটা করে নিয়ে আসে।কিছু না বলে চলে আসলাম।মেয়েটি আমাকে অনেক ভালোবাসে।কিন্তু আমি কি কম ভালোবাসি নাকি।আমার যে বড় একটা বাধা, যেটা সমাজ মানবে না।মানবে না কোনো মেয়ের পিতা কিংবা তার পরিবার।

না আমাকে নিশ্চুপ থেকে যেতে হবে। আমার ভিতরের ভালোবাসাটা মেয়েটির প্রতি দেখানো যাবে না।তা না হলে আমার প্রতি মেয়েটির বাবার বিশ্বাস আর আস্থা ওঠে যাবে।আমাকে কত আদর করে মেয়েটির বাবা।কথা বলতে পারি না বলে,বোবা ছেলে বলে খুব আদর আর যত্ন করে।নিষ্ঠুর এই শহরে কেউ কারো না।কেউ কারো জন্য না।অথচ মেয়েটির বাবা যেন আমার সব।তার মনে কষ্ট দিয়ে কোনো কিছুই আমি করতে চাই না।

রুমে এসে দেখি ইফতারি রাখা। ইফতারি খেয়ে যে মাত্র শেষ করলাম,সেই মাত্রই মেসেজ আসল, “নামাজ পড়ে নেন” বুঝতে আর বাকি রইল না কে মেসেজ দিয়েছে।মেয়েটি যে কিভাবে আমার নাম্বার পেল।যাক ভালোই হলো।এই মেয়েটি কে যদি সারা জীবনের জন্য আপন করে পেতাম,খুব ভালো হতো।

তারাবী নামাজ পড়ে যখন ওপরে আসার জন্য সিড়িতে পা রাখলাম।তখন মেয়েটির বাবা।আমাকে বললেন, “বাবা,আজকে সেহরির সময় আমাদের রুমে এসো,এক সাথে খাব” আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক উত্তর দিয়ে চলে আসলাম।লোকটি অনেক ভালো সবসময় আমাকে ডাক দিবে।খাওয়ার জন্য বলবে,কোনো কিছু লাগলে জিজ্ঞাসা করবে। mসেহরির খাবার খেয়ে বসে আছি। খাদিজার বাবার মুখোমুখি।তিনি বললেন, “দেখো বাবা,আমার মা মরা মেয়েটি আজকে অনেক বড় হয়ে গেছে।বিয়ে দেওয়ার জন্য বলছিলাম।মেয়েটি আমার বলল,তোমাকে নাকি পছন্দ করে।বিয়ে করলে তোমাকেই করবে” আমি অবাক।সরাসরি নিজের বাবার কাছে বলে দিল আমার কথা।আমি যে কথা বলতে পারি না।বোবা একটি ছেলে।

আবার তিনি অর্থাৎ খাদিজার বাবা বললেন, “এখন তুমি যদি কোনো আপত্তি না করো তাহলে তোমার বাবা-মা কে গ্রাম থেকে আসার জন্য বলতে পার” আমি কিছু না বলে শুধু এক টুকরো কাগজে লিখে দেখালাম, “কালকেই বাবা-মা আসবে” মনের মাঝে মহা খুশি।রুমে আসতেই মেসেজ আসল, “একটু ছাদে আসবেন” বুঝতে আর বাকি রইল না কে ছাদে যাওয়ার জন্য বলেছে।ছাদে গিয়ে দেখি খাদিজা এক পলকে ঐ দূর আকাশের চাঁদের দিকে বিরামহীন তাকিয়ে আছে।আমি পাশে গিয়ে দাঁড়াতে খাদিজা আমার পানে তাকালো। দুজনে দুজনের দিকে চাহনি। খাদিজাই বলল, “কি পেলাম তো আমার ওনাকে” আমি তখন কিছু না বলে মৃদু হাসলাম।দুজনেই উচ্চ হাসিতে মেতে ওঠলাম।এই হাসি এক জন আরেক জনকে পাওয়ার হাসি।এই হাসি দুজনে সারা জীবন এক সাথে থাকার হাসি।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত